বিশ্বজয়ে সঙ্গী হোক মা!
যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীতে সবথেকে নিরাপদ আশ্রয়, সবথেকে শান্তির জায়গা কোনটি?যেকেউ নিঃসন্দেহে চোখ বন্ধ করে এক সেকেন্ড বলে দেবে 'মা'।
আমাদের হয়তো মনে নেই, জন্মের কমাস আগেই অনেকের চাকুরীজীবী মা চাকরি ছেড়েছেন। সেই যে ছেড়েছেন গোটা জীবন হয়তো আর চাকরিটা জয়েন করেত পারেনি৷ সন্তানের সুস্থ, সুন্দর জীবন গড়ে দিতেই কাটিয়ে দিয়েছেন।
এরকমও হয়েছে নিশ্চয়ই, মায়ের খুব শখ ছিল সুন্দর কোন জায়গায় ঘুরতে যাবার। কিন্তু বাবার ঠিক সময় হয়নি, কিংবা সময় হলেও সংসারের বা সন্তানের কোন প্রয়োজন তখন ঘুরতে যাওয়ার থেকে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিংবা অনেকের হয়তো অকালে বাবার মৃত্যু হয়েছে আর সে সংসারের দায়িত্ব মা নিয়েছেন একা হাতে। সে সংসার সামলে সংসারের বাইরের দুনিয়াটাকে দেখার স্বাদ হয়তো মা ভুলেই গেছেন। আমাদের মত রক্ষণশীল সমাজে এমনে করেই আটপৌরে ভাবে মায়েদের গোটা জীবন কেটে যায়। আর একদিন এসব সংগ্রামী মায়েদের সন্তানেরা বড় হয়, প্রতিষ্ঠিত হয়। আর সেই প্রতিষ্ঠিত জীবনে মাকে বিশ্ব না হোক মায়ের প্রিয় কোন স্থান ঘুরিয়ে আনা, দেখিয়ে আনা তো সন্তানেরই দায়িত্ব।
আর এমন চিত্র এখন প্রায় দেখাও যায়। বিভিন্ন নিউজ মাধ্যমে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন মাকে নিয়ে বিশ্বজয়ের নানা ছবি এবং অনেক গল্পও ভেসে বেড়ায় প্রায়শই। এইতো গত বছরের ঘটনা, ২০১৮ তে যাত্রা শুরু করে স্কুটারে করে মাকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন ভারতের এক যুবক। সেজন্য হারিয়েছেন নিজের চাকরি। গত বছর মার্চেই ৫৪,১০২ কিলোমিটার রাস্তা পরিক্রম করে মা-ছেলে স্কুটারেই ঘুরে ফেলেছেন কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, কেরালা, পন্ডিচেরি, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, সিকিম, অসম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা। দেশের বাইরে নেপাল, ভুটান হয়ে মায়ানমার। এরমধ্যেই করোনার প্রকোপ দেখা দিলে পশ্চিমবঙ্গে লকডাউনে আটকে যান। পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে নিজ বাসস্থানে ফেরেন।
বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিশ্ব পরিব্রাজক নাজমুন নাহারকে কে না চেনে। ১৪০ টিরও বেশি দেশ ভ্রমণকারী এই নারী ১৪ টি দেশ ঘুরেছেন মাকে নিয়ে৷ বিশ্বের নানান দেশ ঘুরার সময় সুন্দর কোন স্থান দেখলেই যার মায়ের মুখ মনে আসতো। সেই অনুভূতি থেকেই মাকে নিয়েই বিশ্বজয়ের পথে নামেন নাজমুন নাহার। আর এই জার্নির একেকটা মুহূর্ত, একেকটা স্মৃতি আজীবনই অমূল্য।
শুধু বিশ্বের বড় বড় দেশ ঘুরালেই মায়ের স্বাদ পূরণ হবে এমনটাও নয়। সন্তানের ক্ষমতার উপর মায়েদের কখনো অতিরিক্ত চাহিদা থাকেনা। তাই নিজের সাধ্যের নাগালে নিজের শহরের সবকটা সুন্দর জায়গা, আশেপাশের ছোট ছোট শহরগুলো, কোন এক ছুটির দিনে মাকে নিয়ে বিদেশ ঘুরার স্বপ্নকে বুকে আগলেই ঘুরে আসা যায়।
এই যেমন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আফরিদা ইফরাত হিমিকা। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে যার একমাত্র আশ্রয় মা, যে মায়ের একমাত্র অবলম্বন। মায়ের আনন্দের জন্য, মাকে ভালো রাখতে, মাকে নিয়ে ঘুরেছেন দেশের বহু শহর। মায়ের হাত ধরে মা মেয়ে গিয়েছেন সমুদ্র দর্শনেও।
আর এদের মতই প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব হওয়া উচিত যে মা আমাদের পৃথিবীর আলো দেখান, সেই মাকে অন্তত একবার এই পৃথিবী ঘুরিয়ে দেখানো। হোক না অন্তত কটা শহর, হোক অল্প কটা দর্শনীয় স্থান, হোক নাহয় অন্তত একবার সমুদ্র কিংবা পাহাড় দেখানো। হোক না খুব সীমিত তাও হোক মায়ের সাথে একটা অধ্যায়।