নারীর অগ্রগতিতে প্রথমেই চাই পারিবারিক সহায়তা
বর্তমান বিশ্বে নারীদের অগ্রযাত্রা দৃষ্টি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। সকল বাঁধা পেরিয়ে তারা যেন নিজ গতিতে ছুটেই চলছে। বাংলাদেশও এই যাত্রায় পিছিয়ে নেই। সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের নারীরাও পদে পদে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। জাতীয় হোক কিংবা আন্তর্জাতিক সর্বক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও এটা সত্য যে, অগ্রযাত্রার এই পথে নারীর অংশগ্রহণ শতভাগ নয়। সকল শ্রেণীর নারীর পক্ষে স্বপ্ন পূরণে অগোচরে কাজ করে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। আমাদের দেশে অনেক নারীকে হতে হচ্ছে বিভিন্ন বাঁধার সম্মুখীন। অবহেলা, লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে পদে পদে। বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতাও। নারীর সামগ্রিক অবস্থা খেয়াল করলে দেখা যাবে- কোন নারীকে পরিবার থেকে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে এগিয়ে যেতে, অল্প বয়সেই জোড় করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে, হয়তো সে হয়রানির শিকার হচ্ছে, আবার হয়তো সে ধর্ষণ হচ্ছে। নারীর একটি অংশ এগিয়ে গেলেও আরেকটি অংশ এখনও পিছিয়েই রয়েছে। নারীর প্রতি এই বৈষম্য দূর করতে হলে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে প্রথমে। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হলে শিক্ষা দিতে হবে পরিবার থেকেই।
একজন ব্যক্তির সামাজিকীকরণে পরিবারই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। যদি সমাজের কোন অসামঞ্জস্যতা বদলাতে হয় তাহলে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে পরিবারকেই। পরিবারই পারে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে। আমরা অনেক সময় দেখি শৈশবেই পরিবার থেকে এমন একটা ধারণা দেয়া হয় নারীরা যেকোনো সবকিছুতেই পুরুষদের থেকে পিছিয়ে। আবার কন্যা শিশুর থেকে ছেলে শিশুকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় অনেকক্ষেত্রে। একটি শিশু যদি ছোটো থেকেই এইসব বৈষম্যতা দেখে বড় হয় তাহলে তার মানসিকতাও এভাবেই গড়ে উঠবে যে নারীর প্রতি বৈষম্যতা স্বাভাবিক বিষয়। কাজেই এই মানসিকতা দূর করতে হলে পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা আসা অত্যন্ত জরুরি।
পরিবারের করণীয়
পরিবারের উচিত ছেলে ও মেয়ে শিশুকে সমানভাবে গড়ে তোলা। শিক্ষা হোক বা মর্যাদা দুজনকেই সমানভাবে প্রাধান্য দিতে হবে। শিশু যদি দেখে তার বোনকে তার পরিবার তার মতো করে সকল কাজে অংশগ্রহণ করতে দিচ্ছেনা বরং বাঁধা দিচ্ছে, তাহলে সে এভাবেই ভাবতে শুরু করবে যে মেয়েরা ছেলেদের মতো স্বাধীনভাবে কিছু করতে পারেনা। যদি সে দেখে পরিবারে তার মায়ের মতামতকে কেউ প্রাধান্য দেয়না, অবহেলা ও অসম্মান করে সবসময় তাহলে সেও বড় হয়ে ভবিষ্যতে নারীদের মর্যাদা দিবেনা। আবার অনেক পরিবারে শিশুরা মায়ের প্রতি নির্যাতন দেখে বেড়ে ওঠে। শিশুরা মানসিকভাবে প্রভাবিত হয় এসব দেখে। তাই পরিবারের উচিত ছোটো থেকেই এটা শেখানো যে নারী পুরুষ সমান। তাই পরিবারে নারীর সম্মান বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে আগে পারিবারিকভাবে নারী পুরুষ সমান এ স্বীকৃতি দিতে হবে। পরিবারে এমন একটি অবস্থান তৈরি করতে হবে যেখানে নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
পরিবারে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হলে নারীর প্রতি সহিংসতাও কমবেনা। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটেক্সের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অন্তত ৭০ শতাংশ নারী কোন না কোনোভাবে সরাসরি নির্যাতনের শিকার হয়। পরিবার থেকে যদি সঠিক সময়ে যৌন শিক্ষা দেয়া যায় তাহলে ধর্ষণ, যৌন হয়রানির মতো অপরাধগুলো কমানো সম্ভব হবে।
আবার অনেক পরিবারে দেখা যায় মেয়েকে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে দিয়ে দেয়। কিছু কিছুক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ি থেকে পড়ালেখা চালিয়ে গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েটির লেখাপড়া বন্ধ করতে হয়। গ্রামে এই পরিসংখ্যান বেশি। আবার অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় শিক্ষিত নারীরাও চাকরি করেনা। এর কারণ পরিবার থেকে বাঁধা। এক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে। কাজ কিছুটা ভাগাভাগি করে নিতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। পরিবারকে বুঝতে হবে নারীরাও পুরুষের মতো স্বাভাবিক মানুষ। একজন পুরুষের মতোই বিদ্যা-বুদ্ধিসম্পন্ন। পুরুষরা যা করতে পারে নারীরাও তা করতে পারে। কেবল তাদের পরিবার থেকে একটু সাপোর্ট দরকার।
আমরা চাই সকল নারীই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় পথিক হোক। তাই পরিবারের ইতিবাচক সহায়তা কামনা করি। নারীর প্রতি নেতিবাচক ধ্যান- ধারণা পাল্টিয়ে ইতিবাচক ধারণা প্রতিষ্ঠা করা গেলে তাদের প্রতি বৈষম্য কমানো সম্ভব হবে।