Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহৎ পেশায় জালিয়াতি, আমরা যাবো কোথায়?

ডাক্তারি একটা মহান পেশা। কিন্তু জীবনরক্ষক এই পেশায় যদি জালিয়াতি ঢুকে যায়? তাহলে তা হয়ে ওঠে কাল। একটু সামান্য ভুলের কারণে একটি প্রাণও চলে যেতে পারে। কিন্তু খুবই দুঃখজনক ব্যাপার হল এই মহান পেশাতেও জালিয়াতি দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি ভুয়া সার্টিফিকেটধারী এক নারী ডাক্তারের সার্টিফিকেট জালিয়াতির বিষয় সামনে এসেছে। 

 

এই মহান পেশার সাথে জড়িত একজন হলেন ডা. ঈশিতা। দীর্ঘদিন এই পেশার সাথে জড়িত আছেন ও বেশ জ্ঞানী গবেষক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবেই তার পরিচিতি। ডাক্তার হিসেবে চিকিৎসাও দিয়েছেন অনেক রোগীকে। কিন্তু কিছুদিন আগে র‍্যাব ভুয়া সার্টিফিকেট এর সাথে জড়িত তার এক সহযোগীর সাথে তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর র‍্যাব যে তথ্য জানায় তা অবাক করে দেয় সবাইকে। চিকিৎসাশাস্ত্রে এমবিবিএস ছাড়া তার সব সনদই ভুয়া। তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে একজন আলোচক, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, গবেষক, পিএইচডি ডিগ্রিসম্পন্ন, মানবাধিকার কর্মী, সংগঠক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন বলে ভুয়া পরিচয় প্রদান করে আসছিলেন। এতদিন তিনি ভুয়া পরিচয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে ভুয়া নথিপত্র তৈরি ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।

 

নাম ইশরাত রফিক ঈশিতা। ময়মনসিংহের একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। জানা যায়, মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যোগদানও করেছিলেন। কিন্তু চাকরির চার মাস না যেতেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হন উচ্চাভিলাষী তরুণী। ডাক্তারি কোর্স করা থাকলেও তার অতি লোভ তাকে পিছু ছাড়েনা। পরিশ্রম করে ভালো কিছু অর্জনের চেয়ে তিনি বেছে নেন জালিয়াতির পথ। ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণাই তার মূল পেশা হয়ে দাঁড়ায়। কখনও আন্তর্জাতিক আবার কখনও দেশি সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয়ে প্রতারণা করতে শুরু করেন তিনি। এছাড়া তরুণ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষক, বিশিষ্ট আলোচক, ডিপ্লোম্যাট, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দিয়েও প্রতারণায় মেতে ওঠেন তিনি।  বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি এমপিএইচ, এমডি, ডিও তার সবই ভুয়া। ভুয়া ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তিনি প্রচার করতেন। বিভিন্ন সাইটে চিকিৎসা শাস্ত্রে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ, আর্টিকেল বা থিসিস পেপার প্রকাশনা করেছেন মর্মে প্রচার করতেন।  ঈশিতা নিজস্ব ভুয়া ডিগ্রী, পদ ও পদবী প্রচারণার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আইপি চ্যানেল ব্যবহার করতেন। 

 

করোনাকালেও থেমে থাকেনি তার প্রতারণা। তিন হাজার টাকার বিনিময়ে দুই দফায় ৬০ চিকিৎসককে তিনি সেমিনারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেন। শেষমেশ ধোপে টেকেনি তার বহুমুখী প্রতারণা। টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট দেয়া একটি বড় গ্রুপের সাথেও তিনি জড়িত। তিনি ‘ইয়ং ওয়ার্ল্ড লিডারস ফর হিউমিনিটি’ নামক একটি অনিবন্ধনকৃত ও অননুমোদিত সংগঠন পরিচালনা করতেন প্রতারণার জন্য। 

 

শুধু তাই নয়, তিনি প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া নথি উপস্থাপন করে ২০১৮ সালে জার্মানিতে ‘লিন্ডা ও নোবেল লরিয়েট মিট-মেডিসিনে’ অংশগ্রহণ করেন বলে প্রচারণা চালান। প্রচার করতেন- তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে অ্যাম্বাসেডর হিসেবে বিভিন্ন সংগঠন যথাক্রমে আমেরিকান সেক্সুয়াল হেলথ অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল সার্ভিক্যাল ক্যান্সার কোয়ালিশন এবং গ্লোবাল গুড উইল হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু র‌্যাবের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার এসব অ্যাওয়ার্ড ও অনুষ্ঠানে উপস্থিতির ছবি এডিটিং করে গণমাধ্যমে পাঠাতেন ও ভার্চুয়াল জগতে প্রচারণা চালাতেন। ঈশিতা প্রতারণার কৌশল হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর র‌্যাংক, ব্যাজ ও পদ অর্জনের চেষ্টা চালান। ফিলিপাইনে পরিচালিত একটি ওয়েবসাইট হতে ৪০০ ডলারের বিনিময়ে সামরিক বাহিনীর ন্যায় ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ পদটি গ্রহণ করেন।

 

একবার ভাবুন এই ভুয়া ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের কাছে একজন ক্যান্সার রোগী কি চিকিৎসাটাই পেত। একে দেশে ডাক্তারের সংকট, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংকট তার ওপর এসব ভুয়া সার্টিফিকেট ধারী। এভাবে একজন রোগী কিভাবে ভালো চিকিৎসা পাবে? তার দেয়া ভুল চিকিৎসা ক্রমেই রোগীকে সুস্থ করার পরিবর্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে। 

 

এর আগেও এরকম ভুয়া সার্টিফিকেটধারী ডাক্তার পাওয়া গিয়েছিলো যারা ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে ভা কোন সার্টিফিকেট ছাড়াই চিকিৎসা প্রদান করছিলো। সরকারকে এ ব্যাপারে আরো বেশি তৎপর হতে হবে। এসব সংস্থার সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মূল থেকে এর প্রতিকার না করলে একদিন দেশ এসব ভুয়া ডাক্তারে ভরে যাবে।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ