Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিমি: একজন সিঙ্গেল মাদার

'সিঙ্গেল মাদার' এই শব্দটার সাথে কম বেশি আমরা সবাই পরিচিত।  তবে একজন সিঙ্গেল মাদার হয়ে উঠাটা বর্তমান ভারতবর্ষ বা বাংলাদেশের মত দেশে কতটা সহজ? সামাজিক দিক থেকে একেবারেই সহজ নয়। কারণ, সমাজ এখনো কোন নারীর একা মা হয়ে উঠাটাকে সহজ এবং সুন্দর ভাবে গ্রহণ করে না। আমি আপনি কি পারবো সাহস করে একজন সিঙ্গেল মাদার হয়ে উঠার সিদ্ধান্ত নিতে? পারবোনা নিশ্চয়ই।  তাও আবার বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াই। এ সমাজ রীতিমতো ছিঃ চিৎকার করে জীবনকে নরকের থেকেও খারাপ পর্যায়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু 'মিমি' পেরেছিল। 

 

'সারোগেসি' পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়ার এই প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেকেই অবগত। নিজের গর্ভে অন্যের সন্তান জন্ম দেওয়া যাকে বলে। ভাবছেন তো, কে মিমি? কেন সারোগেসি পদ্ধতি, সিঙ্গেল মাদার এসব বলে যাচ্ছি? 

 

লক্ষণ উতেকর পরিচালিত সিনেমা 'মিমি'। নেটফ্লিক্সে রীতিমতো সাড়া ফেলে দেওয়া এক সিনেমা। যেখানে দেখানো হয়  রাজস্থানের সবথেকে সুন্দরী মেয়ে মিমি। স্বপ্ন দেখে বলিউডের সুপার স্টার নায়িকা হবে। নায়িকা তো আর বললেই হওয়া যায় না। আর এমন মফস্বলের কোন সাধারণ মেয়ের জন্য তো তা আরো কঠিন। নানান পর্যায় অতিক্রম করার বিষয় আছে। টাকারও  প্রয়োজন আছে। 

 

আর এমন সময়ে এক বিদেশি দম্পতির কাছ থেকে  মিমির কাছে এলো সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রস্তাব । বিনিময়ে টাকা পাবেন ২০ লাখ। নানারকম মানসিক টানাপড়েন, টাকার প্রয়োজনীয়তা, নিজের স্বপ্ন সবদিক চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে মিমি রাজিও হল। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দিন গুনতে লাগলো।  কিন্তু মাঝপথেই অমাবস্যার মত নেমে এলো অন্ধকার।  সেই বিদেশি দম্পতি জানতে পারলো যে বাচ্চাটি জন্ম নেবে সে প্রতিবন্ধী হবে। এই শুনে তারা এই বাচ্চাকে নেবেন না বলে গর্ভপাত করার নির্দেশ দিয়ে বিদেশে চলে যান। 

 

কিন্তু একটা সাধারণ মেয়ে যে কিনা সারোগেসি কি তাই জানতো না এর আগে তার কাছে এত মাস ধরে নিজের গর্ভে লালন করা সন্তানকে মেরে ফেলা সহজ কথা? অন্যের সন্তান হলেও মা তো মিমি নিজে। তাই পারলো না মিমি। সমাজ, পরিবার সবকিছু ফেইস করে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান। ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠে মিমির সন্তান। সৌভাগ্যবশত জন্মের পর জানা যায়  প্রতিবন্ধী হওয়ার রিপোর্টটি ছিল ভুল রিপোর্ট। নিজের নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন, পাড়ার সবথেকে সুন্দর চেহারার, সুন্দর ফিগারের, সবথেকে সেরা ডান্সার সব স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে মিমি হয়ে উঠলো মা। 

 

আর একদিন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সন্তানের খোঁজ পেয়ে সেই বিদেশি দম্পতি ফিরে আসে নিজেদের সন্তানকে ফিরিয়ে নিতে।  আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দিকেও যায়। কেননা আইনত তো মিমি বাচ্চাটির কেউ নয়। কিন্তু প্রকৃত মাও কি মিমি নয়? নিজের গর্ভের সন্তান নিজের হাতে বড় করে তুললেন তাকে নিজের মাতৃত্বে রাখতে পারবে না? যারা সন্তানের কমতির কথা জেনে ফেলে চলে গেছে তারাই আজ সব? 

 

এমন সব চিত্র দিয়ে লক্ষণ উতেকর সাজিয়ে তুলেন সিনেমার গল্প। সিনেমায় রক্ষণশীল সমাজে একজন নারীর সিঙ্গেল মাদার হয়ে উঠার গল্প দেখানো হয়।  একইসাথে মায়া, ভালোবাসা, পরিবার আর সম্পর্কের মত পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর বিষয়গুলোকে সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরা হয়। 

 

সিনেমা কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে কৃতি শ্যানন। এছাড়াও  পঙ্কজ ত্রিপাঠি, সুপ্রিয়া পাঠক, মনোজ পাহওয়া, সাই তামহানকার। সিনেমাতে কৃতি চরিত্রকে ধারণ করার জন্য ১৫ কেজি ওজন বাড়ান। যেখানে গর্ভাবস্থায় এবং পরবর্তীতেও তার চরিত্রকে ভীষণ সত্য মনে হয়েছে। এমনকি পঙ্কজের দারুণ অভিনয় দক্ষতা সিনেমাটিকে হাস্যরসেও পরিপূর্ণ করেছে। বাকি প্রতিটি চরিত্রই নিঃসন্দেহে দর্শকদের মনকাড়া অভিনয় দিয়েছে। বিশেষ করে সাই তামহানকারের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও ভীষণ সাপোর্টিভ দৃশ্য সকলের মন কাড়বে।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ