Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফগান শিল্প ধ্বংসের পথে, সাহায্য চান সাহরা

সাহরা করিমি, আফগানিস্তানের প্রথম এবং একমাত্র নারী নির্মাতা৷ যিনি চলচ্চিত্রের উপর পিএইচডিও করেছেন।  বলা যায় আফগান চলচ্চিত্র নির্মাতার মধ্যে  বেশ ভালো পর্যায়ের একজন নির্মাতা। যিনি তাঁর  ‘হাওয়া’, ‘মরিয়ম’, ‘আয়েশা’ চলচ্চিত্রের জন্য ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে হরাইজন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন৷ তবে বর্তমানে  তার সিনেমা কিংবা নির্মাণ কোন আলোচনার বিষয় নয়৷ বরং আফগানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে টানাপোড়েনই যেন আসল বিষয়। আর এই পরিস্থিতিতে আফগানের চলচ্চিত্রের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পড়েছে অনিশ্চয়তার মুখে। তা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করে এই আফগান চলচ্চিত্র নির্মাতা বিশ্ব চলচ্চিত্র দরবারে পাঠান একটি খোলা চিঠি। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। চিঠিটিতে সাহরা করিমি মূলত সকলের কাছে সাহায্য চায়। এই খোলা চিঠিতে তিনি অনেক আশা নিয়ে লেখেন, " আফগানিস্তানের চিত্রনির্মাতাদের তালেবানের হাত থেকে বাঁচাতে আপনারা আমাদের সাহায্য করতে পারেন। তালেবানরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনেকগুলো প্রদেশ দখল করে নিচ্ছে । গণহারে তারা  মানুষজনকে হত্যা করছে। অনেক শিশুকে তারা অপহরণ করেছে।

 

মেয়েদেরকে নিয়ে তারা নিজেদের মানুষজনের কাছে ‘শিশুবধূ’ হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছে। পোশাকের জন্য তারা একজন নারীকে খুনও করেছে। উপড়ে ফেলেছে এক নারীর চোখ। আমাদের প্রিয় এক কৌতুকাভিনেতাকে তারা নিপীড়ন করে মেরে ফেলেছে। আমাদের ঐতিহাসিক একজন কবিকে তারা হত্যা করেছে। সরকারের সংস্কৃতি ও যোগাযোগ বিভাগের প্রধানকে তারা হত্যা করেছে। সরকারসংশ্লিষ্ট মানুষদের তারা গোপনে মেরে ফেলেছে। সবার সামনে তারা আমাদের মানুষদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। হাজার হাজার পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করেছে। প্রদেশগুলো থেকে পালিয়ে আসা পরিবারগুলো কাবুলের ক্যাম্পে আছে। 

সাহরা করিমি আরো উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, তালবানরা নারীর অধিকার কেড়ে নেবে।  তারা সব দখল করে নিলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে আফগান স্কুলগুলোতে ৯মিলিয়ন ছাত্রী রয়েছে। তালবানরা ক্ষমতায় এলে এই সংখ্যা শূন্যে নেমে আসবে।এরমধ্যেই তারা কয়েকটি স্কুল ভেঙে দিয়েছে। 

 

আফগানের মত একটা দেশে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য যে কঠোর পরিশ্রম করেছে সাহরা তার সবকিছুই শেষ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। যদি তালিবানরা সব দখল করে নেয় তাহলে তারা সব শিল্প নিষিদ্ধ করে দেবে। সাহরা  এবং অন্যান্য চলচ্চিত্র নির্মাতারাও তাদের ধ্বংস করে দেওয়ার তালিকাভুক্ত হবে বলে সাহরা বলেন। 

 

তালেবানদের এজেন্ডা নারী ও উদার শিল্পকে দমন করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে তিনি লেখেন, “আমেরিকানরা তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। এতে আফগানদের এতদিন যে দুঃস্বপ্নের আশঙ্কা ছিল তা সত্যি হতে যাচ্ছে। যারা দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত কেবল শান্তিই খুঁজে যাচ্ছে তাদেরকে তো আমরা অস্বীকার করতে পারিনা। আফগান নারীদের এভাবে ঘরবন্দি করে পর্দার আড়ালে রেখে দুর্বল করে দেয়ার প্রবণতা মোটেই কাম্য নয়।” 

 

গত রবিবার রাজধানী কাবুল দখলের মাধ্যমে পুরো আফগানিস্তার তালেবানদের দখলে চলে আসে। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি দেশ থেকে পালিয়ে উজবেকস্তানে আশ্রয় নিয়েছে। এব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, “রক্তপাত এড়াতে আমি পলায়ন করেছি।” ফেসবুকে তিনি জানিয়েছেন যে এরপর আফগানিস্তানে যা হবে তার জন্য তালিবানরাই কেবল দায়ী থাকবে। 

 

তিনি বলেছেন, “তালিবানরা আমাকে অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে। কাবুল ও কাবুলের জনগণদের আক্রমণ করতে তারা এখানে এসেছে। রক্তপাত এড়াতে আমি ভাবলাম আমার এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত। অস্ত্র ও বন্দুকের সাহায্যে তারা জয়লাভ করেছে। এখন আফগানিস্তান ও আফগানিস্তানের জনগণের সম্মান, সম্পদ ও সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব তালিবানদের।” 

 

তালেবানের মুখপাত্র সুহেল শাহীন বলেছেন, “আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এরা (তালেবান) দেশে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর চায়।” নিউজ মাধ্যমকে তিনি জানান যে, “আফগানিস্তানের সকল জনগণ বিশেষ করে কাবুলের জনগণের জীবন, সম্পত্তি সবকিছুই নিরাপদে আছে।”

 

 

অনুবাদক: শারমিন নিশু, শাশ্বতী সরকার

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ