Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মা দিবসের ইতিহাস

'মা', অতি ক্ষুদ্র একটি শব্দ। কিন্তু দেখতে ক্ষুদ্র হলেও নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শব্দ এটি। যার মধ্যে লুকিয়ে আছে অগাধ ভালোবাসা, মায়া-মমতা আরো কত কি। প্রত্যেক বছর মায়েদের বিশেষ সম্মান প্রদানের জন্য মে মাসের প্রথম রবিবার পালন করা হয় মা দিবস। মা দিবসের কথা আমাদের জানা থাকলেও, এই মা দিবসের সূচনা ঠিক কোথায় তা অনেকেরই অজানা।      

ইতিহাস খতিয়ে দেখা যায়,  মা দিবস পালনের সূচনা হয় সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রে। আমেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামে এক নারীর হাত ধরে এর সূচনা। ১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময় তখনকার উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে একটু শান্তির প্রত্যাশায় একটি ঘোষণাপত্র লিখেন দাস প্রথাবিরোধী, নারীবাদী ও নারীর ভোটাধিকার প্রত্যাশী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই। যে ঘোষণাপত্রটি 'মাদারস ডে প্রোক্লেমেশন' নামে পরিচিত ছিল।  

 

মা দিবসের ইতিহাস

এ ঘোষণায় ছিল রাজনৈতিক স্তরে, সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য । এছাড়াও ঘোষণাটি মায়েদেরকে শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি মাদার’স পিস ডে নামক একটি ছুটির দিন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সে যাত্রায় তিনি সফল হতে পারেননি।

সূচনাটি জুলিয়ার হাত ধরে আসলেও এর পরের পথটা তৈরি করেছেন আনা মেরি জার্ভিস নামের এক নারী। তার মা আনা রিভিজ জার্ভিস ছিলেন একজন মার্কিন সমাজকর্মী। গৃহযুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন  তারা মা-মেয়ে। এসময় তারা জুলিয়া ওয়ার্ড ঘোষিত মা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান।

 

মা দিবসের ইতিহাস

মায়ের মৃত্যুর পর আনা মেরি জার্ভিস মায়ের শান্তি কামনায় ও তার সম্মানে সরকারিভাবে মা দিবস পালনের জন্য প্রচারণা চালানো শুরু করেন। তার ঠিক তিন বছর পর ১৯০৮ সালের ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মা দিবস পালিত হয়। সে অনুষ্ঠানে আনা মেরি জার্ভিস তার মায়ের পছন্দের সাদা কারনেশন ফুল চার্চে উপস্থিত সব মায়েদের দু’টি করে উপহার দেন।

কিন্তু এটুকুতেই থামতে রাজি ছিলেননা আনা মারি জার্ভিস । এরপর ১৯১২ সালে তিনি স্থাপন করেন মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন। এসময় জার্ভিস মা দিবসকে ছুটির দিন করার লক্ষ্যে ও দিনটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে উঠে পরে লাগেন৷ তখন এ উদ্দেশ্যে ব্যাপক প্রচারণাও চালান তিনি। তার প্রচারণা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নয়  কানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরে।

 

মা দিবসের ইতিহাস

অতঃপর সাত বছরের অক্লান্ত চেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় মা দিবস। ১৯১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে মা দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। একই সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবসের পাশাপাশি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবেও ঘোষণা করেন।  এরপর থেকেই সরকারিভাবে মা দিবস পালিত হতে থাকে। 

কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই মা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে থাকে। দিনটি যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিক হয়ে ওঠে। মা দিবসে ফুল বিক্রি ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। আনা মারি জার্ভিস তখন লক্ষ্য করে, মা দিবস উদযাপনের আসল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে। এ ছুটির দিনটি শুভেচ্ছা কার্ড, চকলেট ও ফুল বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে।

 

মা দিবসের ইতিহাস

এরপর এ বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে তিনি তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেন। এ বিবাদে জড়িয়ে তিনি ১৯৪৪ সালের মধ্যে ৩৩টি মামলায় জড়িয়ে পড়েন। তার এ প্রতিবাদ থেমে থাকেনি এবং তিনি তার পুরো জীবন ও সঞ্চয় এ ছুটির দিনের বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ব্যয় করেছেন। 

তিনি বলেছিলেন, ‘মাকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর মানে নিজ হাতে তার জন্য দুই কলম লেখার সময় না হওয়া। চকলেট উপহার দেয়ার অর্থ হল- তা নিজেই খেয়ে ফেলা।’ তাই তিনি এ দিনটিতে মায়ের জন্য কিছু অর্থবহ করার অনুরোধ করেন। আজ আমরা ঘটা করে মা দিবস তো উদযাপন করছি কিন্তু এই দিবসটি প্রতিষ্ঠার কাণ্ডারি এই নারীর কথা বেশিরভাগেরই অজানা। আজ মা দিবসে প্রত্যেক মায়ের পাশাপাশি শুভেচ্ছা রইলো মা দিবস প্রতিষ্ঠার সেই কাণ্ডারিকেও।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ