থাইরয়েডের সমস্যা যেভাবে বুঝবেন
সমগ্র বিশ্বে অন্তত ১২ শতাংশ মানুষ থাইরয়েডজনিত সমস্যায় ভোগেন। থাইরয়েডের সমস্যা অত্যন্ত সাধারণ এবং অতি পরিচিত। অধিকাংশ সময়ে লক্ষ্য করা যায় নারীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয় তবে থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা যে কারোর হতে পারে।
থাইরয়েড আমাদের স্বরযন্ত্রের দুই পাশে থাকা একটি বিশেষ গ্রন্থি। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ হল আমাদের শরীরের কিছু অত্যাবশ্যকীয় হরমোন (থাইরয়েড হরমোন) উৎপাদন করা। শরীরের জন্য এই থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলেই শরীরে তার নানা রকম বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিসম এবং বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিসম।
থাইরয়েডের সমস্যার লক্ষণ সমূহ :
বিনা শ্রমে হার্ট প্যালপিটেশন : অত্যধিক থাইরয়েড হরমোন আপনার শরীরের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে। লোকেরা বলে যে তারা অত্যধিক ক্যাফেইন অনুভব করেছেন অথবা তারা বিশ্রামে থাকলেও হার্ট প্যালপিটেশন বা বুক ধড়ফড় অনুভব করেন।
থাইরয়েডের সব থেকে সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে ক্লান্তি। থাইরয়েড হরমোন মূলত শরীরে শক্তি জোগান দেয়। যদি সবসময়ই অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে তা থাইরয়েড হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
দিনে ঘুম আসা : আন্ডারঅ্যাকটিভ থাইরয়েডের একটি উপসর্গ হতে পারে দিনে ঘুম আসা অথবা পরিশ্রান্তি অনুভব করা। শক্তি উৎপাদনের জন্য শরীরের থাইরয়েড হরমোনের প্রয়োজন হয়।
ওজন বেড়ে যাওয়া : অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়াও থাইরয়েডের লক্ষণ হতে পারে। শরীরের বিপাকের মাত্রা যদি কমে যায় বা বেড়ে যায়, তাহলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা : বেশি শীত না পড়লেও যদি খুব সহজেই ঠান্ডা লাগে, তার মানে আপনার শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালরি ঝরাচ্ছে না। বরং আপনার শরীর ক্যালরি সঞ্চয় করে রাখছে। যা থাইরয়েড হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
পেশি এবং অস্থিসন্ধির দুর্বলতা : বিপাকের সমস্যার কারণে পেশির এবং অস্থিসন্ধির শক্তির ক্ষয় হতে পারে। যার ফলে পেশি বা অস্থিসন্ধি দুর্বল হয়ে যেতেই পারে।
অবসন্নতা : বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, বেশির ভাগ মানুষ যারা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের মধ্যে অবসাদ দেখা দিতে পারে।
অমনোযোগী এবং ভুলে যাওয়া : থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন এমন অনেকেই মানসিক ক্লান্তির কথা বলেন। মনোযোগ দিতে না পারা, বা সহজেই কোনো কথা ভুলে যাওয়া, এগুলি থাইরয়েডের ক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিচিত লক্ষণ।
ত্বকের উপর প্রভাব : হাইপোথাইরয়েডিসমের কারণে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিসমের কারণে ঘাম কম হয় এবং ত্বক তার প্রয়োজনীয় আদ্রর্তা পায় না। ফলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। হাইপোথাইরয়েডিসমের রোগীদের মধ্যে নখ ভাঙ্গার বা নখে ফাটল ধরার প্রবণতাও বেশি।
চুল পড়া : থাইরয়েডের সমস্যা হলে চুল ঝরা বেড়ে যেতে পারে। চুলের গোঁড়া দুর্বল হয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই থাইরয়েডজনিত সমস্যা দায়ী।
অপ্রত্যাশিত সময়ে ঘেমে যাওয়া : হাইপারঅ্যাকটিভ থাইরয়েডের একটি কমন উপসর্গ হচ্ছে, পরিশ্রম না করেও অত্যধিক ঘেমে যাওয়া। থাইরয়েড শরীরের শক্তি উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাভাবিক হরমোন মাত্রার চেয়ে উচ্চ হরমোন মাত্রার মানে হল আপনার মেটাবলিজম অত্যধিক সক্রিয় হচ্ছে, যে কারণে লোকেরা মাত্রাতিরিক্ত গরম অনুভব করে।
পিরিয়ড-জনিত সমস্যা : শরীরের অন্যান্য হরমোনের সঙ্গে থাইরয়েড হরমোনের সম্পর্ক থাকায়, সেই হরমোনের বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া অন্যান্য হরমোনের কার্যকারিতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। পিরিয়ড-জনিত হরমোনের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়তে পারে। যার ফলে পিরিয়ডের সময় নানা সমস্যা হতে পারে।