Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ মাদার তেরেসা’র জন্মদিন

"যদি তুমি একশো জন মানুষকে সাহায্য করতে সক্ষম নাও হও, তাহলে অন্তত একজনকে সাহায্য করো।"

 

কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে একজন মানুষের প্রতি আরেকজন মানুষের ভালোবাসা এবং মহানুভবতা। কিন্তু আমরা কি এই কথাটি মেনে চলি? একে অপরকে সাহায্য করি? হয়তো করি, হয়তো করি না।

 

আমরা কারো দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলেও একজন ছিলেন যিনি সবসময় অন্যের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করতেন। সেই মানুষ টি আমাদের সকলের পরিচিত। তিনি হলেন মাদার তেরেসা।

 

মাদার তেরেসা ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট অটোম্যান সাম্রাজ্যের ইউস্কুবে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একজন আলবেনীয়-বংশোদ্ভূত ভারতীয় ক্যাথলিক নারী। মাদার তেরেসা নামেই তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

 

মানুষের সেবা করা ও সন্ন্যাস জীবন এর প্রতি তার ছোট বেলা থেকেই টান ছিল। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি গৃহ ত্যাগ করে 'সিস্টার্স অফ লোরেটো' সংস্থায় যোগ দেন। ১৯১৯ সালে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তার আগমন হয় ভারতে এবং সেখানেই তিনি জীবনের বাকি অংশ কাটান।

 

ভারতের নাগরিকত্ব নেওয়ার পর তিনি বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করেন এবং তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় তাঁকে প্রথম দিকে খুবই কষ্ট করতে হয়। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অনাহারীদের খাবার ও আবাসনের অর্থ জোগাড় করতে হয়েছিল তাঁকে। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে কলকাতার সেন্ট মেরি ক্যাথলিক গার্লস স্কুলে পড়ানো শুরু করেন তিনি এবং ১৯৪৮ সালে মিশনারির কাজ শুরু করেন।

 

মাদার তেরেসা ১৯৫০ সালের ৭ ই অক্টোবর ডায়োসিসান কংগ্রেস করার জন্য ভ্যাটিকানের অনুমতি পান এবং এ সমাবেশই পরবর্তীতে মিশনারিস অব চ্যারিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

 

চ্যারিটির যাত্রা শুরু করে ১৩ জন সদস্যের ছোট অর্ডার হিসেবে। বর্তমানে যেখানে ৪,০০০ এরও বেশি সন্ন্যাসিনী কাজ করছেন এবং চ্যারিটির অধীনে এতিমখানা ও এইডস আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হয়। এছাড়াও চ্যারিটির সকলে বিশ্বব্যাপী শরণার্থী, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত, দরিদ্র, বসতি-হীন, বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে।

 

মাদার তেরেসা ১৯৫২ সালে মুমূর্ষুদের সেবা দেওয়ার জন্য 'হোম ফর ডায়িং' প্রতিষ্ঠা করেন। পরিত্যক্ত একটি হিন্দু মন্দিরকে কালীঘাট হোম ফর দ্যা ডায়িং-এ রূপান্তরিত করেন, যা দরিদ্রদের জন্য ছিল দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে 'নির্মল হৃদয়' রাখা হয়।

 

এছাড়া ১৯৫৫ সালে সংস্থার শিশুদের লালন পালনের জন্য নির্মল শিশু ভবন স্থাপন করেন, যা এতিম ও বসতি-হীন শিশুদের জন্য ছিল স্বর্গতুল্য। তিনি এভাবেই নিজের জীবনের শেষ সময় অবদি অন্যের সেবাতেই কাটিয়ে দিয়েছেন।

 

নিজের কথা না ভেবে অন্যের সেবায় নিজের জীবন অতিবাহিত করা মহীয়সী নারী হিসেবে মাদার তেরেসা বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তিনি সমাজসেবা মূলক কাজের মধ্যেই কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের পুরোটা সময়। ১৯৭৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন মাদার তেরেসা এবং এই পুরষ্কারের সব অর্থ গরীব দুঃখীদের দান করে দেন।

 

মাদার তেরেসা ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাঁকে সেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেন ও স্বীকৃতি প্রদান করেন।

 

মহা মানবী এই নারী চিরদিন মানুষের মনে বিশাল জায়গা জুড়ে বিরাজ করবেন। আজ তার ১১০ তম জন্মবার্ষিকীতে রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ