Skip to content

১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তালেবানদের আফগানিস্তান দখলে সংকটে নারী নিরাপত্তা 

বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনায় এসেছে তালেবানরা। দুর্বার গতিতে এগিয়ে আফগানিস্তান প্রায় দখল করে নিয়েছে তারা। রাজধানী কাবুল ব্যতীত প্রায় পুরো আফগানিস্তানই এখন তালেবান বাহিনীর অধীনে। তালেবানের হাতেই থাকবে আফগানিস্তানের শাসন। তালেবান শোষিত এ অঞ্চলে নারী অধিকার ক্ষুণ্ণ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এএফপির সূত্র অনুসারে তিনি বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবানের দখল করা এলাকাগুলোয় নারীদের অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন হবে।

 

আবার ইতোমধ্যে বেশ কিছু খবর পাওয়া গেছে যা আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থা ব্যাখ্যা করে। বিশেষ করে নারী ও সাংবাদিকদের অধিকার মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করছে তালেবান। আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এর তথ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ৭২ হাজারের মতো শিশু। এই শিশুগুলোকে নিয়ে তাদের মায়েরা নিরাপত্তার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের সকল তরুণ সদস্যরা জীবন বাঁচাতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। কেবল কিছু বয়স্ক সদস্যরা নিজ সম্পত্তির পাহারাদার জন্য রয়ে গেছেন নিজ গ্রামে। ঘরহারা বেশিরভাগ পরিবার এখন রাজধানী কাবুল এবং হেরাতের মতো বড় শহরে আশ্রয় খুঁজছেন।

 

জানা গেছে তালেবানরা আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় গ্রামে গ্রামে ঢুকে সাধারণ মানুষের জীবনে তাণ্ডব চালাচ্ছে। এর মূল ভুক্তভোগী হচ্ছে নারী ও শিশুরা। অল্পবয়সী মেয়েদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এসেছে তালেবানদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও বাড়িতে ঢুকে নারীদেরকে দিয়ে জোড় করে কাজ করাচ্ছে তারা। মালিস্তান জেলার ফাতিমা নামে এক নারী গার্ডিয়ানের সাক্ষাৎকারে পরিস্থিতির ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করেছেন। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এই নারী একটু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটেই চলেছেন। তার ভয় ছিল, যদি তালেবান যোদ্ধারা গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নেয় তাহলে তারা অন্য তরুণীদের মতো ফাতেমাকেও ধরে নিয়ে যাবে। ফাতিমা সাক্ষাৎকারে বলেন, তালেবান যোদ্ধারা গ্রামে ঢোকার পর একটি অল্প বয়সী মেয়েকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পরে মেয়েটি নিজেদের বাড়ি ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।

 

জাতিসংঘের তথ্যমতে, সরকারি বাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের লড়াইয়ে শুধু গত মাসেই এক হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে সংঘাতপূর্ণ এলাকা ও শহরগুলো থেকে হাজারো সাধারণ মানুষ নিরাপদে আশ্রয়ের আশায় রাজধানী কাবুলের দিকে ছুটছে। আফগানিস্তান স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনের (এআইএইচআরসি) তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে প্রায় ১০ লাখ আফগান বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আফগান শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাস্তুচ্যুতদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, সংঘাতের কারণে আফগানিস্তানে চরম খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। বাস্তুচ্যুত সাধারণ মানুষের জন্য আশপাশের দেশগুলোকে সীমান্ত খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

 

অনেকেই বলেছে যে তালেবান যোদ্ধারা বেসামরিক পুরুষদের হত্যা এবং নারী ও মেয়েদের বিয়েতে বাধ্য করছে। দেশটির শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয় নিশ্চিত করলেও মন্ত্রণালয় বা এআইএইচআরসি- কেউই এইসব তথ্য যাচাই বা তদন্ত করতে সক্ষম হয়নি। বাস্তুচ্যুতদের অনেকেই কাবুল শহরের ক্যাম্পে বা মসজিদে থাকছেন। কিছু অল্পবয়সী মেয়ে শহরের অপরিচিতদের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছে। 

 

আফগানিস্তানের গ্রাম ও শহরে তালেবান যোদ্ধাদের তাণ্ডবের এসব খবর দেশজুড়ে নারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে উদ্বুদ্ধ এই নারীদের অনিরাপত্তা অবস্থা দূর করতে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে সম্মিলিত হয়ে কাজ করতে হবে। তবেই আশার মুখ দেখা সম্ভব হবে।
 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ