Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্টিয়ারিং হাতে এক তরুণীর হার না মানা লড়াই

ছোট্ট একটি ভাইরাস পুরো বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ঘরবন্দী করেছে প্রায় সকলকে, ঠিক তখনও অসহায়  মানুষের পাশে ঢাল-তলোয়ারহীন যোদ্ধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকে। তেমনি এক যোদ্ধা পশ্চিমবঙ্গের তরুণী, অ্যাপ-ক্যাব চালক টগরী শীল। গাড়ির স্টিয়ারিং হাতেই তার যুদ্ধ। 

ডাক আসার সাথে সাথেই পৌঁছে যান গন্তব্যস্থলে। এরপর অসুস্থ মানুষজনকে বা তাদের আত্মীয়-পরিজনকে অল্প সময়ের মধ্যে সবাইকেই গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন।  গত ১৫ দিন যাবৎ টগরীর প্রাত্যহিক রুটিনই এমনই । হেল্পলাইন নম্বরে ফোন পাওয়া মাত্রই বেরিয়ে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। এমনকি  বিশেষ এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপাতত তিনি বন্ধ রেখেছেন অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার হয়ে গাড়ি চালানোর কাজ।

কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকার এক বৃদ্ধ অটোচালকের মেয়ে টগরী। বয়সের ভারে তার বৃদ্ধ বাবা এখন আর আগের মতো রোজ অটো নিয়ে বের হতে পারে না। তার মা একজন গৃহিনী৷ গাড়ি চালানো শিখেছেন বছর তিনেক আগে। সম্প্রতি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এক প্রকার ভেঙে পরেছে বললেই চলে। ব্যর্থ হচ্ছে করোনা রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে।  হাসপাতালে সিটের অভাব, বাইরে এম্বুলেন্সের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। 

এমন পরিস্থিতে সিটু-অনুমোদিত অ্যাপ-ক্যাব চালকদের একটি সংগঠন সম্প্রতি শহরে অ্যাম্বুল্যান্সের অভাব মেটাতে রোগীদের পরিবহণে একটি বিশেষ পরিষেবা চালু করে। তাদের সেই ডাকেই স্বেচ্ছায় কাজ করার জন্য এগিয়ে আসেন টগরী।  শুধু টগরীই নয় মহান এই কাজে সেচ্ছাসেবী হিসেবে এগিয়ে এসেছেন আরো অনেকে।  

সিটু-র অ্যাপ-ক্যাব চালকদের সংগঠনের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঘোষ এ বিষয়ে বলেন, প্রতিটি গাড়িতে চালকের আসনের পিছনে প্লাস্টিকের পর্দা বসিয়েছেন তাঁরা। গাড়ি জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে নিয়মিত। যারা এই বিশেষ পরিস্থিতিতে কাজ করছেন, সেই সব চালককে পরপর দু’দিন কাজের পরে তিন-চার দিন বিশ্রাম দেন তাঁরা। যাতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়।

এর আগে লকডাউনে টগরী নিজের স্কুল ‘সনৎ রায়চৌধুরী ইনস্টিটিউশন ফর গার্লস’-এর প্রধান শিক্ষিকার অনুরোধে সকালের দিকে ছাত্রীদের পড়িয়েছেন । পরিস্থিতি আগের মতো হলে সেই কাজও চালিয়ে যেতে চান টগরী। আর করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধকে নিজের জীবন যুদ্ধ হিসেবেই দেখেন তিনি। 

করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে চারিদিকে যখন হাহাকার। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে মানুষের স্বার্থান্বেষী মনোভাবের ছড়াছড়ি।  তখন ২৬ বছর বয়সী টগরী প্রমাণ করে দিলো বয়স, লিঙ্গ এসব কেবলমাত্র অজুহাত, মানুষের পাশে দাঁড়াতে, এগিয়ে যেতে দরকার কেবল দৃঢ় মনোবল ও ইচ্ছেশক্তি।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ