Skip to content

৮ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বায়োস্কোপ, হারিয়ে যাওয়া এক শিল্প

বায়োস্কোপ! যাকে বলা হয় বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম পর্যায়। 'জাদুর বাক্স' বলেও ছিলো এর সুপরিচিতি। মূলত ছবির মাধ্যমে একটি কাহিনী বর্ণনা করে গল্প বলাই ছিলো বায়োস্কোপ ও তার কারিগরের কাজ। 

 

ইউরোপে এই বায়োস্কোপের জনপ্রিয়তা  ১৫ থেকে ১৭ শতাব্দীতে ব্যাপক বাড়তে থাকে । ১৮৯৪ সালের পর এর জনপ্রিয়তা এতটাই বাড়তে থাকে যে বিশ্বব্যাপী এর প্রদর্শনী শুরু হয়। আর এই বায়োস্কোপেই সাউন্ড ও ছবির মিল বন্ধনে পূর্ণ সিনেমার ধারণা আসে। তাই তো বায়োস্কোপকে চলচ্চিত্র আবিষ্কারের পূর্ব রূপ বলেও ধারণা করা হয়। 

বঙ্গভঙ্গেরও আগের কথা, বাংলায় তখন বায়োস্কোপকে  টকি বা টগিও বলা হতো। সেসময়ে স্টিফেন্স নামক এক বিদেশি বাংলায় প্রথম বায়োস্কোপ দেখান। ১৮৯৬ সালে একটি থিয়েটার দলের সঙ্গে স্টিফেন্স কলকাতায় এসেছিলেন। আর তখনই তিনি কিছু বিদেশি চিত্রের মাধ্যমে কলকাতায় প্রথম দেখিয়ে যান বায়োস্কোপ। তারপর তার অনুপ্রেরণায় মানিকগঞ্জের হীরালাল সেন দুই বছর পর ১৮৯৮ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে বায়োস্কোপ দেখানো শুরু করেন। কোম্পানি খোলেন 'দ্য রয়েল বায়োস্কোপ কোম্পানি'  নামে। 

 

প্রথমে হীরালাল  বাংলার পথ ঘাট, নদী,  গঙ্গার ঘাট বিভিন্ন মন্দিরের চিত্র সংগ্রহ করে তা বায়োস্কোপ দেখাতেন। তারপর হীরালাল তখনকার থিয়েটার 'ক্লাসিক'র সাথে যুক্ত হয়ে থিয়েটারের নাটক, নাচ, গান রেকর্ড করে তাই দেখাতেন। সেই থেকেই বলা যায় বাংলায় চলচ্চিত্রের সূচনা ঘটে। এমনকি পণ্যের বিজ্ঞাপনও শুরু হয় বায়োস্কোপের হাত ধরে। শুধু তাই নয়, সেসময় বাংলায় বঙ্গভঙ্গের জোয়ার উঠে। বাংলা মানুষ 'বন্দে মাতরম' স্লোগানে মিটিং মিছিলে জেগে উঠে। সেসব চিত্রও বায়োস্কোপে  প্রদর্শিত হত। যা আরো মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় ।

 

কিন্তু হীরালালের বায়োস্কোপ কোম্পানি শেষ পর্যন্ত টেকে নি। তবে ততদিনে বায়োস্কোপ সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার গ্রামে গঞ্জে, মেলায় তখন দেখা মিলতো বায়োস্কোপের। মানুষ দলে দলে ভিড় জমাতে বায়োস্কোপের চিত্র আর সুরের যাদুতে নানান বিষয়ে জানার জন্য। বঙ্গভঙ্গ থেকে শুরু করে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের গল্পও বায়োস্কোপের হাত ধরে মানুষের কাছে, নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছেছে বলা যায় । 

 

তবে কালের বিবর্তনে আজ বায়োস্কোপে চল নেই বললেই চলে। টিভি রেডিও রূপালী পর্দার মত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কার বায়োস্কোপকে বাংলার বুক থেকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে হয়তো। কিন্তু একসময়ের বিনোদন হোক, চলচ্চিত্র নির্মাণে সূত্রপাত, কিংবা দেশের ইতিহাস আন্দোলনকে মানুষের কাছে এনেছে এই বায়োস্কোপ। বর্তমানে এর রেশ হারিয়ে গেলেও এই বায়োস্কোপের বয়স প্রায় ১২৫ বছর পার করেছে। যার বহুবছর বাংলার বুকে বায়োস্কোপ দাপটের সাথে চলে এসেছিলো।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ