অশ্রুপাতে মঙ্গল সাধন!
"দুই চোখের অই অশ্রুজলে
চাঁদের আলোও ঝড়ে পড়ে"
বিরহ, কলহ, অভিমান যাই বলুন নাহ কেন এগুলো থেকেই সৃষ্টি হয় কান্না। কান্না মানুষকে কিছু অতীত স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেও এর উপকারিতা অবাক করার মত।কান্না মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ যদি এর উপকারিতা সম্পর্কে জানা যায়।
কান্নাকাটিকে অনেকে বিড়ম্বনার বিষয় বলেই মনে করেন। যদিও বাস্তবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কান্না মন ও শরীর দুইয়ের জন্যই ভালো। মনোবিদরা জানাচ্ছেন, কান্না পেলে তা আটকানোর প্রয়োজন নেই বরং কেঁদে নেওয়াই ভালো। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
স্যাক্রেমেন্টোতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিলড্রেন্স হসপিটালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সেজ টিম্বারলিনের কথায়, দুঃখে হোক বা রাগে অথবা অনুরাগে কিংবা আনন্দে, আমাদের মনের স্বাভাবিক অবস্থার উপর একটা চাপ (স্ট্রেস) তৈরি হয়। যা হল বাড়তি চাপ। সেই বাড়তি চাপটা কমিয়ে ফেলাটাই তখন মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে আমাদের শরীরের। চোখের পানি শরীরের সেই বাড়তি চাপটা কমিয়ে ফেলে আমাদের স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁদলেই আমরা কিছুটা স্বাভাবিকতায় ফিরে আসি। সেই স্বাভাবিকতা যে শুধুই আমাদের শরীর আর মনের, তা-ই নয় ওই সময় স্বাভাবিকতায় ফিরে আসতে বেরিয়ে আসা চোখের পানিই চোখকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে, চোখকে ভিজিয়ে রেখে।
আমাদের শরীরের যে কোন অনুভূতির পেছনেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের হরমোনের ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া। তাই বিভিন্ন ধরনের হরমোনের নিঃসরণের জন্যই আমরা দুঃখ পেলে কাঁদি, আবেগে কাঁদি আবার আনন্দেও কেঁদে ফেলি। দুঃখ, আবেগ বা আনন্দে আমাদের শরীর ও মনে যে বাড়তি চাপটা তৈরি হয়, তা হয় মূলত বিভিন্ন ধরনের হরমোনের নিঃসরণের দরুন। তাই কান্না শরীরে সৃষ্টি হওয়া হরমোনের বাড়তি নিঃসরণকে শরীর থেকে বের করে দিয়ে শরীরে হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।
কান্নার সময় চোখের পানি আমাদের চোখের মণি আর চোখের পাতা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেয়। এটি আমাদের চোখকে পানিশূন্যতা থেকেও বাঁচায়। ফলে চোখ পরিষ্কার রাখতে আর দৃষ্টি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে কান্না।
চোখের পানিতে থাকে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস দূর করার উপাদান। রাস্তা-ঘাটে, বাসে-ট্রেনের ধুলো-বালি থেকে সারাদিনে চোখের ভেতর কত ময়লাই না জমা হয়। এগুলো থেকে নানা জীবাণু আমাদের চোখের বাসা বাঁধতে পারে। কিন্তু চোখের পানি এসব ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের জীবাণু ধ্বংসে খুবই কার্যকর। চোখের পানিতে থাকা আইসোজাইম মাত্র ৫-১০ মিনিটেই চোখের প্রায় ৯০-৯৫ ভাগ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারে।
কান্না মনের কষ্ট দূর রে মন হালকা করে থকে। আবেগপ্রবণ কান্নাতে এনডোরফিন নামক উপাদান নিঃসৃত হয় যা দুশ্চিন্তা দূর করে থাকে। তাই মন খারাপের সময় কাঁদুন, দেখবেন মন অনেকখানি ভাল হয়ে গেছে। বয়স্করা অনেক সময় কান্না চাপিয়ে রাখেন। কিন্তু কান্না আপনার মন সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই কান্নাকে চেপে না রেখে কেঁদে ফেলুন।
জীবনে চলার পথে ঘাত, প্রতিঘাত, জয়, পরাজয় লেগেই থাকে। এমত অবস্থায় প্রতিক্রিয়া হিসেবে কান্না খুব স্বাভাবিক ভাবে চলে আসে। মানব-মন সর্বদাই অবচেতন তার অনুরাগ অভিমানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য।কান্না থেকেই তবে যদি আসে সুখ, ক্ষণিক সময়ে কেঁদে নেওয়া হতে পারে জীবনের বড় সুন্দর মুহূর্ত।