Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শসার গুণকীর্তন!

ছোটবেলায় বাবার বাজারের ব্যাগ চেক করে একটি মহা মূল্যবান সবজি খুঁজে নিয়েছি প্রায় আমরা সবাই। সবজিটি খেতে পছন্দ করে নাহ এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে এই সাধারণ সবজিটির যে এক রাশ গুণাবলি এ ব্যাপারে হয়তো আমরা তেমন অবগত নাও হতে পারি। তাই  আজকে সবুজ রঙের  মজাদার সবজি শসার গুণাবলি জানবো।

 

সারা বিশ্বে আবাদ হওয়ার দিক থেকে ৪ নম্বরে রয়েছে যে সবজিটি, সেটি হলো শসা। শসার রয়েছে হরেক গুণ। রূপচর্চা ও মেদ নিয়ন্ত্রণসহ নানা উপযোগিতা আছে এই সহজলভ্য সবজির। শসার হাজার গুণের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা।

ধরুন আপনি এমন কোথাও আছেন, যেখানে হাতের কাছে পানি নেই, কিন্তু শসা আছে। বড়সড় একটা শসা চিবিয়ে খেয়ে নিন। পিপাসা মিটে যাবে। আপনি হয়ে উঠবেন চনমনে। কারণ, শসার ৯০ শতাংশই পানি। কখনো কখনো আপনি শরীরের ভেতর-বাইরে প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভব করেন। দেহে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এ অবস্থায় একটি শসা খেয়ে নিন। এ ছাড়া সূর্যের তাপে ত্বকে জ্বালা অনুভব করলে শসা কেটে ত্বকে ঘষে নিন। নিশ্চিত ফল পাবেন।

শসার মধ্যে যে পানি থাকে তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা অদৃশ্য ঝাঁটার মতো কাজ করে। নিয়মিত শসা খাওয়ায় কিডনিতে সৃষ্ট পাথরও গলে যায়। প্রতিদিন আমাদের দেহে যেসব ভিটামিনের দরকার হয়, তার বেশির ভাগই শসার মধ্যে বিদ্যমান। ভিটামিন এ, বি ও সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি বাড়ায়। সবুজ শাক ও গাজরের সঙ্গে শসা পিষে রস করে খেলে এই তিন ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে।

 

শসায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সিলিকন আছে, যা ত্বকের পরিচর্যায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ জন্য ত্বকের পরিচর্যায় গোসলের সময় শসা ব্যবহার করা হয়। শসায় উচ্চমাত্রায় পানি ও নিম্নমাত্রার ক্যালরিযুক্ত উপাদান রয়েছে। ফলে যারা দেহের ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য শসা আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করবে। যারা ওজন কমাতে চান, তারা স্যুপ ও সালাদে বেশি বেশি শসা ব্যবহার করবেন। কাচা শসা চিবিয়ে খেলে তা হজমে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। নিয়মিত শসা খেলে দীর্ঘ মেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

 

সৌন্দর্যচর্চার অংশ হিসেবে অনেকে শসা গোল করে কেটে চোখের পাতায় বসিয়ে রাখেন। এতে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা যেমন অপসারিত হয়, তেমনি চোখের জ্যোতি বাড়াতেও কাজ করে। চোখের প্রদাহপ্রতিরোধক উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকায় ছানি পড়া ঠেকাতেও এটি কাজ করে।

শসায় সিকোইসোলারিসিরেসিনোল, ল্যারিসিরেসিনোল ও পিনোরেসিনোল এ তিনটি আয়ুর্বেদিক উপাদান আছে। জরায়ু, স্তন ও মূত্র-গ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমানোর সঙ্গে এই তিন উপাদানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দেয়, কোলেস্টেরল কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 

দুর্গন্ধযুক্ত সংক্রমণে আক্রান্ত মাড়ির চিকিৎসায় শসা দারুণ কাজ করে। গোল করে কাটা এক স্লাইস শসা জিহ্বার ওপরে রেখে সেটি ট্রাকিয়ার সঙ্গে চাপ দিয়ে আধা মিনিট রাখুন। শসার সাইটোকেমিক্যাল এর মধ্যে বিশেষ বিক্রিয়া ঘটিয়ে আপনার মুখের জীবাণু ধ্বংস করবে। সজীব হয়ে উঠবে আপনার নিঃশ্বাস। শসার মধ্যে যে খনিজ সিলিকা থাকে তা আমাদের চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে। এ ছাড়া শসার সালফার ও সিলিকা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা আছে। গাজরের রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে খেলে দেহের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নেমে আসে। এতে গেঁটেবাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকের মাথা ধরে। শরীর ম্যাজম্যাজ করে। শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও সুগার আছে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক স্লাইস শসা খেয়ে নিলে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর এ সমস্যা থাকবে না।শরীরের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক রাখে শসা। এতে কিডনি থাকে সুস্থ ও সতেজ।

 

গরমের সময়ে শসা খেতে যেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয় তেমনি শরীরের ভিতরে যথেষ্ট মিনারেল প্রবেশ হয় এই শসার মাধ্যমে। দেখতে সাধারণ একটি সবজি হলেও গুণের দিক থেকে শসা অনন্য।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ