‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ কতটা নারীবান্ধব?
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবথেকে বড় উপায় হল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। আর তাই এই মহামারীতে বিভিন্ন অফিস 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' কনসেপ্ট চালু করেছে। এতে করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও যেমন হচ্ছে আবার একইসাথে কাজেরও তেমন কোন ব্যাঘাত ঘটছেনা। আবার 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' অনেকের কাছে স্বস্তির ব্যাপারও বটে। তবে এ তালিকায় পুরুষের সংখ্যাই বেশি। একজন নারীর 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' ততোটা সহজ নয়।
একজন কর্মজীবী নারীকে ঠিক দশভুজার মতো করেই সবটা সামলাতে হয়। একজন গৃহিণী যখন সারাদিন আস্তে ধীরে সংসারের কাজকর্ম গুছিয়ে সন্ধ্যায় সোফায় বসে আরাম করে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখে, ঠিক তখন সারাদিন অফিসের কাজ করে ঘরে ঢুকে একজন কর্মজীবী নারী। তারপর আবার লেগে পরে সংসারের কাজে। কাজ করতে করতে প্রায়শই হয়ে যায় গভীর রাত।
আবার একজন গৃহিণী সকালে একটু দেরীতে ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করতে পারে কারণ তার হাতে রয়েছে গোটা একটা দিন। কিন্তু অপরপক্ষে একজন কর্মজীবী নারীকে সকাল সকাল উঠেই ঘরের কাজ সামলে ছুটতে হয় কর্মক্ষেত্রে। আর আমাদের সমাজে কর্মজীবী নারীদের নেহাত কম হেনস্তা হতে হয় না। পরিবার, সমাজ, আত্মীয়স্বজন সকলের কাছেই কোন না কোন কারণে কথা শুনতে হয় তাদের।
আর অফিসের কাজটা যখন হয় ঘরে থেকে তখন এই পারিপার্শ্বিক চাপটা যেন নারীদের ওপর আরো বেশি করে পরে। একজন পুরুষ যখন বাসায় বসে অফিসের কাজ করে তখন তার সামনে অফিসের মতোই চা চলে আসে। ঘরে কোন বাচ্চা থাকলে তাকে আটকে রাখার দায়িত্ব থাকে মায়ের কাছে। খাওয়াদাওয়া সেরে নিশ্চিন্তে আরামে বসে অফিসের কাজ করেন একজন পুরুষ।
কিন্তু একই কাজ নারীর বেলায় হয়ে ওঠে বেশ কষ্টসাধ্য। তাকে কাজে বসার আগে নিশ্চিত করতে হয় সাংসারিক সকল কাজকর্ম ঠিকঠাক হয়েছে কিনা। আর যদি সেই কর্মজীবী নারীর থাকে ছোট্ট একটি বাচ্চা তাহলে তো কাজ হয়ে ওঠে আরো কষ্টকর। বাবার কাজের বেলায় সন্তানকে মা আগলে রাখলেও, মায়ের কাজের বেলায় সন্তানকে আগলে রাখবে এমন চিত্র একদমই নগণ্য। বরং তখন পরিবারের বাকি সদস্যদের কাছে সেটি হয়ে উঠবে বিরক্তির কারণ।
শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে বাচ্চার উপরও পরতে পারে মানসিক চাপ। এমনকি বাচ্চা খুব কম সময়ে হয়ে উঠতে পারে খিটখিটে। আর অন্যদিকে মা নিজেও ঠিক মন দিয়ে কাজ করতে পারবেন না একদমই। এতে যেমন তার পরিবার প্রভাবিত হবে পাশাপাশি কর্মজীবনও প্রভাবিত হবে। আবার একজন নারী যখন ঘরে বসে দিনভর ল্যাপটপ সামনে নিয়ে কাজ করবে তখন পরিবারের সকলের কাছে বেশ অস্বাভাবিকই মনে হবে। ঘরের বউ ঘরের কাজ ছেড়ে সারাদিন ল্যাপটপে মুখ গুঁজে আছে এ কথা শুধু পরিবারেই নয় চর্চা হবে এলাকার আশেপাশের ঘরগুলোতেই।
তাই বলে এতোসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েও পিছিয়ে আসছেন না নারীরা। দশ হাত দিয়ে নারী সমানতালে সামলাচ্ছে পুরোটা। আর নারীদের সমানতালে এগিয়ে যেতে হলে সবার আগে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে। তার কাজের জন্য তাকে তিরস্কার নয় বরং উৎসাহ প্রদান করতে হবে।