মহাকাশে রাজকীয় কণা!
গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে কতই নাহ অজানা রয়ে গেছে। যুগ যুগ ধরে উত্তর খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। এই খোজের মধ্যেই মহাশূন্যে সন্ধান মিলেছে বহু আশ্চর্য রহস্যর। তবে খোজ পাওয়া গিয়েছে প্ল্যাটিনাম, সোনা, লোহা, তামা-সহ একাধিক বহুমূল্য ধাতুতে ঠাসা একটি গ্রহাণু। পৃথিবীর বুকে সেই সম্পদের ভাণ্ডারকে নামিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু করে দিলেন বিজ্ঞানীরা।
গ্রহাণুর এক একটি টুকরোয় বিশ্বের সবাই কোটিপতি হয়ে যেতে পারেন!আজ থেকে প্রায় ১৭০ বছর আগে, ১৮৫২ সালেই গ্রহাণুটির অস্তিত্ব আন্দাজ করা হয়েছিল। ইটালির জ্যোতির্বিজ্ঞানী আনিবেল দি গাসপারিস প্রথন সেটি আবিষ্কার করেন। শুরুতে আর পাঁচটা মৃতপ্রায় গ্রহাণুর সঙ্গে সেটিকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, ততই মোহময়ী রূপে ধরা দিয়েছে প্রাণহীন সেই গ্রহাণু। সেই ১৬-সাইকির গায়ে আঁচড় কাটতে চলেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৭ কোটি কিলোমিটার দূরে মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মাঝামাঝি অবস্থান করছে এই গ্রহাণু। ২০২২ সালের অগস্টে এই গ্রহাণু অভিযানে নামছে নাসা। নাসার মহাকাশযানের পৌছতে সময় লাগবে প্রায় ৩.৫ বছর। ২০২৬-এর শুরুর দিকে ওই গ্রহাণু থেকে মূল্যবান ধাতু সমৃদ্ধ চাঙর তুলে এনে গবেষণাই আপাতত লক্ষ্য বিজ্ঞানীদের। নাসা জানিয়েছে, গ্রহাণুটি মাত্র ২০০ কিলোমিটার চওড়া। কেন্দ্রে জমা বহুমূল্য ধাতুর বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোয়াড্রিলিয়ন।গ্রহ হিসেবে একটু একটু করে গড়ে ওঠার পথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে অন্যদের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সেটি মৃত অবস্থায় ভাসছে মহাশূন্য।
হিসাব করলে দাড়ায়, ১০ লক্ষ লক্ষ কোটি ডলার। গোটা গ্রহাণুটিকে ভেঙে ভেঙে নিয়ে এসে বণ্টন করে দিলে, পৃথিবীর ৭৭০ কোটি মানুষের প্রত্যেকে মাথা পিছু কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবেন। প্যাসাডিনার ক্যালটেক গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, ৫০ মেগাপিক্সেল রেজোলিউশনের যে ছবি তাদের হাতে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে গ্রহাণুপৃষ্ঠটি ধাতুতে মোড়া।১৬-সাইকি গ্রহাণুর শরীরে প্ল্যাটিনাম, সোনা, নিকেল, লোহা, তামা-সহ একাধিক বিরল প্রকৃতির ধাতুর হদিশ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে গ্রহাণুটি সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি ধাঁধা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। নাসার মহাকাশযান পৌছলে আরও অনেক রহস্যের উদঘাটন হবে বলে আশাবাদী তারা।
একটানা ২১ মাস ধরে নাসার মহাকাশযান গ্রহাণুটিকে পর্যবেক্ষণ করবে। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাবে। তাতে আরও একটি বিষয়ে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। তারা জানিয়েছেন, নাসার মহাকাশযান পৌঁছলে গ্রহাণুটির আসল বয়সও নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। বোঝা যাবে, সেটি পৃথিবীর সমবয়সী নাকি তার চেয়েও প্রবীণ।
ক্যালটেকের গ্রহ-বিজ্ঞান এবং জোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপিকা ক্যাথরিন দি ক্লিরের মতে, এমনও হতে পারে যে ধাতুগুলি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ অবস্থায় নেই। গ্রহাণুর গোটা কলেবরে ভিন্ন ভিন্ন রূপে মিশে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে গ্রহের অন্তঃস্থল পরীক্ষার ক্ষেত্রেও এই অভিযান যুগান্তকারী হয়ে দাঁড়াতে পারে। ১৬-সাইকি সম্পর্কিত বিশদ তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন জার্নালে। এখনও পর্যন্ত যা যা তথ্য সামনে এসেছে, তা জড়ো করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে নাসা।
তবে এত দিন মহাকাশ অভিযান যেখানে প্রাণের সন্ধানে এবং জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে বার করার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে এই সম্পদ অভিযান একটি নতুন অধ্যায় এর উন্মোচন করলো। মহাকাশ থেকে হয়তো বিরল কোন ধাতু দেখা যেতে পারে। যা হয়তো মানবসমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে!