তুমি যতখানি নারী ততখানিই স্বাধীন হও
লোকে তারে পাগল বলে। তারপর ছোট করেও দেখে। কারণ সে একজন নারী। নারী বলেই তার বাঁচার পথ অত কঠিন। তাও সে নারী অদম্য, সে নারী অপরাজেয়। সে নারী স্বাবলম্বী। আর যতদিন নারী স্বাবলম্বী হবে না ততদিন তার মুক্তিও হবেনা শাসিত সমাজের অনুগ্রহ থেকে।
এমন একজন নারী হচ্ছেন রাজশাহীর মেয়ে খুকি। কিশোরী বয়সে বিয়ে হয় ৭০ বছরের এক বৃদ্ধার সাথে। বিয়ের এক মাসের মাথায় স্বামীর মৃত্যু হয়। আশ্চর্যজনক ভাবেই একজন অভিভাবকের পরিচয় ছাড়া এ সমাজের মেয়েদের আশ্রয় মেলে না কোথাও। খুকির ও মিলেনি। স্বামী নেই বলে শ্বশুর বাড়ী থাকতে দেওয়া হয়নি। সম্বল তখন একমাত্র বাবার বাড়ী। যে বাড়ীতে জন্ম হয়, যে বাড়ীতে বেড়ে ওঠা, যে বাড়ী আজীবনের শর্তহীন পরিচয় হয় সেই বাবার বাড়ীটাও একটা সময় পরে পর হয়ে যায়। সেখানেও আশ্রয় পাওয়া যেন এক কঠিন দুঃসাধ্য। খুকির কপালে তাও মিলেনি। নিজের ভাইয়েরা তাকে থাকতে দেয়নি। তারপর থেকেই মানসিক ভারসাম্যে কিছুটা টানাপোড়েন শুরু হয়। তবে এত অবহেলা, আশ্রয়হীন হয়ে পড়া তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ যেন উন্মোচন করে দিয়েছে। নিজের দায়িত্ব নিজেকে নেওয়ার বাসনা তৈরি করেছে এই পাগলাটে নারীর ভেতরও।
একদিন রাস্তায় একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেলে তার মালিককে তা ফেরত দেন খুকি। মানিব্যাগের মালিক খুশি হয়ে তাকে ১৫০ টাকা উপহার দেন। সে টাকা দিয়েই খুকি করে নিজের আয় শুরুর বন্দোবস্ত। শুরু করেন পেপার বিক্রির কাজ। রোজ ভোরে সূর্য উঠার আগেই এই নারী পেপার নিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে তা পৌঁছে দেন। হকারিও করেন। তার থেকে দৈনিক ৩০০ টাকা আয় করে। সে টাকায় আবার অন্যদের সাহায্যও করেন। তারই মত অসহায় মেয়েদের কিনে দিয়েছেন সেলাই মেশিন ও গরু। উদ্দেশ্য এসব অসহায় মেয়েরাও যেন আয় করে খেতে পারেন।
তবে সবসময় জীবন এত সহজগতি তে চলে তাও নয়। প্রায়ই তাকে পড়তে হয় নানান বিপাকে। নিজের অসহায়ত্ব আর পাগলা গোছের বলে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে মানুষের সাহায্য চাইলে তা পাওয়া হয়ে উঠে না সবসময়। সরলতার সু্যোগ নিয়ে আবার বখাটেরা টাকা পয়সাও হাতিয়ে নেয়।
এত প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েও স্বাবলম্বী হওয়ার বাসনা এতটুকুও কমে না খুকির। বরং অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে নিজের কাজ আর দায়িত্ব নিয়ে বেঁচে থাকছেন একজন নারী হয়েই।
যে নারী প্রতিমার মতন, মায়ার আঁচলে গল্প বুনে বীরত্ব আর সাহসের। যাকে দেখে মন তৃপ্ত হয় এই ভেবে, এই সমাজেই এমন নারীর বাস যে হতে পারে অন্যদের স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।