ঈদ পরবর্তী স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে
ঈদ আসে, ঈদ যায়। আর এই মধ্যবর্তী সময়ে রেখে যায় সামান্য পরিবর্তনের ছাপ। ঈদের আগে দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার যে অভ্যাস মুসলমানরা গড়ে তোলেন, তা সঙ্গত কারণেই ঈদের পর পরিবর্তিত হয়। ইফতারের পর রাতের খাবার এবং সবশেষে সেহরি করা—এই রুটিনের সঙ্গে মুসলমানদের অভ্যস্ত হওয়ার হিসাব করে নিতে হয়। রমজানে ভাজাপোড়া খাওয়ার অভ্যেস অনেকের গড়ে ওঠে। আবার ঈদের আগে থেকে শুরু করে পরের কদিন পর্যন্ত সবার খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। আর এই সময়ে কারও ওজন বেড়ে যায়, কারও বা দেখা দেয় নানা সমস্যা।
এবার বেশ গরম পড়েছে। আবহাওয়াও কিছুটা অন্যরকম। সাধারণত ঈদের পরবর্তী সময় কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যায়। এসব স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কোষ্ঠকাঠিন্য, ওজন বেড়ে যাওয়া, ডায়রিয়া ও আমাশয়, পেটে গ্যাস, এসিডিটি, ব্যথা ও বমি বমি ভাব, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, রক্তের চর্বি বেড়ে যাওয়া, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়া, পায়খানার রাস্তায় জ্বালাপোড়াসহ রক্তক্ষরণ, ভ্রমণজনিত শারীরিক দুর্বলতা, পানিশূন্যতা, খাবারে অরুচি, ঘুম কম হওয়া, ইত্যাদি। এবার যেহেতু একটু গরম পড়ছে, সেহেতু ফলে ঈদ-পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর ভাবনাই থাকে সবার। কারণ ঈদের পর আবার কর্মব্যস্ত জীবন শুরু হয়ে গেলে অন্তত এই যন্ত্রণা এড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। সেক্ষেত্রে যা করতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের গোলযোগ প্রতিরোধে
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে মাংস কম খেয়ে সালাদ, লেবু, শসা, কাঁচামরিচসহ বেশি করে শাকসবজি খান। মাংস খাবেন অবশ্যই। তবে তা পরিমিত খাওয়ার চেষ্টা করুন। লিন মিট যেমন মুরগির মাংস স্টু করে খেতে পারলে ভালো। মুরগির বুকের মাংস অনেকের পছন্দ না হলেও প্রায় ৫০ গ্রাম পিউর প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই লিন মিট খান। হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য টক দই খান। টক দই দিয়ে এখন খুব সহজেই মাঠা বা ঘোল বানিয়ে নিতে পারেন। বেশি ঝাল-মসলাদার খাবার খাবেন না। ঈদের সময় যেখানেই যান, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবেন না। ভাত, তরকারি বা সালাদের সঙ্গে সমন্বয়ের দিকটিও ভেবে রাখা জরুরি।
ঈদে ক্ষতিকর রঙ, লবণ, ঘি, মাখন, পাম অয়েল ব্যবহারযুক্ত কোনো খাবার খাবেন না। মাংসের ফ্রাই ও বারবিকিউ খাবেন না। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া একেবারেই খাবারে রাখা উচিত নয়। কারণ ভাজাপোড়া আপনার পেটে অ্যাসিডিটির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অ্যাসিডিটি হলেই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাবেন না। সবসময় এ ধরনের ওষুধ বা সেলফ প্রেসক্রিবশন এড়ানোর চেষ্টা করুন। অনেক সময় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ না বুঝেই আমরা খেয়ে ফেলি। সব গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সব ধরনের কাজ করে না। একেকটি ধরনের ওষুধের একেক ধরনের কাজ রয়েছে। বুঝে খান। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রচুর পানি পান করুন
সবসময় নিজেকে হাইড্রেটেড রাখার চেষ্টা করবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও সবসময় পানি পান করা উচিত। একবারে বেশি পানি পান করবেন না। ধারাবাহিকভাবে পানি পান করুন। ডায়রিয়া, আমাশয় প্রতিরোধে বিশুদ্ধ পানি ও বাইরের খাবার পরিহার করুন। বাজারের কোমল পানীয় না খেয়ে বেশি করে বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার, ডাবের পানি, বাসায় বানানো দেশি ফলের জুস খাবেন। ফলের শরবত বানিয়ে খেলেও চিনি না মেশানোই ভালো। ব্লেন্ড করে ঘন করে পান করুন। গরমে আরাম পাবেন এবং শরীরের জন্যও তা উপাদেয় হবে। সারাদিনে চা বা কফি পানের অভ্যাসে নিয়ম বেঁধে ফেলুন। সকালে পান করতে পারেন। বিকেলেও রাখা যেতে পারে। তবে সন্ধ্যার পর একেবারেই না। যদি তা করেন তাহলে আপনার ঘুমে ব্যাঘাত দিবে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য। কারণ ঘুম না হলে শরীরের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। সে চাপ আপনার রক্তচাপ এমনকি স্ট্রেস বাড়ায়। ঈদের পরবর্তী সময়ে যে কদিন ছুটি পাওয়ার কথা সেখানেও বরং আপনার যন্ত্রণা বাড়বে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যালরি হিসাব করে খাবার খান। ক্যালরি হিসেব করে খাওয়ার ট্রেন্ড আমাদের দেশে এখনো এতটা জনপ্রিয় হয়নি। তবে আস্তে আস্তে এ বিষয়ে অনেকেই সচেতন হতে শুরু করেছেন। প্রয়োজনে কোনো পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে একটি চার্ট করে নিতে পারেন। অভ্যাস ও রুটিনের গাইডলাইন অনুসারে খাবার খান।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে লবণযুক্ত, চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখতে কম চিনিযুক্ত খাবার খান। চিনির ক্ষেত্রে সাদা চিনি পরিহার করুন। গুড় খেতে পারেন। অথবা ফল। খেজুরও ভালো অল্টারনেটিভ। সবসময় চেষ্টা করবেন পর্যাপ্ত চিনি যেন পান। একেবারে চিনি না পেলেও সমস্যা।
ব্যায়াম করার অভ্যাস
সামান্য কিছু ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। হাঁটাচলা, সকালে ওঠা, স্ট্রেচিং এসব কিছু সু-অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যদি তুলতে না পারেন তাহলে আপনারই ক্ষতি।