Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্মৃতিটুকু থাক!

'সাত ভাই চম্পা জাগোরে জাগোরে' কি এক ভালোবাসা মিশ্রিত অনুভূতি। মনে আছে নিশ্চয়ই এই বিখ্যাত সিনেমার কথা। একটা গোটা জেনারেশন বড় হয়েছে এমন রূপকথার গল্পের সিনেমা দেখে।  কিংবা 'জলছবি' 'পারুলের সংসার'র মত বিখ্যাত এসব চলচ্চিত্র খ্যাত গুণী অভিনেত্রী কবরী। 

 

1

 

করোনায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ  ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে, শেষে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। 

 

3

 

এদেশের মানুষকে অনেক ভালো কাজ, ভালো সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই কিংবদন্তী অভিনেত্রী। ঢাকার সিনেমায় ‘মিষ্টি মেয়ে’ হিসেবে ছিলেন সুপরিচিত। কবরী সিনেমায় ছিলেন দারুণ সক্রিয়।  ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কবরীর। ১৯৬৫ সালে অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়, ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’। ১৯৭০ সালে করেন ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিতে। অনেক কালজয়ী সিনেমা ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে রেখে গেছেন এই অভিনেত্রী।  

 

স্মৃতিটুকু থাক!

১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও নায়ক রাজ্জাকের বিপরীতে করা ‘রংবাজ’ সেসময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৫ এ করা ’সুজন সখী', যে সিনেমার রেশ এযুগের ছেলেমেয়েদের কাছেও পৌঁছেছে। উপহার দিয়েছেন আগন্তুক’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সারেং বৌ’, ‘দেবদাস’, ‘হীরামন’, ‘চোরাবালি’ এর মত জনপ্রিয় সব সিনেমা। প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় কাজ করেছেনে চলচ্চিত্রে। অভিনয়ের জন্য  জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননাসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননাও পেয়েছেন এই কিংবদন্তি। 

 

স্মৃতিটুকু থাক!

 

অভিনয় ছেড়ে এই অভিনেত্রী কাজ শুরু করেন পর্দার পেছনে। ২০০৫ সালে ‘আয়না’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কবরী। কিংবদন্তী এই অভিনেত্রী সিনেমা চলচ্চিত্রের বাইরেও নাম লেখান রাজনীতিতে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। কাজ করেছেন নানান সমাজসেবামূলক সংগঠনে যুক্ত হয়ে। নারী অধিকার নিয়েও ছিলেন সোচ্চার।  

 

6

 

১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জন্ম এই অভিনেত্রীর। আসল নাম ছিলো মিনা পাল। বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা লাবণ্য প্রভা পাল। মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিজেকে একজন শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।  ১৯৬৩ সালে প্রথমবার  নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি। এরপরে পা রাখেন টেলিভিশন এবং  সিনেমায়। চিত্ত চৌধুরীর সাথে প্রথমবার প্রণয়ে আবদ্ধ হন। কিন্তু সে সম্পর্কে আসে বিচ্ছেদ। পরে ১৯৭৮ সালে তিনি সফিউদ্দীন সরোয়ারকে বিয়ে করেন। ২০০৮ সালে দ্বিতীয় বিবাহেও বিচ্ছেদ হয়। পাঁচ সন্তানের জননী এই অভিনেত্রী। 

 

স্মৃতিটুকু থাক!

 

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও পরোক্ষভাবে অবদান রাখেন এই মহীয়সী নারী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ী, সেখান থেকে এক কাপড়ে ভারত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে কলকাতায় গিয়ে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। যার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে নিজ দেশের জন্য  সাহায্যের আবেদন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরে আবারও বাংলা চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। এমনকি মৃত্যুর প্রায় বছর চারেক আগে ২০১৭-এর  অমর একুশে গ্রন্থমেলায়  প্রকাশ করে  গেছেন  তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ