Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বের সবচেয়ে খাটো মানব সম্প্রদায় – পিগমি জাতি

পৃথিবীতে অসংখ্য জাতিগোষ্ঠী আছে, যারা কিনা পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যকে পূর্ণ করে। এই অসংখ্য জাতির মধ্যে পিগমি এমনই এক জাতি। এদেরকে বলা হয় পৃথিবীর সবথেকে খাটো মানবের জাতি। এদের শারীরিক উচ্চতা এতটাই কম যে স্বাভাবিক মানুষদের মধ্যে যাদের খাটো বলা হয় তাদেরও ধারেকাছে নাই। এমনকি সভ্য সমাজের সাথেও এদের কোন যোগাযোগ নেই।

 

আফ্রিকা মহাদেশের পুরোটাই এক আশ্চর্যে ঘেরা। আর আফ্রিকার এক আশ্চর্য জাতি হল পিগমি মানব জাতি। পৃথিবীতে একজন মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক উচ্চতা ৫ফুট ৭ ইঞ্চি,আর মেয়েদের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। কিন্তু পৃথিবীর বুকে এমন এক মানবগোষ্ঠী আছে যারা এই স্বাভাবিক উচ্চতার ধারের কাছেও নেই। তাদের বলা হয়ে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে খাটো মানুষ।  অদ্ভুত এই মানবগোষ্ঠীর নাম হল পিগমি।  পিগমি হল মধ্যে আফ্রিকার একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। পিগমি শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক ভাষা থেকে, যার অর্থ হল কনুই পর্যন্ত। এদের গড় উচ্চতা ৪ ফুট।

 

পিগমি জাতি নিজেদের পা নামে সম্বোধন করে থাকে , যার অর্থ হল মানুষ।  মজার ব্যাপার হল, সারাবিশ্বের মানুষ যে তাদের পিগমি নামে ডাকে তা এই মানুষগুলো জানেই না। কারণ সভ্য জগতের সাথে এদের কোন যোগাযোগই নেই। তারা নিজেদেরকে পা হিসেবেই জানে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু কিছু জায়গায়ও পিগমিদের অস্তিত্ব ছিল। ফিলিপাইনের ইয়েতো আদিবাসীরাও মূলত পিগমি মানবগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।  পিগমিরা বামন আকৃতির জঙ্গলবাসি একটি সুপ্রাচীন মানবসম্প্রদায়। কিন্তু সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে এই জাতি। স্বীকারের অভাব বন নিধন এবং যুদ্ধভিত্তিক সহিংসতায় বিলুপ্ত প্রায় পিগমি সম্প্রদায়। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে পিগমিদের সংখ্যা এক লক্ষের বেশি হবে না। পিগমিদের শারীরিক উচ্চতার কারণে অনেক সময় কে বাচ্চা আর কে প্রাপ্ত বয়স্ক তা বুঝে ওঠাই কষ্টকর হয়ে যায়। 

 

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন পিগমিদের এই খর্বাকৃতির কারণ হল, শরীরে উচ্চতা বাড়ানোর জন্য যে ইনসুলিন জাতীয় আইজিএফ নামের উপাদানটি কাজ করে পিগমিদের ক্ষেত্রে তা ঘটে না, এ কারণেই তারা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা খাটো বা বামন হয়ে থাকে। যেহেতু পিগমিদের শারীরিক উচ্চতা অত্যন্ত খাটো তাই এদের ঘর বাড়িও ছোট ছোট। এই পিগমিরা কিন্তু যাযাবর সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত কারণ এরা এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বাস করে না। ছোট ছোট দলে এরা একজনের নেতৃত্বে জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় এবং কিছু দিন অবস্থান করে আবার জায়গা পরিবর্তন করে। পিগমিরা যেহেতু জঙ্গলে থাকে তাই এদের খাবারের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন জাতের বুনো ফল। তবে ফলমূল ছাড়াও সকল ধরনের চতুষ্পদি প্রাণী তারা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। খাবার সংগ্রহের জন্য এই পিগমিরা শিকার করে বেড়ায়।  

 

পিগমি জাতিগোষ্ঠীর ও দলনেতা থাকে, আর এ দলনেতা নির্বাচিত হয় কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে। দলনেতাকে তুখড় শিকারি হতে হয়। জঙ্গলে বসবাস করার ফলে সভ্য জগতের অনেকেই পিগমিদের বন মানুষ বলে অভিহিত করলেও পিগমিরা বন মানুষ নয়। বরং তারা আমাদের মতোই রক্তে মাংসে গড়া মানুষ।  মানুষ তাদের যতোটা হিংস্রভাবে তারা ততোটা হিংস্র নয়। যুদ্ধ কিংবা বিবাদ পিগমিদের অভিধানে নেই বললেই চলে।  এমনকি তারা নিজেদের মধ্যেও কোন ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হন না। বৈচিত্র্যময় গান ও নাচ পিগমি সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য, প্রায় প্রতিটি উৎসব এবং শিকারের আগে ও পরে তারা গান ও নৃত্য করে নৃতাত্ত্বিক গবেষকদের মতে মানব সভ্যতার প্রথম দিকের জীবন্ত নিদর্শন এই পিগমি সম্প্রদায়। সভ্য সমাজে আলো না দেখা এই সম্প্রদায় চলাফেরা এবং আচার অনুষ্ঠান যেন লাখো শতাব্দী আগের মানুষদের আচরণকেই প্রতিফলিত করে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা এ জাতি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ