Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বীরাঙ্গনা সখিনা: বীরত্ব আর প্রেমের অমর আখ্যান

বীরাঙ্গনা সখিনার নাম আমরা অনেকেই হয়তো শুনেছি। বীরাঙ্গনা সখিনার মর্মস্পর্শী প্রেমের ঘটনা ও বীরত্বের কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে। চলুন তার গল্পের মতো কাহিনী আমরা জানি।

 

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত মাওহা ইউনিয়নের কেল্লা তাজপুর গ্রামটি সতের শতকের মুঘল শাসনামলের স্মৃতিবিজড়িত। কেল্লা তাজপুরকে ঘিরে একটি ঐতিহাসিক চমকপ্রদ কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। 

 

লোক ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ কেল্লা তাজপুরের মুঘল দেওয়ান উমর খাঁর মেয়ে সখিনা ছিলেন অপরূপ সুন্দরী ও সর্ববিদ্যায় পারদর্শী। তার এই রূপ-গুণের খ্যাতি আশপাশের সর্বত্র অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এমনি ৫০ থেকে ৬০ মাইল দূরবর্তী বারভূঁইয়ার অন্যতম কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ির স্বাধীন শাসক ঈশা খাঁর নাতি ফিরোজ খাঁর কানেও সে খবর পৌঁছে। সেই থেকে অপরূপ সুন্দরী সখিনাকে একপলক দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে ফিরোজ খাঁ।

 

কিন্তু দেওয়ান উমর খাঁ পরিবারের কঠোর পর্দাপ্রথা ফিরোজের ভালোবাসার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে কৌশলের আশ্রয় নেন ফিরোজ খাঁ। দরিয়া নামক এক সুন্দরী নারীকে তসবি বিক্রেতা সাজিয়ে উমর খাঁর অন্তঃপুরে সখিনার বাসগৃহে পাঠানো হয়। দরিয়ার মুখে ফিরোজ খাঁর অসামান্য রূপ-গুণের কথা শুনে সদ্য যৌবন প্রাপ্ত সখিনা নিজের অজান্তেই ভালবেসে ফেলেন ফিরোজ খাঁকে।

 

ফিরোজ খাঁ জঙ্গলবাড়িতে এসে পরিবারের সম্মতি নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান উমর খাঁর দরবারে। কিন্তু কন্যাপক্ষ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। লজ্জা-ক্ষোভে ফিরোজ খাঁ বিশাল বাহিনী নিয়ে কেল্লা তাজপুরে অভিযান চালান। অতর্কিত আক্রমণে উমর খাঁর বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পরাজয় বরণ করে। তখন ফিরোজ সখিনাকে নিজের কাছে নিয়ে যান এবং বিবাহ করেন।

 

তখন ফিরোজ খাঁকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে এক কিশোর নেতৃত্ব দেন ফিরোজের সেনাদের। সেই কিশোর প্রায় হারিয়ে দিচ্ছিলো উমর খাঁর বাহিনীকে।

 

অস্ত্রের যুদ্ধে পেরে উঠতে না পেরে উমর খাঁ ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন। তিনি গুজব ছড়ান যে, ফিরোজ খাঁ সখিনাকে তালাক দিয়েছেন। আলামত হিসেবে ফিরোজের সই জাল করে দেখানো হল যুদ্ধক্ষেত্রে। মুহূর্তে পাল্টে গেল যুদ্ধের ভাব-গতি। সেই কিশোর সখিনার সাথে ফিরোজের তালাকের কথা শুনে অসুস্থ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে টগবগে সেই কিশোরের দেহ নিথর হয়ে যায়। তখন মৃত কিশোর সেনাপতির শিরোস্ত্রাণ সরানো হলে দেখতে পায় তার মেঘবরণ অপূর্ব কেশরাশি। সবাই দেখেন তিনি আর কেউ নন, উমর খাঁর আদরের মেয়ে সখিনা! নিজের স্বামী ফিরোজকে মুক্ত করতে নিজের বাবার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ছদ্মবেশে যুদ্ধে নামেন।

 

খবর পেয়ে ছুটে এলেন পিতা উমর খাঁ। কন্যার প্রাণহীন দেহ কোলে নিয়ে উন্মাদের মতো বিলাপ করতে লাগলেন। শোকে কাতর উমর খাঁ জামাতা ফিরোজ খাঁকে মুক্ত করে দেন। বন্দি থেকে মুক্ত হয়ে ফিরোজ পাগল প্রায় হয়ে গেলেন। এরপর কেল্লা তাজপুরবাসী দেখে প্রতিদিন সন্ধ্যায় এক দরবেশধারী ব্যক্তি সখিনার সমাধিতে প্রদীপ জ্বেলে নিশ্চুপ বসে থাকেন। দরবেশের বেশধারী ব্যক্তিটি আসলে সখিনার স্বামী ফিরোজ খাঁ।

 

বীরাঙ্গনা নারী সখিনা যে জায়গায় প্রাণত্যাগ করেন সেই কুমড়ী নামক স্থানে গড়ে উঠে তার সমাধি। এখনো ময়মনসিংহের সবার মুখে মুখে শোনা যায় বীরাঙ্গনা সখিনার এই কাহিনী।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ