Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালজয়ী প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ

বাংলার লেখালেখি নিয়ে কথা বলতে গেলে বহুমাত্রিক লেখকদের কথাই সবার আগে আসে। 'স্রোতের বিপরীতে হাঁটা' এমন একটা টার্ম আছে। অর্থাৎ সহজ করে যাকে বলে প্রথাবিরোধী। প্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে প্রথম কাতারেই নাম আসে লেখক হুমায়ুন আজাদের। আজ এই বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের জন্মদিন।  

 

কালজয়ী প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ

 

১৯৪৭ এর এই দিনে বিক্রমপুরের রাড়িখালে এই মহান ব্যক্তিত্বের জন্ম। পিতা আবদুর রাশেদ, মাতা জোবেদা খাতুন। তাঁর পূর্ব নাম ছিল হুমায়ুন কবির। ১৯৮৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি হুমায়ুন কবির নাম পরিবর্তন করে বর্তমান হুমায়ুন আজাদ নাম গ্রহণ করেন। 

 

কালজয়ী প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ

 

হুমায়ুন আজাদ পেশাগত জীবন শুরু করেন চট্টগ্রাম কলেজে যোগদানের মধ্য দিয়ে। পরে তিনি ১৯৭০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৭২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। 

 

কালজয়ী প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ

 

চিরকালই তিনি একজন প্রথাবিরোধী মানুষ ছিলেন। নিজের লেখনীতে বারবার সেটা প্রমাণ করেছেন। সমাজের ভুলেভরা কাঠামোতে আঘাত এনেছেন। সামাজিক হোক আর পারিবারিক কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রের যেকোনো অসঙ্গতিপূর্ণ কাজের বিরুদ্ধেই তিনি কথা বলছেন, লিখেছেন। কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়িতে কলম ধরেছেন। 

 

কালজয়ী প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ

 

বাংলা ভাষা-সাহিত্যে পুরাতন প্রথা ভেঙে নতুন করে গড়ে তুলতে চেয়েছেন এই কালজয়ী লেখক।  বিভিন্ন অনাচারের বিরুদ্ধে কবিতায় বা প্রবন্ধে বাক্যের, শব্দের শক্ত বন্ধন করেছেন। শুধু অন্যায় অনিয়মের কাছে আপোষ করেননি এই লেখক। এমনকি খুব ব্যতিক্রম নাহলে তিনি রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে  অংশগ্রহণ করতেন না। অন্যায় আপোষের বিরোধিতা করে গেছেন আজীবন। আর এখানেই তিনি হুমায়ুন আজাদ হিসেবে অনন্য হয়ে উঠেছেন। যার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই ছিল  হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে ও অকপটে অন্যায্য কথাটা  তুলে ধরে বিরোধিতা করা। যাকে সহজ ভাষায়, বাংলা প্রবাদে বলা যায়  ঠোঁট কাটা মানুষ।  

 

কালজয়ী প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ

 

গল্প , উপন্যাস, প্রবন্ধ বা কবিতা এসবের বাইরে সবার আগে এ লেখকের সাথে পরিচয় ঘটে একজন ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে।  বলা যায় তাঁর হাত ধরেই বাংলায় আধুনিক ভাষার সূত্রপাত।  ১৯৬০-এর দশকে,  হুমায়ুন আজাদ তখন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র। সে সময়  পশ্চিমের ভাষাবিজ্ঞানী চমিস্ক-উদ্ভাবিত ‘সৃষ্টিশীল রূপান্তরমূলক ব্যাকরণ’ (transformational-generative grammar-TGG) নামে একটি তত্ত্বটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে হুমায়ুন আজাদ এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য এ তত্ত্বের কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বাংলা ভাষার রূপ মূলতত্ত্ব তথা বাক্যতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন। এর মাধ্যমে বাংলার ভাষা বিষয়ক গবেষণায় আধুনিক ভাষা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সূত্রপাত হয়। ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে তাঁর মোট আটটি বই রয়েছে।  যেগুলো একেকটি বই বাংলা ভাষার মহা সম্পদ। 

 

কালজয়ী প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ

 

আশির দশকের শেষদিকে তিনি  বাংলাদেশের সমসাময়িক ও রাজনীতি নিয়ে গণমাধ্যমে  লিখতে শুরু করেন। সে সময় তিনি সাপ্তাহিক ‘খবরের কাগজ’ পত্রিকায় নিবন্ধ লিখতেন। 'আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন যা মূলত রাষ্ট্রযন্ত্রের ধারাবাহিক সমালোচনা। সামরিক শাসনের বিরোধিতা দিয়েই তাঁর রাজনৈতিক লেখালেখি শুরু হয়। 

 

কালজয়ী প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ

নব্বইয়ের দশকে তিনি নিজেকে একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।  ১৯৯২ সালে তিনি নারীবাদ নিয়ে " নারী"  শিরোনামে একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশ করে আলোড়ন সৃষ্টি করে দেন। 
এছাড়াও তিনি  তেরোটি উপন্যাস,  আটটি কিশোর সাহিত্যিক বই, এমনকি বাইশটি আলোচনা ও প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
কবিতার জগতেও ছিল তাঁর ব্যাপক দখল। খুব ছোটবেলা থেকেই কবিতা চর্চায় ছিল বেশ এগিয়ে। সেসময় ' দৈনিক ইত্তেফাক ' এর শিশুপাতা কচিকাঁচার আসরে তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয়। পরবর্তীতে যদিও ১০ টি কাব্যগ্রন্থই প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর কবিতার মূল  বিষয় ছিল সমসাময়িক কালের পরিব্যাপ্ত হতাশা, দ্রোহ, ঘৃণা ও প্রেম। 

 

কালজয়ী প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ

 

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আততায়ীদের হামলার স্বীকার হয়ে আহত হন এই কিংবদন্তী।  এরপরে সুস্থ হয়ে ফেলোশিপ পেয়ে জার্মান যান। সেখানেই ১২ আগস্ট মিউনিখ শহরে মৃত্যু হয় এই কালজয়ী লেখকের।সাহিত্যের সেকাল  থেকে একাল,  এমন বহুমাত্রিক প্রথাবিরোধী জনপ্রিয় লেখক আর দুজন মিলেনি। বাংলা সাহিত্যে হুমায়ুন আজাদের জন্ম দ্বিতীয় বার আর হয়নি।  এমন ক্ষণজন্মা ভাষাবিজ্ঞানী, গল্পকার, সাহিত্যিকের অভাব বাংলা সাহিত্যে হয়তো থেকে যাবে আজীবন।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ