চীনের নারীদের কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা
সম্প্রতি চীনে আশংকাজনক হারে সন্তান জন্মদানের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছিলো। যার ফলস্বরূপ চীনের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। যার প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছিল চীনের দুই সন্তান নীতিকে। তাই দেশটিতে দুই সন্তান নীতির পরিবর্তন করে তিন সন্তান নীতি চালু করা হয়।
তবে এই নীতি চালু হওয়ার পর শুরু হয় নারীদের কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ। কারণ চীনে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য আগে থেকেই অনেকটা প্রকট। এর কারণ চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। গবেষণা, উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই চীন এখন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী একটি দেশ। অর্থনীতির দিক থেকেও অনেকটা এগিয়ে চীন। আর যার জন্য দেশটির সাধারণ মানুষের অবদানও নেহাত কম নয়। এ সফলতার পেছনে রয়েছে তাদের বাড়তি কর্মঘন্টা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় দেশটিতে সপ্তাহে মাত্র এক দিন ছুটি মিলে অর্থাৎ সপ্তাহের ছয় দিন কাজ করতে হয়। আর সময় থাকে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা। আর এ সময় ম্যানেজ করে নারীদের পক্ষে কাজ করা অনেক দুঃসহ হয়ে পরে। এছাড়াও অনেক কাজের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষও নারীদের কাজ দিতে চাননা। নারীদের কাজ দিতে না চাওয়ার প্রধান কারণ হয় মাতৃত্বকালীন ছুটি, কিংবা ছোটোবাচ্চা থাকা। বলা হয়, যেসব নারীদের বাচ্চা আছে কর্মবাজারে তাদের চাহিদা বাকিদের তুলনায় কম।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপের পরিসংখ্যানে ২০০৮ সালে ১৫৬ দেশের মধ্যে চীনের অবস্থান ছিল ৫৭ তম। মাত্র ১২ বছরে চীনের অবস্থান ৫০ ধাপ পিছিয়ে আসে। ২০২০ সালে একই পরিসংখ্যানে চীনের অবস্থান হয় ১০৭। এ থেকে বোঝা যায় চীনে লিঙ্গ বৈষম্য গত কয়েকবছরে কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে৷ আর এ অবস্থায় তিন সন্তান নীতি চালু করায় লিঙ্গ বৈষম্য আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদন বলছে, সম্প্রতি চীনে অনেক নারী চাকরি গ্রহণ ও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। চীনে চাকরিদাতারা কোন নারী প্রার্থীকে প্রথমেই প্রশ্ন করেন তার ছোট কোন সন্তান আছে কিনা কিংবা সন্তান গ্রহণ নিয়ে চাকরি প্রার্থীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। এর কারণ চাকরিদাতার মনে সংশয় মা হওয়ার পর উক্ত নারী চাকরি ছেড়ে দেবেন কি না কিংবা কতদিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি দরকার হতে পারে।
এছাড়াও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের প্রতিবেদনে আরো বলেন, চাকরিদাতারা নারী প্রার্থীদের থেকে জানতে চান চাকরির বাহিরে গিয়ে তিনি পরিবারে কতটুকু সময় ব্যয় করবেন। আর সকল বিবেচনা শেষে অবিবাহিত নারীদের বিবাহিত নারীদের তুলনায় চাকরি পাওয়ার সংখ্যাই বেশি। এসব দিক তুলে ধরে সম্প্রতি চীনের তিন সন্তান নীতি গ্রহণের ফলে নারীর কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার হার আরো কমবে বলে আশংকা করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালের পর থেকেই চীনে উল্লেখযোগ্য হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমতে থাকে। আর তাই তাদের এক সন্তান নীতি পরিবর্তন করে ২০১৫ সালে চীনে দুই সন্তান নীতি চালু করা হয়। তবে সম্প্রতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আরও কমায় তিন সন্তান নীতি চালু করা হয়।