Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মনের ঘরে করোনার প্রভাব

বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কারো একা হওয়ার কথা না। তবে স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হলেই দেহ ও মনের উপর রেখে যায় স্থায়ী কিংবা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব। করোনা আক্রান্তের ৭০ ভাগ মানুষই ঢাকায়। স্বভাবতই নানা নিয়ম কিংবা লকডাউন ঘোষণার পরেও জন-কোলাহল থামানো সম্ভব হচ্ছেনা। কিন্তু তবু জীবন তো আর স্বাভাবিক নয়। চাইলেই গলির মোড়ে নির্বিঘ্নে হেটে যাওয়া যায়না। রাতে দোকানপাট বন্ধ থাকে বিধায় নিস্তব্ধ শহর ভীষণ বিষণ্ণ মনে হয়। সকলে সতর্ক হয়ে শুধু ঘুরে বেড়ায়। যানবাহন ঠিকঠাক চলছেনা। ফলে মানুষকে একই জায়গায় ঘুরপাক খেতে হচ্ছে। 

 

অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। বিশেষত স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল, কলেজ বন্ধ। বন্ধুদের সাথে দেখা হয়না। চার দেয়ালের বাইরে যে জগতটা তার সাথে সংস্পর্শ কমে গেছে। কর্মক্ষেত্রে স্থবিরতা ডেকে এনেছে করোনা। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা টেনে আনছে মানসিক যন্ত্রণা ও অবসাদ। মনের ঘরে করোনার প্রভাব শুধুমাত্র ঘরে বসে থাকার মানদণ্ডে ভাবলে হবেনা। 

 

বিশাল একটি সময় ধরে অনেকে নিজেদের স্বাভাবিক কাজ চালাতে পারছেন না। ফলে তাদের রুটি রোজগারের জন্যে নানা পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে। এই অনিশ্চিত সময়গুলোতে সকলের মধ্যে অবসাদ চলে আসছে। বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি, কলহ এবং সহিংসতা। দীর্ঘদিন যোগাযোগহীনতা সৃষ্টি করছে দূরত্ব। যোগাযোগের মাধ্যমগুলো স্থবির বলে সৃষ্টি হচ্ছে চাঞ্চল্য। 

 

আমরা মুখে বলতে পছন্দ করি যে পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। যোগাযোগ মাধ্যম বা বিনোদনের এত এত মাধ্যম থাকতে কারো একাকীত্ব বোধ করার কথা না। কিন্তু মানুষ এখনো সঙ্গ চায় এবং একসাথে থাকতে চায়। সেজন্যেই সকলের প্রিয়জন থাকে। অনুভূতি থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ কখনো যোগাযোগ ভালোভাবে করতে পারেনা। ইউটিউব বা অন্যান্য বিনোদনের মাধ্যমও একঘেয়ে হয়ে ওঠে। দিনের পর দিন একই ঘরে থাকতে থাকতে একসময় মানসিক একঘেয়েমি চলে আসাটা স্বাভাবিক। 

 

যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে উদ্বেগ কাজ করতে তেমনটাই স্বাভাবিক। আসন্ন সংকট মোকাবেলার জন্যে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণের আগে উদ্বেগ হওয়াটা উচিত। কিন্তু আমরা এখন বাঁচতে শুরু করেছি না জানার মধ্যে। এই কনফিউশনের মধ্যেই আমরা ভাবি ‘এখন আর করোনা ছড়াবে না’ ‘সবার একবার হয়ে গেছে, আর হবেনা।’ ‘হইলে হবে, তাও বাইরে ঘুরাঘুরি করব।’ এছাড়াও আরো অনেক ভাবনাই প্রতিনিয়ত আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে চলছে। 

 

এছাড়া সরকার ও নীতিনির্ধারকদের অনেক সিদ্ধান্ত আমাদের মধ্যে সংকট বাড়াচ্ছে। এসকল সংকট আমরা কোনোমতেই উত্তরণের পথ খুঁজে পাচ্ছিনা। ফলে মানসিক অবসাদ বাড়তে শুরু করেছে। সবার মধ্যে এক ধরণের একঘেয়েমি ভাব চলে এসেছে। এই সময়ে আপাতত কিছু করার নেই মনে হলেও আদপে তা কিন্তু নয়। 

 

মূলত পরিস্থিতি সম্পর্কে গুজব বা ভুল তথ্য গ্রহণ করার প্রক্রিয়া থেকে আমাদের বের হতে হবে। চেষ্টা করতে হবে নিজের পরিবারের সাথে বেশি বেশি যোগাযোগ করা এবং স্বাভাবিক পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা। মানুষ মূলত কল্পনাপ্রবণ। তাই নিজেদের চারপাশে সুন্দর কিছু গড়ে তোলা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নেয়া ছাড়া আপাতত কোন উপায়ান্তর নেই। তবু নিজের মনকে বোঝার জন্যে মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার অভ্যাসটুকু চালু হওয়া উচিত।

 

একঘেয়েমি থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে নিজেদের। নাহলে মনের ঘরে করোনা ভয়ংকর প্রভাব রেখে যেতে বাধ্য।
 

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ