Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্ট্রোক হলে কি করবেন?

অনেকের ধারণা করে, স্ট্রোক হচ্ছে হার্টের রোগ। কিন্তু স্ট্রোক মূলত ব্রেন বা মস্তিষ্কের রোগ। অধিকাংশ মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা যথাযথভাবে না থাকায়, আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত সেবা প্রদানে ব্যর্থ হয়। যা ফলে আক্রান্ত রোগীর বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যায়। এ বিষয়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম.এস. জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, রোগীর স্বজনরা স্ট্রোক কে হার্টের রোগ মনে করে আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে বা হার্টের কোন হসপিটালে নিয়ে যায়। স্ট্রোক যেকোনো বয়সে হতে পারে। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুঁকি তুলনামূলক বাড়তে থাকে। সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিরা থাকেন। তবে তরুণদের মধ্যেও স্ট্রোক হতে দেখা যায়। 

 

স্ট্রোকের কারণ
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তে বেশি মাত্রায় কোলেস্টেরল, ধূমপান, তামাক-জর্দা বা অন্যান্য মাদক সেবন, অতিরিক্ত টেনশন, ডিপ্রেশন বা স্ট্রেস, অলস জীবনযাপন বা সারা দিন বসে কাজ, শারীরিক স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, তেলের ভাজা পোড়া খাবার, ফাস্টফুড প্রভৃতি স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

যাদের পরিবারে আগে কারও স্ট্রোক হয়েছে বা যাদের পূর্বে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক  কিংবা ইনফেকশন বা জন্মগত কারণে মস্তিষ্কের রক্তনালী সরু হয়ে গেছে, তারা মূলত স্ট্রোক ঝুঁকি থেকেই যায়। এছাড়া অ্যাসপিরিন, ক্লোপিডগ্রেল জাতীয় ওষুধ রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্ট্রোক ঘটাতে পারে।

 

স্ট্রোক হলে করনীয়

১। স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়, তাই প্রথম কাজ হবে ওই ব্যক্তির বিশ্রামের ব্যবস্থা করা। 

২। রোগীকে কোনোভাবে স্থানান্তর বা  নড়াচড়া করা যাবে না। কারণ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বিস্ফোরিত হতে পারে।
৩। স্ট্রোক করা রোগীকে কোন কিছু খেতে দিবেন না, এমন কি পান করতেও দিবেন না।

৪। শরীরে কোন টাইট কাপড় থাকলে খুলে দিবেন, যাতে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে রোগীর কোন অসুবিধা না হয়। 
৫। পিচকারি সুই অথবা সেলাই সুই কয়েক সেকেন্ড আগুনের শিখার উপরে রেখে গরম করে নিয়ে, সুচটি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। সুচ দিয়ে রোগীর হাতের ১০টি আঙুলের ডগার নরম অংশে ছোট ক্ষত করতে হবে। এমনভাবে করুন যাতে প্রতিটি আঙুল থেকে রক্তপাত হয়। এ কাজটি করার জন্য কোন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। শুধু খেয়াল রাখুন আঙুল থেকে যেন যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত ঝরে। এরপর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন, দেখবেন রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।

৬। যদি আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ বিকৃত বা বেঁকে হয়ে যায়, তাহলে তার কানে ম্যাসেজ করতে হবে। এমনভাবে ম্যাসেজ করতে হবে যাতে রোগীর কান লাল হয়ে যায়। লাল হলে বুঝতে হবে কানে রক্ত পৌঁছেছে।

৭। এরপর দুই কান থেকে দুই ফোঁটা রক্ত পড়ার জন্য কানের নরম অংশে সুচ ফুঁটাতে হবে। কয়েক মিনিট পর দেখবেন মুখ ঠিক হয়ে গেছে।

৮। রোগীকে গরম স্থান থেকে সরিয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশে আনতে হবে। সম্ভব হলে এয়ারকন্ডিশনও ঘরে রাখতে হবে। যেকোনো উপায়ে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। পুরো শরীর পানি দিয়ে মুছতে হবে। সে সঙ্গে ঘরে ফ্যান ছেড়ে রাখা দরকার। 

 

এরপর রোগী মোটামুটি স্বাভাবিক হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসার এই পদ্ধতিকে বলা হয় রক্তক্ষয় পদ্ধতি। চিকিৎসার অংশ হিসেবে প্রথাগতভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে আসছে। এই পদ্ধতির ব্যবহারিক প্রয়োগ শতভাগ কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ