Skip to content

২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদেশি ব্যামো কাওয়াসাকি!

প্রতিটি সন্তান কে নিয়ে সকল মা বাবাই চিন্তিত থাকেন। মায়েদের মন সকল সময়েই চায় তার সন্তানটি যেন সুস্থ স্বাভাবিক থাকে। মায়েদের মন খারাপ হয়ে যায় তখনেই যখন সন্তানের শারীরিক অবনতি ঘটে। আর এটি যদি হয়ে থাকে কোন ব্যাধি তাহলে তো মা-বাবার চিন্তার যেন শেষ থাকে না। এমনই এক ভিন্নধর্মী রোগের ব্যাপারে আমরা জানবো আজ। রোগটি অনেক আগে আবিষ্কৃত হলেও আমরা সকলে ততোটা অবগত না ও হতে পারি।

 

১৯৬৭ সালে টোমিসাকু কাওয়াসাকি নামের শিশু বিশেষজ্ঞ সর্বপ্রথম ইংরেজি চিকিৎসা বিষয়ক রচনায় এই রোগের নাম উল্লেখ করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে কিছু শিশুর জ্বর, চামড়ায় দানা, চোখের প্রদাহ, ইনানথেম, হাত, পা ফোলা এবং  আছে। প্রথমে এই রোগকে মিউকোকিউটেনিয়াস লিস্ফ নোড সিনড্রোম বলা হতো। কয়েকবছর পরে হৃৎপিণ্ড জটিলতা যেমন করোনারী ধমনী এনিউরিজম উল্লেখিত হয়। কাওয়াসকি ডিজিজ একধরনের তীব্র রক্তনালীর প্রদাহ যার অর্থ রক্তনালীর প্রাচীন প্রদাহ যা পরবর্তীতে শরীরে মাঝারী ধমনীকে প্রসারিত করে। অধিকাংশ শিশুর হৃৎপিণ্ডের জটিলতা ব্যতীত অন্যান্য তীব্র উপসর্গগুলোই বেশী দেখা যায়।

 

কাওয়াসাকি ডিজিজ একটি বিরল রোগ। কাওয়াসাকি ডিজিজ পৃথিবীর সব দেশেই পাওয়া যায় যদিও জাপানে সবচেয়ে বেশী। রোগটি ৫ বছরের নীচের বাচ্চাদের হয়। সবচেয়ে বেশী হয় ১৮ থেকে ২৪ মাস বয়সে। ৩ মাসের নীচে বা পাঁচ বছরের উপরে এই রোগ সাধারণত হয় না কিন্তু হলে হৃৎপিণ্ডের ধমনী প্রসারণের ঝুঁকি বেশী থাকে। রোগটি মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বেশী হয়। যদিও কাওয়াসাকি ডিজিজ বছরে যেকোন সময়ই হতে পারে তবে শীতকালের শেষে এবং বসন্ত ঋতুতে এটা বেশী দেখা যায়। কাওয়াসাকি ডিজিজ এর কারণ অজানা, যদিও জীবাণু সংক্রমণের কারণে এটা হতে পারে। সম্ভবত জীবাণুর প্রতি অতি সংবেদনশীলতা বা রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার অকার্যকারিতার কারণে প্রদাহ শুরু হয়ে রক্তনালীর ক্ষতি হয়।

 

আমেরিকার পাবলিক হেলথ জরিপের মাধ্যমে জানানো হয়,"জিনগত ভূমিকা আছে ধারনা করা হলেও এটা জন্মগত রোগ নয়। পরিবারের একাধিক সদস্যের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এটা ছোঁয়াচে না এবং এক বাচ্চার থেকে অন্য বাচ্চার হয় না। একই রোগীর এই রোগ দ্বিতীয়বার হবার সম্ভাবনা প্রায় ক্ষীণ।

 

রোগটি হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ আগে থেকেই লক্ষ করা যায়।সঠিক সময়ে বিষয়টি আন্দাজ করে গেলে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হতে পারে। রোগটি সাধারণ জ্বর দিয়ে শুরু হয়। শিশু সাধারণত খুব খিটখিটে থাকে। জ্বরের সাথে বা পরে চোখের কনজিংটিভা সংক্রমণ  হতে পারে। শিশুর চামড়ায় বিভিন্ন ধরনের দানা হতে পারে। যেমন-হাম বা স্কারলেট ফিভার জাতীয়, চুলকানি, প্যাপিউল ইত্যাদি।

 

চামড়ার দানা প্রথমে শরীরে বা হাতে পায়ে এবং কখনো কখনো ডায়াপার পরানো স্থানে হতে পারে যা পরবর্তীতে লাল হয় এবং চামড়া উঠে যায়। মুখের পরিবর্তনের মধ্যে আছে উজ্জ্বল লাল, ফাটা ঠোঁট, লাল জিহ্বা এবং গলার ভিতর লাল হওয়া, হাত ও পা ও আক্রান্ত হতে পারে।হাত ও পায়ের আঙ্গুলে পানি জমে ফুলে যেতে পারে। পরবর্তীতে হাত ও পায়ের আঙ্গুলের মাথা থেকে চামড়া উঠে যেতে পারে। কখনো কখনো অন্যান্য উপসর্গ যেমন গিড়া ব্যথা এবং গিড়া ফোলা, পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা, খিটখিটে বা মাথা ব্যথা হতে পারে। যেসব দেশে বিসিজি টিকা দেয়া হয়, সেসব দেশে ছোট শিশুদের টিকার দাগের স্থানে লাল হতে দেখা যায়।

 

কাওয়াসাকি ডিজিজ এর সবচেয়ে মারাত্মক জটিলতা হল হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হওয়া। হৃৎপিণ্ডে রিদমে সমস্যা ও আলট্রাসনোগ্রামে অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে পারে। হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন স্তরে কিছু প্রদাহ হতে পারে। এখন পর্যন্ত এই রোগটি শতভাগ প্রতিরোধের কোন উপায় জানা নেই। অধিকাংশ শিশু ভালো হয়। তবে কিছু কিছু বাচ্চার সঠিক চিকিৎসা স্বত্বেও হৃৎপিণ্ডের সমস্যা হতে পারে। রোগটি প্রতিরোধ যোগ্য নয় তবে হৃৎপিণ্ডের জটিলতা কমনোর জন্য দ্রুত রোগ নির্ণয় ও মত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।

 

শিশু কাওয়াসকি ডিজিজে আক্রান্ত হলে বা সন্দেহ হলে হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পর্যালোচনা ও রোগীকে পর্যবেক্ষণের জন্য অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করা উচিৎ। হৃৎপিণ্ডের জটিলতা কমানোর জন্য রোগ নির্ণয়ের সাথে সাথেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। রোগটি সম্পর্কে সর্বোপরি তৎপর থাকার মাধ্যমেই মোকাবিলা করা সম্ভব। নতুবা মলিন হয়ে যেতে পারে একটি নিষ্পাপ হাসি। তবে সুস্থ থাকার মূলমন্ত্র প্রতিকারে নয় প্রতিরোধে।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ