শুভ জন্মদিন ‘জননী সাহসিকা’!
বাংলাদেশের নারী জাগরণের অন্যতম এক অগ্রদূত কবি সুফিয়া কামাল। যিনি ছিলেন বাংলা ভাষার একজন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক। আজ ২০ জুন বিশিষ্ট এই নারীর ১১০ তম জন্মদিন।
সুফিয়া কামাল আজীবন মানবতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে ছিলেন। মুক্তবুদ্ধির চর্চার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা ও অন্যায়, দুর্নীতি ও অমানবিকতার বিপক্ষে একজন সোচ্চার সমাজসেবী ও নারী নেত্রী ছিলেন তিনি। তৎকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন ।
১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে একটি অভিজাত পরিবারে সুফিয়া কামাল জন্মগ্রহণ করেন। আজ থেকে ১১০ বছর আগের সেই সময়টাতে নারী শিক্ষা, বাইরের জগতে নারীর বিচরণ কিছুই এতো সহজ ছিলোনা। তার পরিবারও ছিলো সমাজের সেই স্রোতর তালেই। তার পরিবারে সেইসময় নারী শিক্ষাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হতো না। তবে সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে তিনি হয়েছেন নারী জাগরণের অন্যতম এক পথিকৃৎ।
সুফিয়া কামাল তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। সাহিত্যে তার সৃজনশীলতা ছিল অবিস্মরণীয়। শিশুতোষ রচনা সহ দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ সংস্কার এবং নারী মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখা আজও প্রতিটি পাঠককে অনুপ্রাণিত করে।
প্রভৃতি। এছাড়াও গল্পগ্রন্থ 'কেয়ার কাটা', ভ্রমণকাহিনী 'সোভিয়েত দিনগুলি', স্মৃতিকথা 'একাত্তরের ডায়েরি' তার রচিত উল্লেখযোগ্য কিছু রচনা ।
কবি সুফিয়া কামাল নারীবাদী নেত্রী হিসেবেও ব্যাপক পরিচিত। তিনি ১৯৫৬ সালে 'কচিকাঁচার মেলা' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬১ সালে ছায়ানটের সভাপতি, ১৯৬৯ সালে গণ-আন্দোলনের সময় মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি, ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ গঠন ও ঐ সময় অসহযোগ আন্দোলনে নারী সমাজের নেতৃত্ব দেন।
সাহিত্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য কবি সুফিয়া কামাল প্রায় ৫০ টি পুরষ্কার লাভ করেন। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার (১৯৬২),লেনিন পদক (১৯৭০, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে), একুশে পদক (১৯৭৬), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯৫) ও স্বাধীনতা দিবস পদক। বাংলার মানুষ তাকে 'জননী সাহসিকা ' উপাধিতে ভূষিত করেছে।
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকার কবি সুফিয়া কামালকে 'তমসা-ই-ইমতিয়াজ' পুরষ্কার দেওয়ার ঘোষণা দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর এই মহীয়সী নারী ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন । তবে বাঙালির হৃদয়ে তিনি আজও চিরস্মরণীয়।