Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা সংকটে নারী উদ্যোক্তাদের অবস্থা দুরহ

করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের নারী উদ্যোক্তাদের অবস্থা। ব্যবসায় চলছে মন্দা। নেই ব্যাংক ঋণ সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনা। করোনার কারণে দেশে নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত ৪১ শতাংশেরও বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসা পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ব্যবসা সংকুচিত করতে বাধ্য হয়েছেন কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের সাত দশমিক এক শতাংশ নারী উদ্যোক্তা।

 

অনেকেই বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা। দু’একজন টিকে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত এ লড়াইয়ে কতটা সফল হবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ব্যাংক ঋণে জটিলতা, আর্থিক প্রণোদনা না পাওয়া, তৈরিকৃত পণ্য বিক্রি না হওয়াসহ নানা কারণে ভালো নেই এসব ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা।

 

রংপুর নগরীর দর্শনা কলেজপাড়া এলাকার ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা লাইজুতুন জান্নাত। তিনি পাট থেকে পণ্য তৈরি করে বিক্রি করতেন। একটা সময় ২০০ জন শ্রমিক তার অধীনে কাজ করলেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে তা কমতে কমতে বর্তমানে ৩০/৪০ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। তৈরিকৃত মালামাল বিক্রি না হওয়ায় ঠিকমতো মজুরি দিতে পারছিলেন না তিনি শ্রমিকদের। ফলে ধীরে ধীরে কমতে থাকে উৎপাদন, কমতে থাকে শ্রমিক ও আয়। এক পর্যায়ে পুঁজি হারিয়ে এখন কোনোমতে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন লাইজুতুন জান্নাত। সরকারিভাবে আর্থিক প্রণোদনার কথা বলা হলেও তা জোটেনি তার কপালে।

 

লাইজুতুন জান্নাত বলেন, টাকার অভাবে সিজনের সময়ও কম দামে পাট কিনতে পারছি না। বড় মহাজনরা পাট কিনে স্টক করছেন। একটা সময় পাটের দাম বৃদ্ধি পেলে তখন আরও কেনা সম্ভব হবে না। সরকারিভাবে যে প্রণোদনার কথা বলে হয়েছিল তাও পাইনি। বাধ্য হয়ে এ পেশা গুটিয়ে নিতে হচ্ছে।

 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এর তথ্যমতে, মহামারিকালে দুই দশমিক নয় শতাংশ নারীকে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম তুলনামূলক ভাবে ছোট বা কম খরচ হয় এমন জায়গায় স্থানান্তর করতে হয়েছে। প্রায় ৪৪ দশমিক চার শতাংশ ভাড়া দিতে পারেননি। এ ছাড়া ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, তাদের পক্ষে কর ও অন্যান্য বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। সামাজিক সুরক্ষার অভাবে সার্বিকভাবে নারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হয়েছে বলে সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

 

ইউএন উইমেনের সহযোগিতায় গত বছরের অক্টোবরে দেশের আট বিভাগের ৩৪টি জেলার ৭০ জন নারী উদ্যোক্তার ওপর টেলিফোনের মাধ্যমে সমীক্ষাটি পরিচালনা করে সিপিডি। সমীক্ষায় কোভিড-১৯ বিষয়ক সরকারি আর্থিক উদ্যোগগুলোর জেন্ডার সংবেদশীলতা অনুসন্ধান করে নারীবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

 

সমীক্ষাতে আরো বলা হয়, প্রায় ৯৩ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা সরকার-ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার সিএমএসএমই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণের জন্য আবেদন করেননি। তাদের মধ্যে প্রায় ৫৮ দশমিক ছয় শতাংশ নারী এ প্যাকেজ সম্পর্কে জানতেনই না। এসবের কারণ হিসেবে তথ্যের ঘাটতি, প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রিতা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অসহযোগিতার মতো বেশকিছু বিষয় উঠে এসেছে। এ ছাড়া জরিপটিতে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই আয় কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ঋণের মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত তারা। অনেকেই জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো তাদেরকে পর্যাপ্ত ঋণ দিতে আগ্রহী নয়।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ