Skip to content

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রথম নারী সার্জন: ভেরা গেদ্রোয়েত

 

 

১৮৭০ সালে রাশিয়ার কিভে জন্মান ভেরা গেদ্রোয়েত। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন বেশ দুরন্ত প্রকৃতির। পড়াশোনা শুরু করেন সেন্ট পিটসবার্গে। বামপন্থী রাজনৈতিক দলের হয়ে বিপ্লবী কার্যক্রমে জড়িয়ে যাওয়ায় মাত্র ১৬ বছর বয়সেই আটক করা হয় তাকে। পরে ছাড়া পেলেও বেশিদিন বাড়িতে থাকেননি তিনি। সুযোগ পেয়েই আবার পালিয়ে যান সুইজারল্যান্ডে। সেখানেই মেডিকেলের পড়াশোনা শুরু করেন তিনি।

 

১৯০১ সালে রাশিয়ায় ফেরেন ভেরা। সেখান থেকেই পরীক্ষা দিয়ে পুরোপুরি চিকিৎসক হন তিনি। এরপর শুরু করেন চিকিৎসাসেবা প্রদান। রাশিয়ার একটি শিল্পকারখানায় সার্জন হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানেই নিজের মতো করে একটি হসপিটাল চালু করেন। ১৮৯৫ সালে এক্স-রে মেশিন উদ্ভাবিত হলে সে সময়েই নিজের হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন এবং ফিজিওথেরাপির যন্ত্রপাতি নিয়ে আসেন ভেরা।

 

রুশ-জাপানিজ যুদ্ধ শুরু হলে রেডক্রসে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগদান করেন ভেরা। যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকিৎসা সেবা দেন তিনি। ১৯০৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মুকদেন নামক একটি গ্রামে (বর্তমানে চিনের শেনইয়াং) একটি চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন ভেরা। সেখানে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে রোগীর সংখ্যা। তাদের প্রত্যেককে নিয়ে এমনকি তাদের রোগ নিয়ে লিখতে শুরু করেন ভেরা। পরবর্তীতে রোগীর সংখ্যা বাড়ায় ১৯০৫ সালে একটি অপারেটিং থিয়েটার সংযুক্ত করা হয় সেই চিকিৎসালয়ে। তবে কিছুদিন পর সেখানে জাপানিজ আক্রমণ বাড়লে সেখান থেকে রোগীদের নিয়ে পালিয়ে আসেন ভেরা।

 

প্রথম জীবনে শিল্পকারখানায় সার্জন হিসেবে কাজ করার সময়ই সেখানকার শ্রমিকদের তলপেট বা শরীরের নিম্নাংশে ব্যথার বিষয়টি লক্ষ্য করেন ভেরা। এদিকে সেসময় যুদ্ধের সময় পেটে আঘাত পেলে এবং ভেতরে রক্তক্ষরণ হলেও কোনোরকম অস্ত্রোপচার ছাড়াই রোগীর অবস্থা বোঝার চেষ্টা করতেন চিকিৎসকরা। ফলে রোগীরা মৃত্যুবরণ করতেন খুব তাড়াতাড়ি। ভেরা নিজের পূর্ববর্তী জ্ঞান থেকেই এ সময় তলপেটের এই সার্জারি করা শুরু করেন। 'ল্যাপারোটোমিস' নামক এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে আক্রান্ত স্থানের ভেতরে প্রবেশ করে দেখতেন তিনি। এরপর দিতেন যথাযথ চিকিৎসা। আর এর সবকিছুই লিখে রাখতেন তিনি।

 

যুদ্ধ শেষে আগের সেই শিল্পকারখানার হাসপাতালে ফেরেন ভেরা। পরে সার্জন হিসেবে যোগ দেন রাশিয়ার রাজ পরিবারে। ১৯১৭ সালে প্রাসাদ ছেড়ে আবারো যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যান তিনি। এ সময় যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হন তিনি। পরবর্তীতে শিক্ষক হিসেবে সার্জারি শেখানোর দায়িত্ব নেন এবং একটা সময় অধ্যাপক হয়ে যান।

 

আবারো লিখতে শুরু করেন ভেরা। তবে এবার চিকিৎসা কিংবা রোগীর কথা নয়। কবিতা লিখতে শুরু করেন তিনি। তার লেখনী এখনো কিভে বিখ্যাত। ১৯৩২ সালে জন্মস্থান কিভেই মারা যান ভেরা। পরে সেখানেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ