Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে তোমার জন্মদিনে’

বাংলার আকাশ একদিন সুরের যাদুতে গান বাঁধার কান্না শুনেছিল। আজ তো সেই দিন। ১৬ আগস্ট। তারপর বহুবছর এই বাংলার মানুষ সেই সুরে নিজেদের হৃদয় মোহিত করেছে। বাংলা ব্যান্ডকে চিনেছেন নতুন করে এক কিংবদন্তির সুরে। আজ সেই কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিন। 

 

রূপালী গিটার রেখে চলে যাওয়ার গানই নয় বরং রেখে চলে গেছেন এই কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু। তবে বাংলা সংগীতের আকাশে এখনো হয়ে আছেন উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড ‘এলআরবি’র প্রতিষ্ঠাতা তিনি। গিটার হাতে তিনি যেন হ্যামিলনে বাঁশিওয়ালা। ভিন্নজন ভিন্নভাবে ভালোবাসেন কেউ ‘গিটারের জাদুকর’ আবার কেউ বা ‘রুপালি গিটারের আইয়ুব বাচ্চু’ হিসেবে। 

 

বাংলাদেশে যাদের হাত ধরে দেশীয় ব্যান্ড সংগীত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাদের একজন ছিলেন তিনি। আশির দশক থেকে গানে, সুরে ও কথায় মন জয় করেছেন বাঙালি হৃদয়। দেশীয় ব্যান্ড সংগীতের এই কিংবদন্তি বেঁচে থাকলে আজ সোমবার (১৬ আগস্ট) ৬০ বছরে পা দিতেন। বিশেষ এই দিনে ভক্ত-অনুরাগীরা তাঁকে স্মরণ করছেন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। 

 

জনপ্রিয় এই সংগীত শিল্পীর জনপ্রিয়তা পাওয়ার পথ একেবারে সমান্তরাল ছিল সেকথা বলা যায় না। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু। ডাক নাম ছিল রবিন। কলেজ জীবনে বন্ধুদের নিয়ে ১৯৭৬ সালে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নামে একটা ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন আইয়ুব বাচ্চু। পরে এর নাম পাল্টে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। ছোটখাটো নানা অনুষ্ঠানে গান করত তাদের এই ব্যান্ডদল।কিন্তু তা আর বেশিদিন চললো না। বন্ধুরা যে যার মত ব্যান্ড ছেড়ে নিজেদের জীবনের  একেক দিকে চলে যান। কিন্তু এই সংগীতের সুর যার অন্তরে, নিঃশ্বাসে তিনি ছাড়লেন না গান। এরপর আইয়ুব বাচ্চু ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডদল’র সঙ্গে ১৯৭৭ সালে যুক্ত হয়ে যান। 

 

ফিলিংসের সাথে যাত্রা থামিয়ে ১৯৮০ সালে তিনি যোগ দেন ‘সোলস’ ব্যান্ডের সাথে। এই ব্যান্ডের লিডগিটার বাজানোর দায়িত্বে ছিলেন টানা ১০ বছর। ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল নিজে গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড ‘এলআরবি’। এরপর  রূপালি গিটার, রাত জাগা পাখি হয়ে, মাধবী, ফেরারি মন, এখন অনেক রাত, ঘুমন্ত শহরে, বার মাস, হাসতে দেখ, উড়াল দেব আকাশে, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, সেই তুমি কেন অচেনা হলে, একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে, মেয়ে ও মেয়ে, এক আকাশ তারা সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান এই ব্যান্ড দলটি থেকে উপহার দিয়েছেন তিনি। যে গানগুলো এ প্রজন্মের মানুষের মুখে মুখে। আইয়ুব বাচ্চু  শ্রোতা-ভক্তদের কাছে সংক্ষেপে এবি নামে পরিচিত। মূলত রক ঘরানার গান করলেও আধুনিক গান, ক্লাসিকাল এবং লোকগান দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন গুণী এই শিল্পী।

 

বাংলা ব্যান্ড জগতের জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের মধ্য একজন আইয়ুব বাচ্চু। মঞ্চ পারফরম্যান্সে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। শ্রোতা-ভক্তদের কাছে ‘এবি’ নামেই পরিচিত এই গুণীশিল্পী।

 

এই ব্যান্ডের সঙ্গে তার প্রথম অ্যালবাম ‘এলআরবি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ বের হয়। গানের কথা ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই, যা পুরো ভক্ত মহলে আলোড়ন তৈরি করে দেয়। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’ । সর্বকালের সেরা একক অ্যালবাম গুলোর মধ্যে একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। একই বছর তার আরেকটি ব্যান্ড অ্যালবাম ‘ঘুমন্ত শহরে’ প্রকাশিত হয়। সেটিও  বেশ সাফল্য পায়। আইয়ুব বাচ্চুর সর্বশেষ তথা ১০ম অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’ প্রকাশ হয় ২০১৫ সালে। চলচ্চিত্রে গান করেও দুর্দান্ত সাড়া পান আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর গাওয়া ‘আম্মাজান’ সিনেমার টাইটেল গান হিসেবে  সারাদেশের মানুষের কাছে আজও জনপ্রিয়। 

 

তবে মৃত্যু চিরকাল সত্য একথা কে ঠেকাবে! বাংলার আকাশে তখন মেঘেদের আনাগোনা বাড়তে বাড়তে কালবৈশাখীর আগেই ঝড় উঠে গেছে আকাশে। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ফুসফুসে পানি জমার অসুস্থতায় ভোগার পর ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, এই কিংবদন্তি সংগীত তারকা আমাদের ছেড়ে চলে যান। ছেড়ে যান ভক্তদের, ছেড়ে যান গান, সুর। তবে রেখে যান বহুকালের জনপ্রিয় সব গান। যেগুলো আজীবন জীবন্ত হয়ে থকবে তাঁর গানপ্রিয় মানুষের হৃদয়ে। সংগীতে, সুরে বাঁচা এই শিল্পী মৃত্যুর দুইদিন আগেও  রংপুরে তার শেষ কনসার্ট করেছিলেন। তবে আইয়ুব বাচ্চুর হঠাৎ মৃত্যুতে শুধু সুরের জগত নয়, কেঁদে উঠেছিলো সহস্র শ্রোতা। আর এই বিয়োগে আমাদের বড্ড ক্ষতি হয়ে গেলো যেন। সংগীতের জগতে  তিনি যে একজন মিউজিসিয়ান ছিলেননা নয়, বরং ছিলেন একজন ম্যাজিশিয়ান।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ