Skip to content

ঢাকার বায়ুদূষণে হুমকিতে শিশু ও প্রজনন স্বাস্থ্য

বায়ুদূষণ বর্তমানে ঢাকার একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে মানুষের জীবনমান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু এবং নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঢাকার বায়ুদূষণের উৎস, এর প্রভাব, এবং এ থেকে মুক্তির উপায়।

বায়ুদূষণের মূল উৎস
ইটভাটা
ঢাকার আশেপাশে প্রায় ১২০০ ইটভাটা রয়েছে। এই ইটভাটাগুলোতে অপ্রতুল প্রযুক্তি ব্যবহার ও কয়লা পুড়িয়ে ইট তৈরি করার কারণে প্রচুর পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গত হয়।


যানবাহনের ধোঁয়া
ঢাকায় যানবাহনের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরনো যানবাহন এবং অপরিশোধিত জ্বালানি ব্যবহারের ফলে প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়া নির্গত হয়। এটি বায়ুদূষণের একটি বড় কারণ।


শিল্প ও নির্মাণ কাজ
শিল্প কারখানা থেকে নির্গত গ্যাস এবং নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সিমেন্ট, বালি, এবং অন্যান্য উপাদান বাতাসে মিশে দূষণ সৃষ্টি করছে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য পোড়ানোর প্রবণতা রয়েছে। এই পদ্ধতি বাতাসে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে দেয়।

ঢাকার বায়ুদূষণ শিশু এবং নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।

শিশুদের উপর প্রভাব
শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা: বায়ুদূষণের কারণে শিশুরা শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, যেমন অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, এবং নিউমোনিয়া।
মানসিক বিকাশে বাধা: দূষিত বায়ুতে উপস্থিত সিসা এবং অন্যান্য ভারী ধাতু শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
অকাল মৃত্যু: গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর বহু শিশু অকাল মৃত্যুর শিকার হচ্ছে।

প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব
গর্ভধারণে জটিলতা:বায়ুদূষণের কারণে নারীদের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব এবং গর্ভধারণে জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অকাল গর্ভপাত: বিষাক্ত গ্যাস এবং ধূলিকণার কারণে গর্ভবতী নারীদের অকাল গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
জন্মগত ত্রুটি:বায়ুদূষণ গর্ভস্থ শিশুর ওপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি এবং কম ওজন নিয়ে জন্মানোর আশঙ্কা থাকে।

WHO এবং এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা প্রায়শই “অস্বাস্থ্যকর” ক্যাটাগরিতে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের কারণে ঢাকায় শিশু মৃত্যুর হার এবং গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ
ইটভাটার আধুনিকায়ন: পুরনো ইটভাটাগুলো বন্ধ করে আধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবেশবান্ধব যানবাহন: ইলেকট্রিক এবং হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার উৎসাহিত করা উচিৎ। পুরনো যানবাহন নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।
নির্মাণ কাজের মানোন্নয়ন: নির্মাণকাজ চলাকালীন ধূলিকণা নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং সঠিকভাবে উপকরণ সংরক্ষণ করতে হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য পুড়ানো বন্ধ করে সেগুলো পুনঃব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের উদ্যোগ নিতে হবে।
বৃক্ষরোপণ : শহরে বৃক্ষরোপণ এবং সবুজ এলাকা বাড়ানোর মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি: বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সবাইকে এই সমস্যার সমাধানে যুক্ত করতে হবে।

ঢাকার বায়ুদূষণ একটি ক্রমবর্ধমান সংকট, যা শিশু ও প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এটি মোকাবিলায় সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে এর ক্ষতিকর প্রভাব আরও বাড়তে পারে। তাই ভবিশ্যতে সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই প্রয়োজন সচেতন ও কার্যকর উদ্যোগ।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ