Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মিথিলের বিশ্বরেকর্ড

– দৃশ্যটি সাজিয়া আফরিন সুলতানা মিথিল নামক এক বাংলাদেশী তরুণীর একটি এক্সপেরিমেন্টের, যার মাধ্যমে তিনি করেছেন এক বিশ্বরেকর্ড। 

 

কোহিনূর ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডসের ‘ইন্ডিভিজুয়াল ও এক্সট্রাঅরডিনারি’ ক্যাটাগরিতে তিনি এই বিশ্বরেকর্ডটি করেছেন। বাংলাদেশী হিসেবে তিনিই প্রথম নারী যিনি ইনডিভিজুয়ালি কোন বিশ্বরেকর্ড করেছেন।

 

তার চ্যালেঞ্জ ছিল টুথপেস্ট, ব্রাশ ও আরো কিছু রাসায়নিক সামগ্রী ছিল দিয়ে ব্রাশিং করা ও বুদবুদ সৃষ্টি করা। কেবল বুদবুদ সৃষ্টি করাই নয়, তা হতে হবে দীর্ঘতম সময়ে। এই পরীক্ষাটি করার সময় দ্রব্যগুলি নাড়াচাড়ার কারণে তীব্র ও বিদঘুটে গন্ধ তৈরি হয়। এই পরীক্ষাটি হাতে ধরে করেছিলেন তিনি। একটু নড়লেই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে সকল পরিশ্রম। তাই পুরো সময় একভাবেই বসে থাকতে হয় তাকে। একভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকাটা মোটেও সহজ কাজ নয়। অসহ্য এই পরিস্থিতিতে তিনি একবার ভাবেন যে ‘শেষ করে দিবো নাকি!’ কিন্তু তাহলে তো চলবেনা। করতে হবে বিশ্বরেকর্ড। এভাবে দীর্ঘ ৬১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড ধরে তিনি চালিয়ে যান তার এই এক্সপেরিমেন্ট। যা ছিল দীর্ঘতম। 

 

সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মিথিলের বিশ্বরেকর্ড

 

এর আগে এই রেকর্ড ছিল মিকাইল নামক এক ইংরেজ এর। যার সময়কাল ছিল ৪৫ মিনিট। ১৬ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ব্যবধানে তিনি গড়েন এক নতুন বিশ্বরেকর্ড।

 

এই পরীক্ষাটি তিনি করেছিলেন ৫ মে, তার জন্মদিনের দিন। পরেরদিন পরীক্ষার এসব ডকুমেন্ট সাবমিট করেন। ১৭ মে কোহিনূর ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডসের কর্তৃপক্ষ এই ক্যাটাগরিতে মিথিলের নাম প্রকাশ করে। তার এই সফলতা কেবল একদিনের নয়। এর পিছনে আছে তার দীর্ঘ অধ্যবসায়। লকডাউনের শুরুর দিকে তিনি স্থির করেন এই বিশ্বরেকর্ড করার। লক্ষ্য স্থির করেই তিনি লেগে যান অনুশীলনে। দীর্ঘ দিন ধরে অনুশীলন ও ধৈর্যের মাধ্যমে তিনি এই সফলতার মুখ দেখেছেন। করেছেন বিশ্বরেকর্ড।

 

মিথিলের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইনোভেশন এন্ড এন্ট্রপ্রনারশিপ বিভাগে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে পড়ালেখা করছেন। স্কুলে থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশ আনসার এর ন্যাশনাল অ্যাথলেট ছিলেন। বিভিন্ন সংগঠনের সাথেও তিনি জড়িত। সবসময়ই সবার থেকে ভিন্ন কিছু করার চিন্তা করতেন তিনি। এর কারণে ছোট থেকেই মানুষের অনেক বুলিং এর শিকার হন। কখনো বন্ধুবান্ধব থেকে, আবার কখনো বা নিজ পরিবারের থেকেই। কিন্তু এসকল প্রতিবন্ধকতাকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। 

 

সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মিথিলের বিশ্বরেকর্ড

 

মিথিল বলেন, ‘আমি সবসময়ই আলাদা কিছু করতে চাইতাম। কখনো পারতাম, কখনো পারতামনা। কিন্তু এ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতো। হাসাহাসিও করতো। পরিবার ও বন্ধুরা ভাবতো আমি হয়তো পাগলামি করছি। তবে আমি ব্যাপারগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।’

 

এই সফলতার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে দেশকে আমি কিছু দিতে পারবো এটা আমি সবসময় চাইতাম। দেখা যায়, বাইরে বাংলাদেশের নামটা অনেকে জানেইনা। অনেকেই ভাবে বাংলাদেশ হয়তো ভারতের কোন প্রদেশ। তাই আমি সবসময় চাইতাম যাই করিনা কেন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে যেন উপস্থাপন করতে পারি।’

 

নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তাদের উপদেশ দেয়ার আমি কেউই না। নিজেই নিজেকে জানতে হবে। নিজেকেই নিজের উপদেষ্টা হতে হবে। নিজের আগ্রহ ও ভালো লাগার বিষয়টি বেছে নিয়ে সেই অনুযায়ী টার্গেট স্থির করে এগিয়ে চলতে হবে।’

 

সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মিথিলের বিশ্বরেকর্ড 

 

তিনি আরো বলেন, ‘নিজের সাথে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতার করতে হবে। আমরা সবাই অন্যজনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হই। তা না করে নিজের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়ে নিজের গুণ, দক্ষতা বের করে আনতে হবে। আগেরবার যা করেছি তার থেকে আরেকটু বেশি ভালো করার চেষ্টা করতে হবে। এর মাধ্যমে নিজেকে আরো উন্নত করা সম্ভব হবে। এভাবেই সফলতার শিখরে পৌঁছনো সম্ভব হবে।’

 

আরেকটি সুখবর হল, আন্তর্জাতিক সম্মাননা ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল সোশ্যাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ এর জন্য তিনি নমিনেট হয়েছেন। ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সামাজিক উদ্ভাবনীমূলক কাজের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে মিথিলসহ ১৫২ জনকে নমিনেশন দেয়া হয়েছে। আগামী ২৬ মে থেকে প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত বিজয়ীদের তালিকা।
 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ