খেতে পাচ্ছেন না তাঁত শ্রমিকরা, বিপাকে মালিকরাও
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশে পাবনার সাঁথিয়ায় বন্ধ রয়েছে সকল তাঁতের কারখানা। এখন নীরব তাঁতপল্লী। কাজ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার তাঁত শ্রমিকসহ মালিকরা। এক নাগারে বন্ধের কারণে নাভিশ্বাস তাঁতিদের। সরকারি সহযোগিতা না পেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন তাঁত ব্যবসায়ীরা।
তাঁতিরা জানান, কারখানা বন্ধের ২৫ দিন পার হলেও এখনও পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি তারা।
অপরদিকে তাঁত মালিকেরা বলেন, হাট-বাজার বন্ধ থাাকায় উৎপাদিত পণ্যর পাহাড় জমে গেলেও বিক্রি করতে পারছেন না। এ অবস্থায় নিজেরাই চলতে পারছি না শ্রমিকদের দেব কি! অপরদিকে ব্যবসা বন্ধ থাকলেও চালু রয়েছে ব্যাংকের ঋণ। এ শিল্পকে বাঁচাকে সরকারি সহযোগিতা আশু প্রয়োজন।
সরেজমিন উপজেলার তাঁত সমৃদ্ধ পিপুলিয়া, শশদিয়া, ফকিরপাড়া, ছেচানিয়া, করমজা, ধুলাউড়ি, ঘুঘুদহ, তেতুঁলিয়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায় পিনপতন নীরাতা। যদিও ঈদুল ফিতর আসন্ন।
কয়েকজন শ্রমিক এগিয়ে এসে বলেন, ভাই, দয়া করে আমাদের জন্য কিছু করেন। আর পারছি না। সাঁথিয়ার নজরুল ইসলাম নজু নামের এক প্রবীণ তাঁত শ্রমিক জানান, আজ তিন সপ্তাহ আমাদের কোনো কাজকর্ম নেই। মহাজন কাপড় বিক্রি না করলে টাকা দিতে পারবে না। ঘরে খাবার নেই, পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে চলতে পারছি না। আজ প্রায় এক মাস হতে চললো, কারও থেকে কোনো সহায়তা পাইনি। একই কথা জানালেন পিপুলিয়া গ্রামের হাফিজুল, আব্দুল্লাহসহ অনেকেই।
বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড সূত্রে জানা যায়,পাবনার সাঁথিয়া বেসিক সেন্টারের অধীনে প্রায় ৩৫ হাজার তাঁত রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছেন এখানে। এখানকার বেশিরভাগ কারখানাগুলো ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। মহামারি করোনা রোধে ক্রমাগত বন্ধের কারণে একদিকে যেমন তারা ক্ষতিগ্রস্ত অপরদিকে খাদ্যাভাবে শ্রমিকদের অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটছে। তবে তালিকা প্রস্তুত চলছে বলে জানান তাঁত বোর্ডের এক কর্মচারি।
সাঁথিয়ার তাঁতব্যবসায়ী হালাল লুঙ্গির প্রোপাইটর ইন্তাজ আলী মল্লিক বলেন, আমার প্রায় শতাধিক তাঁত রয়েছে। এখানে নারী পুরুষ মিলে প্রায় আড়াইশত শ্রমিক কাজ করে। আজ প্রায় এক মাস হতে চলল কারখানা বন্ধ। বন্ধ হাটবাজারও। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছি না। অন্যদিকে রয়েছে ব্যাংক ঋণ।
সাঁথিয়া বেসিক সেন্টারের লিয়াজো অফিসার শ্রী জুয়েল চন্দ্র তাঁতিদের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে বলেন, তাঁতবোর্ড থেকে তালিকা চেয়েছেন। আমরা সমিতির মাধ্যমে অসহায় তাঁতি ও তাঁতশ্রমিকের তালিকা তৈরি করছি। খুব দ্রুত এগুলো পাঠিয়ে দেব বোর্ডে। এর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি তালিকা জমা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোন সাহায্য সহযোগিতা আসেনি।
সাঁথিয়া পৌর মেয়র মিরাজুল ইসলাম বলেন, কয়েকশ তাঁতি পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দেওয়ার উদ্যাগ নেওয়া হয়েছে। খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই তা বিতরণ করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জামাল আহম্মেদ জানান, সরকারের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ এসেছিল তা বিভিন্ন উপজেলায় চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে অসহায়দের মধ্যে বন্টন করা হচ্ছে। ত্রাণ পর্যাপ্ত না থাকায় সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেওয়া হবে। তাঁত মালিকদের ঋণের সুদ মওকুফের জন্য সুপারিশ করা হবে।