Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা যাবে ভ্যানিলা

বর্তমান সময়ে প্লাস্টিক দূষণ অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নত দেশ থেকে অনুন্নত দেশ সবখানেই প্লাস্টিক ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্থলভাগ থেকে শুরু করে জল, কোথাও রেহাই নেই এই দূষণের হাত থেকে। ক্যারি ব্যাগ থেকে ওষুধের বোতল, খাদ্য পরিবেশনের পাত্র থেকে ফুলের টব — বিভিন্ন ক্ষেত্রে চটের ব্যাগ হোক কিংবা কাঁচের শিশি অথবা চীনেমাটির থালা কিংবা মাটির টব – এ সব কিছুরই বিকল্প হিসেব ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিক৷ 

 

তুলনামূলক সস্তা, বহনযোগ্য হওয়ার কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছ পলিমারে তৈরি সামগ্রী৷ এর ব্যবহার নিয়ে আপত্তি নেই, কিন্তু ব্যবহারের পর যেভাবে এগুলিকে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে, আপত্তি তাতেই৷ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থাকায় তারা ব্যবহার করা প্লাস্টিকের সামগ্রী যেখানে-সেখানে ফেলে দিচ্ছে৷ যেহেতু প্লাস্টিকের সামগ্রী মাটিতে মিশে যায় না, এর একাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়, তাই ক্রমশ তা বর্জ্য হিসেবে জমা হচ্ছে লোকালয়ের বুকে৷ আর তা থেকেই ছড়াচ্ছে দূষণ৷ ১৯৫০ সাল থেকে এখন অবধি মানুষ ৯ বিলিয়ন টন বা ৮১৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম প্লাস্টিক তৈরি করেছে। এর মাত্র ৯ শতাংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিন্তু বাকি প্লাস্টিক পোড়ানো যায়নি বা পুনর্ব্যবহার করা যায়নি। পলিমার সামগ্রী পুড়িয়ে ফেললে আরও বিপদ, হাইড্রোকার্বন হয়ে বাতাসে মিশে তা বাড়িয়ে দিচ্ছে দূষণের মাত্রা৷

 

এই সমস্ত প্লাস্টিক সামগ্রীর শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে সমুদ্র। যা প্রকৃতির জন্য রীতিমতো বিপদের। প্লাস্টিক আবর্জনার কারণে সামুদ্রিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপন্ন হচ্ছে; সেখানের অসহায় প্রাণীগুলো মৃত্যুবরণ করছে করুণভাবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সমুদ্রে বিচরণকারী কোন কোন পাখির পাকস্থলীর ৮০% জায়গা প্লাস্টিক বর্জ্যে দখল করতে পারে বা করে থাকে! এগুলো হজম হয় না, যার ফলে আস্তে আস্তে পাখিগুলো না খেতে পেরে করুণভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।

 

বিশ্বে এই বাড়তি প্লাস্টিক দূষণ সমস্যা নেয়ে গবেষণা করেছেন অনেক বিজ্ঞানী। তবে আশার আলো দেখিয়েছে একটি গবেষণাপত্র। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘গ্রিন কেমিস্ট্রি’-তে। বর্জ্য প্লাস্টিককে এই ভাবে মানুষের খুব কাজে লাগার পদার্থে বদলে ফেলে পরিবেশের বিষ হাল্কা করার জন্য গবেষকরা কাজে লাগিয়েছেন একটি বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে। যার নাম- ‘ই কোলি’। এর মাধ্যমে তৈরি করা যাবে সুগন্ধি ভ্যানিলা।

 

তারা দেখিয়েছেন, এই ব্যাকটেরিয়ার জিনে কিছু রদবদল ঘটিয়ে যদি তাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায়, তা হলে ই কোলি খুব সহজেই বাতাস থেকে টেনে নিতে পারে বর্জ্য প্লাস্টিকের বিষ। এর আগে অন্যান্য গবেষণায় জানা গিয়েছিল, প্লাস্টিক ক্ষয়ে গিয়ে দীর্ঘ সময় পরে টেরেফথ্যালিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। এই অ্যাসিড বিষাক্ত। ফলে, তা জল ও পরিবেশের পক্ষে হয়ে ওঠে আরও বিপজ্জনক।

 

এই টেরেফথ্যালিক অ্যাসিডকে মানুষের ব্যবহারযোগ্য কোনও পদার্থে এত দিন রূপান্তরিত করা সম্ভব হচ্ছিল না বলেই প্লাস্টিকের দূষণ অত্যন্ত চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১০ লক্ষ প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি হয়। এর মাত্র ১৪ শতাংশকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব আধুনিক প্রযুক্তিতে। বাকিটা জল ও পরিবেশকে দূষিত করে নানা ভাবে।

 

গবেষকরা দেখেছেন ই কোলি ব্যাকটেরিয়া ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক দিনে বিষাক্ত টেরেফথ্যালিক অ্যাসিডকে সুগন্ধি ভ্যানিলিনে বদলে দিতে পারে। যা ভ্যানিলার প্রধান উপাদান। বিশ্বে এখন ভ্যানিলা মূলত তৈরি করা হয় কয়লা বা খনিজ তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পাওয়া রাসায়নিক থেকে। প্রয়োজনের তুলনায় যা খুবই অপ্রতুল। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানিই এখন গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সভ্যতার। তার ব্যবহারও বন্ধের কথা ভাবা হচ্ছে। এতে প্লাস্টিক থেকে ভ্যানিলা তৈরির পদ্ধতিটি গ্রহণযোগ্য হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

 

বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার পলিথিন দূষণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ