শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাজের সর্বস্তরে নারীর অবাধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন তিনি। শুধু দেশজুড়ে নয় বিশ্বজুড়েও রয়েছে তাঁর অনেক প্রাপ্তি। এমনকি নাম লিখিয়েছেন বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায়ও। তবে এ সফলতার পথটা খুব একটা সহজ ছিলোনা তাঁর জন্য।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংসতম এক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তাঁর পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সকলকে হত্যা করে নরঘাতকরা। তবে সে যাত্রায় দেশের বাইরে থাকার কারণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোটো বোন শেখ রেহানা। নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশের মাটিতে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ।
সে বছর ১৪, ১৫, ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাঁকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এ সময় ঘাতকরা শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। তবে সকল বাঁধা অতিক্রম করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশ ফিরেন তিনি।
সেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে উৎফুল্ল পরিবেশ তৈরি হয় রাজধানী ঢাকায়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহরে চলে মিছিল আর স্লোগান। লাখো জনতার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, 'শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম। হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, পিতৃ হত্যার বদলা নেব।' এমনকি সেদিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াও রুখতে পারেনি লাখো মানুষের সেই ঢলকে।
সেদিন সেই জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’
এরপরই শুরু হয় তাঁর জীবনের নতুন এক অধ্যায়। বাংলাদেশের হয়ে, বাংলার মানুষের হয়ে চালিয়ে যান দীর্ঘ সংগ্রাম। সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে দীর্ঘ ১৬ বছরের সংগ্রাম। এমনকি জেল-জুলুম, যেকোনো অত্যাচারসহ কোন বাঁধায় দমে যাননি তিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর পার করেন দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবন। তাঁর হাত ধরে বাংলায় স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে, গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে, সর্বোপরি বাংলাদেশ এক আত্মমর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে৷
টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনা করে চলেছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে দারিদ্র্য জর্জরিত সেই বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েছে কয়েক হাজারগুন আগে। এমনকি নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। যার জন্য তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন পুরো বিশ্বজুড়ে।
প্রতিবছর জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দেশ জুড়ে নানা কর্মসূচী পালিত হলেও এবছর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দিবসটি পালন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং বিকেল ৩টায় মহানগর নাট্য মঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সারাদেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে।
এছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে ‘শেখ হাসিনার চার দশক: বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রদর্শনী চলবে ১৬ ও ১৭ মে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বত্রিশ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে। এ আয়োজন করেছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি।