Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমড়া পরিবারের সদস্য কাঁকরোল

কাঁকরোল এর সাথে কুমড়া কিভাবে এক পরিবারের সদস্য হয় তাই ভাবছেন তো? কাঁকরোল ছোট একটা সবজি আর কুমড়া তো বড় সেজন্য কি এই দুটি একি পরিবারের হতে পারে না?

কাঁকরোল কুমড়া গোত্রীয় একটি ছোট সবজি। বাংলাদেশে এটি গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে চাষ করা হয়। কাঁকরোল ও কুমড়ার গোত্র একই হওয়ায় কাঁকরোল কে কুমড়া পরিবারের সদস্য বলা হয়। Cucurbitaceae পরিবারে কুমড়া ও কাঁকরোল হয়। একই পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও কুমড়ার থেকে কাঁকরোল বেশি জনপ্রিয়। 

 

কাঁকরোল এর বৈজ্ঞানিক নাম Momordica dioica এবং ইংরেজিতে বলা হয় Teasel gourd/ kantola । কাঁকরোলের খোসা ছোট ছোট নরম কাঁটায় ভরা এবং ভেতরের শাঁস সাদাটে সবুজ, বিচি নরম ও ছোট। কাঁকরোল তরকারি, ভাজি বা সিদ্ধ করে ভর্তা করে খাওয়া হয়। কাঁকরোলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, ভিটামিন-বি, শ্বেতসার ও খনিজ পদার্থ ক্যারোটিন। কাঁকরোল একটি লতানো গাছ। স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছে হয় না। ফলে বাগানে যদি দুই ধরনের গাছ না থাকে তাহলে পরাগায়ণ হয় না এবং ফল ও হয় না।

 

বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় মার্চ ও এপ্রিল মাসে কাঁকরোলের অনেক জাতের চাষ হয়। কাঁকরোল এর জাত তার আকার, আকৃতি, বর্ণ ও নরম কাঁটার বৈশিষ্ট্য দ্বারা ভাগ করা হয়। লাইমাই গ্রামে, ফটিকছড়ি উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলায় কাঁকরোলের চাষ হয়ে থাকে। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লাতেও কাঁকরোল এর ব্যাপক চাষ হয়। কাঁকরোলের ফলন ৯০-১০০ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। এটি কন্দমূলের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে থাকে।  

 

জাত ভেদে কাঁকরোল মণিপুরী, আলমি, সবুজ টেম্পু, হলুদ টেম্পু, বর্ণ টেম্পু, মেরাশানি ও অন্যান্য নামে পরিচিত। বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাঁকরোল মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করা হয়। কাঁকরোলে ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম। এ কারণে কাঁকরোল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশ উপকারী এবং ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সাহায্য করে। 

 

কাঁকরোল ভিটামিন বি ও সি এর ভালো উৎস হওয়ায় কোষের গঠন ও নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে এবং স্নায়ুবিক ত্রুটি হয় না। গর্ভকালীন সময়ে যে স্নায়ুবিক ত্রুটি দেখা যায় এ কারণে কাঁকরোল বেশ উপকারী। এছাড়াও কাঁকরোল ভিটামিন সি পরিপূর্ণ হওয়ায় এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে এবং শরীরের টক্সিন দূর করে ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমায়। 

 

পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট, পলিপেপটিড-পি এবং উদ্ভিজ্জ ইনসুলিন কাঁকরোলে রয়েছে। ফলে ব্লাড শুগার নিয়ন্ত্রণ করে যকৃত, পেশি ও শরীরের মেদবহুল অংশে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষণে কাঁকরোল কার্যকর। কাঁকরোলে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন, লিউটেইন, যা ত্বককে করে তারুণ্য দীপ্ত এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। 

 

কাঁকরোল পাতার রস সিদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে খেলে জ্বর কমে যায়। এছাড়া কাঁকরোল বাঁটা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে কাশি কম হয়। পাইলস নিরাময়ে কাঁকরোল বাঁটার সাথে চিনি মিশিয়ে দিনে দুই বার খাওয়া যায়। এতে পাইলস উপশম হয়। কাঁকরোলের শেঁকড় বাটার সাথে এক চা চামচ আদার রস ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্টে আরাম পাওয়া যায়। 

 

কাঁকরোল বাঁটা স্ক্রাব করে গোসলের সময় গায়ে মেখে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করার পরে ধুয়ে ফেললে শরীরে সৃষ্টি হওয়া ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং ত্বককেও কোমল করে। কাঁকরোল বাঁটা এক গ্লাস দুধে মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে কিডনির পাথর রোগ নিরাময়ে বেশ উপকারী। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগের ঐতিহ্যবাহী ভেষজ প্রতিকার হিসেবে কাঁকরোলের বিভিন্ন অংশ ব্যবহৃত হয়। কাঁকরোল পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং ভেষজ গুণসম্পন্ন হওয়ায় নানান রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ