Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সন্তান উদ্ধারে এক জাপানি মায়ের বাংলাদেশে আগমন

জাপানের নাগরিক নাকানো এরিকো। দুই মেয়ের খোঁজে দেশ পেরিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। অবশেষে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পরে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। কে এই নাকানো এরিকো? তার দুই সন্তানের সাথে বাংলাদেশের কি সম্পর্ক? তারা বাংলাদেশে আসলোই বা কীভাবে? এসব প্রশ্ন নিশ্চয়ই এসেছে আপনার মাথায়। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক নাকানো এরিকোর গল্প।

 

৪৬ বছর বয়সী নাকানো এরিকো পেশায় একজন জাপানি চিকিৎসক। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরানের সাথে তার পরিচয় হয় জাপানে। পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক হয় তাদের মধ্যে। প্রেম গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। ২০০৮ সালে জাপানি আইন অনুযায়ী তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর এই দম্পতি টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন। তিন মেয়ের জন্ম দেন নাকানো। তারা হল ১১ বছরের জেসমিন মালিকা, ১০ বছরের লাইলা লিনা ও সবচেয়ে ছোট ৭ বছরের সানিয়া হেনা। ১২ বছর যাবৎ সংসার ভালোই চলল। এরপর শুরু হয় সংসারে ভাঙ্গন।

 

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি আইনিভাবে শরীফ ইমরান ও নাকানো এরিকোর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তাদের তিন সন্তানই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানে পড়ালেখা করে। বিচ্ছেদের পর থেকেই শরীফ ইমরান তার মেয়েদের তার কাছে রাখার জন্য উঠে পড়ে লাগে। বারবার মেয়েদের মায়ের অনুমতি ছাড়াই নিজের কাছে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে শরীফ। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

 

এরপর একদিন এরপর এক দিন বড় মেয়ে ও মেজো মেয়ে জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে মায়ের কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত তিনদিন মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। 

 

পরবর্তীতে ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। মেয়েরা দেশে না থাকায় আদালতের রায় সাথে থাকলেও মেয়েদের কাছে পননা এরিকো। 

 

এরপর মেয়েদের উদ্ধারের জন্য এরিকা পাড়ি জমান বাংলাদেশে। ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে এরিকো বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়। এ অবস্থায় ১৯ আগস্ট  দুই মেয়েকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। ৩১ আগস্ট দুই শিশু সন্তান জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে হাজির করতে তাদের বাবা ও ফুপুকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি দুই শিশু ও তাদের বাবার (ইমরান) এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

 

দুই মেয়ের জন্য নাকানো এরিকো এখনো লড়েই চলেছে। মায়ের শক্তি হয়তো একটু বেশিই থাকে অন্যান্যদের থেকে। তাইতো মেয়েদের ফিরে পাবার জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করেই চলেছেন। আশা করি তিনি শীঘ্রই তার মেয়েদের ফিরে পাবেন নিজের কাছে এবং নিজ দেশ জাপানে আবার নিজেদের আগের জীবন ফিরে পাবেন।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ