Skip to content

২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরীদের ভয় যেখানে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে

জীবনের ধাপে ধাপে সময়ের সাথে আসে বয়ঃসন্ধিকাল। আর এ সময়ে এসে ভর করে নানা ভয়। বয়ঃসন্ধির সময় শরীরে অনেক ধরনের পরিবর্তনের দেখা যায়। কিশোরীর সুন্দর ও আত্মবিশ্বাসীভাবে বেড়ে ওঠার পথটা যেমন অনেক আশাময় করে তেমনি এর নতুন কিছু অভিজ্ঞতায় ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ হয়েও দাঁড়ায়।

 

কিন্তু এসময়ের পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এই স্বাভাবিক নিয়মে যখন অনিয়ম আসে ঠিক তখনই চিন্তারা  যেন বাসা বাধে। আর এই অনিয়মের তালিকায় পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম যেন এক আতংকের বিষয়। আসুন জেনে যাক এর লক্ষণ, উপসর্গসহ নানাদিক।

 

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম মূলত নারীদেহে এন্ড্রোজেন (পুরুষ যৌন হরমোন)-এর আধিক্যের কারণে সংঘটিত শারীরিক সমস্যা। এক্ষেত্রে নারীদেহে এন্ড্রোজেন হরমোনের প্রভাবে বিভিন্ন রকম লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। বন্ধ্যত্ব, অনিয়মিত মাসিক, জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায় এ ধরণের সমস্যায়। 

 
পলিসিস্টিক ওভারি প্রধানত কিশোরী ও নারীদের প্রজননক্ষম সময়ে হয়ে থাকে। ১৫ বছর থেকে ৪৪ বছর বয়সের মধ্যে। তবে এর সংখ্যার কিছুটা তারতম্য হলেও বয়সের বাড়তে থাকে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের রোগীর সংখ্যা। যা শতকরা ২.২%-২৬.৭% প্রায়। 

 

উপসর্গ বলতে *অনিয়মিত মাসিক *অতিরিক্ত রক্তস্রাব  *মুখে ও শরীরে অত্যধিক লোম (পুরুষালি) *ব্রণ মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে। আরও কিছু শারীরিক সমস্যা এর সঙ্গে থাকতে পারে- তলপেটে ব্যথা, কালো ত্বক (ঘাড়, বগল ইত্যাদি জায়গায়) বন্ধ্যত্ব। 

 

এছাড়াও এসব রোগীদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এদের অনেকেই দৈহিক স্থূলতায় আক্রান্ত হয়, নাকডাকা ও ঘুমের সময় হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হওয়া, হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম একটি জীনগত ত্রুটি ও পরিবেশগত ত্রুটির সমন্বিত ফল। জীনগত ত্রুটি আছে এমন কিশোরীর দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, খুব কম শারীরিক শ্রম সম্পাদন করা ও ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ করা ইত্যাদি এ রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 

 

তবে এর লক্ষণীয় বিষয় গুলো সচেতনতার সাথে নজরে আনা প্রয়োজন। সময়ের গতিরেখায় পালটে যেতে পারে রোগের প্রখরতা। 

 

অনিয়মিত মাসিক : বেশিরভাগ মেয়েদের ৪০ বা ৪৫ বা ৫০ দিন বা কারও কারও ক্ষেত্রে আরও বেশি দিন পর ঋতুস্রাব হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অল্প মাত্রায় ঋতুস্রাব হলেও কারও কারও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হয়। মাসের পর মাস ঋতুস্রাব বন্ধ থাকাও অস্বাভাবিক নয়। তবে বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতেই এ সমস্যা শুরু হতে পারে, প্রজননক্ষম সময়ে অন্য যে কোন সময়েও এ সমস্যা শুরু হতে পারে।

 

পুরুষালি হরমোনের অধিক মাত্রায় উপস্থিতিও এর বহিঃপ্রকাশ। এর ফল স্বরূপ নারী দেহে পুরুষদের মতো লোম দেখা দিতে পারে (হার্সোটিজম), মুখে বা শরীরের অন্যান্য জায়গায় ব্রণ হওয়া, পুরুষালিটাক ইত্যাদি। প্রতি চারজনের আক্রান্তদের মধ্যে তিনজনের দেহে এ লক্ষণগুলো থাকে।

 

মেটাবলিক সিন্ড্রোম : এতে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত নারীর দেহে ইনসুলিন রেজিস্ট্রেন্সের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে- ক্রমশ দৈহিক ওজন বৃদ্ধি হওয়া, ক্ষুধা বৃদ্ধি পাওয়া, দুর্বলতা, স্মৃতিশক্তি দুর্বলতা, ঘাড়ের পিছনে বা বগলে নরম কালো ত্বকের উপস্থিতি, রক্তের গ্লুকোজ কিছুটা বেড়ে যাওয়া, কোলেস্টেরল অস্বাভাবিক থাকা ইত্যাদি।

 

উপরিউক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অতীব জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শের পাশাপাশি জীবনে কিছু নিয়মের রাস্তায় চললেও এর থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই চিকিৎসার শুরুতেই খাদ্য ব্যবস্থাপনার দিকে গুরুত্বপূর্ণভাবে নজর দিতে হবে। এতে দৈহিক ওজন ক মাত্রায় পৌঁছাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি  বিপাকীয় প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটাবে। যাতে করে ইনসুলিন রেজিস্ট্রেন্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। শর্করার আধিক্য কমিয়ে শাকসবজি (আলু বাদে), রঙিন ফলমূল ও আমিষজাতীয় খাদ্যে প্রাধান্য দিতে হবে।

 

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম নাম হওয়ার প্রধান কারণটি হল এ রোগিণীদের ডিম্বাশয়ে বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন আকারের, বিভিন্ন সংখ্যার সিস্ট থাকতে পারে। কিন্তু এটি পরিষ্কারভাবে একটি হরমোনজনিত সমস্যা। অধিকাংশ রোগীর দেহে ইনসুলিন রেজিস্ট্রেন্স থাকে এবং তারা স্থূলকায় হয়।

 

আক্রান্ত নারী কিংবা কিশোরীর অধিকাংশই এ সমস্যার শারীরিক লক্ষণগুলোকে দ্রুত বুঝে উঠতে পারেন না। অনেকে আবার লক্ষণগুলো বুঝতে পারলেও সংকোচ বোধের কারণে বলতে পারে না। তবে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের ব্যাপকতা ও সুদূরপ্রসারী স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে অনেক। তাই এ রোগের বিষয়ে জেনে নেয়া  প্রয়োজন। যদি পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে কিশোরী থেকে প্রজননক্ষম নারী সকলকেই তার এ সমস্যা আছে কিনা জানার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। রোগের প্রখরতায় নয় প্রাথমিক লক্ষণেই সচেতনতা উত্তম।
 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ