Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী উন্নয়নে এখনো অনেক বাধা

কোন দেশের উন্নয়নের জন্য নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে এ সময়কাল অবধি নারী-উন্নয়নের ধারাটি যদি লক্ষ করা যায় তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের নারীরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও আজও মানুষের ধ্যান-ধারণার তেমন পরিবর্তন হয়নি। এখনও সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে নারীদের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়।

অশিক্ষা, দারিদ্র্য আর কুসংস্কারে ডুবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর প্রথম বাধাটা আসে পরিবার থেকে। অভিধানে 'উন্নয়নে নারী বা নারী উন্নয়ন' একটি অতি আধুনিক সংযোজন। এই ধারণা বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে স্বীকার করে। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন দুটি বিষয়ই একটি অন্যটির পরিপূরক। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নারী উন্নয়ন বিষয়টি বিশেষ ভূমিকা রাখে।

নারী উন্নয়নের বাধার পথে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়, দারিদ্র্যের স্থান তার শীর্ষে। নারী উন্নয়নের প্রধান বাধাই হচ্ছে দরিদ্রতা। নারী উন্নয়নের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটি হচ্ছে নারী শিক্ষা ও নারীর প্রশিক্ষণ। শুধু শিক্ষা নয়, দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের নারীরা আরেকটি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে তারা; আর সেটা হল স্বাস্থ্য। এক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক বেশি পিছিয়ে আছে। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে নারী উন্নয়নের পথে আরেকটি বড় বাধা। পুরুষতন্ত্র উগ্র হয়ে উঠলেই এ সহিংসা দেখা দেয়। বাংলাদেশের পশ্চাৎপদ পুরুষতান্ত্রিক মুসলিম সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি দীর্ঘকাল ধরে অবহেলিত হয়ে আসছে। নারীরা যেমন ঘরে নিরাপদ নয় তেমনি বাইরেও নয়। কারণ নারীর প্রতি সহিংসতার হার বৃদ্ধিসহ নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে উত্ত্যক্তকরণ। এই নিগ্রহের ফলে সমাজে নারীর প্রতি প্রতিনিয়ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। উত্ত্যক্তকরণ বলতে একজন মানুষের প্রতি অপর একজনের অশালীন আচরণ বা অঙ্গভঙ্গিকে বোঝায়। উত্ত্যক্তের ঘটনা সাধারণত রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য স্থানে ঘটে থাকে। উত্ত্যক্তকরণ বিষয়টি আমাদের সমাজে নতুন না হলেও সম্প্রতি এটি বড় ধরনের রূপ ধারণ করেছে। ফলে স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, নারীর সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেই যেখানে নারীদের পদযাত্রায় বারবার হোঁচট খেতে হয়, সেখানে তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশের নারী হিসেবে বাঙালি নারীদের প্রতিটি পদক্ষেপে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। অশিক্ষা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নারী উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। অথচ সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারীরা আজ শুধু রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ নেই, নারীরা পৌঁছে গেছেন বিমানের ককপিট থেকে পর্বতশৃঙ্গে। দশভুজা নারী ঘরে-বাইরে নিজেকে আলোকিত করছেন নিজ প্রজ্ঞা আর মেধা দিয়ে। বর্তমানে এমন কোন পেশা নেই যেখানে নারীর মর্যাদাপূর্ণ উপস্থিতি নেই। দেশে এখন প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দু'জন নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী। বর্তমানে সবক্ষেত্রেই রয়েছে নারীর পদচারণা।

নারীর সমাধিকার ও নারীমুক্তির কথা যতই বলা হোক না কেন- উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল সব দেশেই নারীরা কম-বেশি সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার। সামাজিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র সবক্ষেত্রে প্রায় একই। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই নারী, কিন্তু নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে খুব অল্প সংখ্যক নারীর মধ্যেই। তাদের অনেকেই নিজের সিদ্ধান্তে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন না এবং নিজের বস্তুগত ক্ষমতার পরিসরও স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে বাধাগ্রস্ত হন।

দেশের অর্ধেক অংশ নারীকে তাদের অধিকার ভোগ করতে না দিয়ে, নির্যাতন করে দমিয়ে রেখে দেশ সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না। নারীর সম উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে, স্বয়ং নারীকেও। তাই নারীর নিজের অধিকার সম্পর্কে  সচেতনতা, নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও নারী-পুরুষ উভয়ের অন্তর্ভুক্তিতেই উন্নয়নের দেখা পাওয়া সম্ভব। এভাবেই নারীরা এগিয়ে যাবেন, তাদের ভবিষ্যৎ হবে কণ্টকমুক্ত।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ