Skip to content

৯ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ

আজ ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। সারা পৃথিবীতে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা; রোগনির্ণয়, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে প্রতিবছর এই দিনে হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ২০০৮ সালের এই দিনে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’। ২০১১ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ২৮ জুলাই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এবারের বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘হেপাটাইটিস – আর অপেক্ষা নয়’।

 

এ দিনটি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের আবিষ্কারক মার্কিন চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ব্লুমবার্গের জন্মদিন। এছাড়াও অধ্যাপক ব্লুমবার্গ ছিলেন হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধক টিকার আবিষ্কারক। এই টিকাটি সারা পৃথিবীতে অসংখ্য অজস্র মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, ঠেকিয়েছে লিভারের ক্যান্সার আরো অনেক মানুষের। কারণ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই, বিশেষ করে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয়, লিভার ক্যান্সারের প্রধানতম কারণই এই ভাইরাসটি। অথচ এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটির জন্য ব্লুমবার্গ কোন পেটেন্ট করেননি কখনই। এই মহান চিকিৎসা বিজ্ঞানীর জন্মদিনটিকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাই বেছে নিয়েছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস হিসেবে, যা সংস্থাটির অনুমোদিত আটটি মাত্র দিবসের অন্যতম।

 

হেপাটাইটিস হল যকৃতের এক প্রকার প্রদাহ। দু’প্রকারের হেপাটাইটিস রয়েছে- তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বেড়ে গেলে, পরবর্তীকালে তা থেকে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার হতে পারে। পাঁচ প্রকারের হেপাটাইটিস ভাইরাস হয়- হেপাটাইটিস এ ভাইরাস (এইচএভি), হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (এইচবিভি), হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (এইচসিভি), হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস (এইচডিভি) এবং হেপাটাইটিস ই-ভাইরাস (এইচইভি), সারা বিশ্ব জুড়ে হেপাটাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল এই ভাইরাসগুলো।  এসব রোগের মাঝে ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ মানুষ ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে প্রতি ৪ জনে ১ জন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। এই হেপাটাইটিস বি এবং সি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ তৈরি করে, দীর্ঘ সময় কখনো কখনো বছর বা দশক ধরে এর কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না এবং তারপরে এটাই লিভার ক্যান্সারের মূল কারণে পরিণত হয়। 

 

হেপাটাইটিস এক নীরব ঘাতক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে প্রায় ১ কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসাবে হেপাটাইটিসে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় দেশে। হেপাটাইটিস নিয়ে উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে সংক্রমিত ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানেন না যে তার শরীরে এই ভাইরাস আছে। লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জন্ডিস নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের শতকরা ৭৬ ভাগ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। বিশ্বে হেপাটাইটিস বি এবং সি একসঙ্গে মৃত্যুর সর্বাধিক সাধারণ কারণ হিসাবে পরিচিত। প্রতি বছর ১.৩ মিলিয়ন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তাঁদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত প্রায় ৮৫ লাখ। এর মধ্যে ৬ দশমিক ৩ শতাংশই ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী। এ ছাড়া ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে- দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ, মা থেকে সন্তানের দেহে এবং অনৈতিক মেলামেশার কারণে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা। 

 

করোনার কারণে সরাসরি কোন কর্মসূচি না থাকলেও লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটি এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার ভার্চুয়ালি নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ