কাঁচা হলুদের উপকারিতা
দেশীয় খাবারে যেসব মশলার উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলুদ । হলুদ ছাড়া আমাদের রান্নাঘর গুলো যেন অপূর্ণ। মশলার ব্যবহার ছাড়াও রূপচর্চার ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদের ভূমিকা অপরিসীম । কেননা অন্যান্য উপাদান গুলোর মত কাঁচা হলুদে কোন ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কাঁচা হলুদের বহুমুখী গুনাগুণ সম্পর্কে। তবে শুধু রান্নার মশলা ও রূপচর্চার উপাদান হিসেবে নয়, চিকিৎসা শাস্ত্রেও রয়েছে কাঁচা হলুদের নানা রকম ব্যবহার ও উপকারিতা।
কাঁচা হলুদের উপকারিতা
কোরনিক ক্যান্সারের প্রধান কারণ হল ডিএনএ ও প্রোটিন সেল নষ্ট হয়ে যাওয়া। কাঁচা হলুদে কারকিউমিন নামক উপাদান থাকে, যা এই সেল কে নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে রোধ করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
যে সকল রোগীর প্রি-ডায়াবেটিকস আছে এবং তাদের মধ্যে যারা কারকিউমিন সমৃদ্ধ ক্যাপসুল গ্রহণ করেন, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
বিভিন্ন ধরণের কাটা, ছেঁড়া ও প্রদাহজনিত রোগের জন্য কাঁচা হলুদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়া এলার্জি, আরথ্রাইটিস, এজমা, ব্রণের চিকিৎসায় জন্য হলুদ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা ।
অন্যদিকে নিয়মিত হলুদ সেবনে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি রোধ হয় এবং স্থুলতাজনিত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। যেমন: হৃদপিণ্ডে চর্বিজনিত রোগ, রক্তে চর্বি জমা, কোলেস্টোরেল বৃদ্ধি হওয়া ইত্যাদি রোধ করে।
কারকিউমিন এমন একটি এন্টিওক্সিডেন্ট উপাদান যা লিভার সিরোসিসের মত রোগগুলোকে প্রতিরোধ করে।
কারকিউমিন মানুষের দ্রুত বার্ধক্য রোধ করে। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে ৪ কাপ পানিতে ১ চা চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে হাল্কা আঁচে ১০ মিনিট সিদ্ধ করুন। হলুদের তীব্র ঝাঁজ এড়াতে এবং স্বাদ বৃদ্ধি করতে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।
ব্রণের ক্ষত দূর করতে নিয়মিত হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে ক্ষত ও দাগ দুটোই দূর হবে। এলার্জি জনিত কারণে কারণে দেহে রেশ বা দাগ হলে তা নিরাময়ে হলুদ খুব ভালো কাজ করে।
এত উপকারিতা সত্ত্বেও হলুদ ব্যবহারের কিছু সতর্কতা আবশ্যক। গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে সাবধানতা আবশ্যক। অতিরিক্ত হলুদ সেবনের ফলে গল ব্লাডারে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। আবার, হলুদ রক্ত জমাট বাঁধাকে ধীর করে দেয়। তাই সার্জারির পর হলুদ সেবন বন্ধ রাখা উচিত।
গা ব্যথা হলে দুধের মধ্যে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন। জয়েন্টে ব্যথা হলে হলুদের পেস্ট তৈরি করে প্রলেপ দিতে পারেন।
হলুদ পরিপাকতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক জাতীয় উপাদানের আধিক্য শারীরিক অসুস্থতা আনে। তৈরি করে মানসিক অস্থিরতা। হলুদ এ ক্ষেত্রে মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
অনিয়মিত মাসিক রোধ, হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ–বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে হলুদের কারকিউমিন। এই উপাদান পিরিয়ডের আগে ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
হলুদে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পার্কিনসনস, আলঝেইমার, টিস্যুর স্থবিরতার মতো অসুস্থতা রোধে সক্ষম। এটি আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য আদান-প্রদানের পরিমাণ বাড়ায়। হতাশার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
হলুদ যকৃতের নানান রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। লিভারের বহুবৃদ্ধি, হেপাটাইটিস, সিরোসিস, গলব্লাডারের মতো সমস্যা তৈরিতে বাধা দেয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হলুদের কারকিউমিন। অ্যালার্জি, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস বা কাশি, ঠাণ্ডা ও কফের সমস্যায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা হলুদ সেবনের পরামর্শ দিতেন।
কাঁচা হলুদের রস ৫ ফোঁটা থেকে শুরু করে বয়স অনুপাতে, ১ চা চামচ পর্যন্ত চিনি বা মধু মিশিয়ে খেলে লিভারের সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা হলুদের রস সামান্য নুন মিশিয়ে সকালবেলা খালি পেটে খেলে কৃমি রোগ সারে।