Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যপ্রাণির কে রাখে খবর, কে করে শুমারি

বন্য প্রাণির মধ্যে বাংলাদেশে সরকারি উদ্যোগে একমাত্র রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শুমারি হয় পাঁচ বছর পর পর। সুন্দরবনকেন্দ্রিক হরিণ, বানর ও শুকরসহ ছয় ধরনের প্রাণীর একটি মাত্র জরিপ হয়েছে সম্প্রতি।

তবে পাখির শুমারি নিজস্ব উদ্যোগে, সীমিত আকারে করে থাকে বার্ডস ক্লাব।

সুন্দরবনের বাঘের শুমারি এখন চলছে। চলতি বছরে ২৯ জুলাই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা জানা যাবে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪। এবারের জরিপ সরকারি অর্থায়নে হচ্ছে। সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের প্রধান ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, “আশা করছি নতুন জরিপে বাঘের সংখ্যা বাড়বে। আর আমাদের কাছে বাঘের শিকার প্রাণির একটা হিসাব আছে, তার সংখ্যাও বাড়ছে।”

প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, “আমরা আসলে সুন্দরবনকেন্দ্রিক বন্য প্রাণির জরিপ করি। এর আগে প্রতি পাঁচ বছর পর পর শুধু বাঘই গণনা করা হতো। আমরা সম্প্রতি বাঘ খাদ্যের জন্য যেসব প্রাণীর উপর নির্ভর করে তারও একটি জরিপ শেষ করেছি। এই ধরনের জরিপ এবারই প্রথম।”

বাঘের শিকার প্রাণীর ওপর জরিপের নেতৃত্ব দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ। তিনি জানান, যে ছয় ধরনের প্রাণীর ওপর জরিপ তার মধ্যে সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ আছে এক লাখ ৩৬ হাজার, বুনো শুয়োর ৪৭ হাজার ৫০০, মায়া হরিণ ৮০৮, বানর এক লাখ ৫২ হাজার, সজারু ১২ হাজার ২৪২ এবং কালো গুই সাপ আছে ২৫ হাজার। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য বনাঞ্চলের বন্য প্রাণির কোনো জরিপ নেই। সেটা হওয়া দরকার। সেটা হলে আমরা আমাদের প্রাণি ও জীব বৈচিত্র্যের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবো। পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবো।”

বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা কত তা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে কোনো জরিপ হয়নি। তবে সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন বলেন, “আইইউসিএন বাংলাদেশের হাতি নিয়ে ২০১৬ সালে একটি জরিপ করেছে। তাতে তারা বাংলাদেশে ২৬৮টি বন্য হাতির কথা জানিয়েছে।” তাদের জরিপে দেখা যায়, ওই সময়ে পরিব্রাজক (সীমান্ত পার হয়) হাতির গড় সংখ্যা ছিল ৯৩। বন্দি দশায় (পোষা) আছে নিবন্ধিত এমন ৯৬টি হাতি ছিল সে সময়।

বাংলাদেশের উচ্চ আদালত গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মাসে পোষা হাতির লাইসেন্স নবায়ন স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশে সার্কাস, প্রদর্শনী, চাঁদাবজির কাজে পোষা হাতির ব্যবহার বন্ধে এক রিটের প্রেক্ষিতে আদালত ওই নির্দেশ দেন।

আইইউসিএনের হিসাবে, বাংলাদেশে ২০১৫ সাল থেকে সাত বছরে মারা গেছে ৬৯টি হাতি। তবে দেশের প্রাণীবিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কেবল ২০২০ সালেই ২২টি ও ২০২১ সালে ১৬টি হাতি মারা পড়েছে মানুষের হাতে।

২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স গ্রহণ না করে কোনো বাঘ বা হাতি হত্যা করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে। ২০১৭ সালে আইনটিতে সংস্কার এনে নতুন বিধিমালা করা হয়। লাইসেন্স ছাড়া হরিণ ও হাতি পালনে জেল-জরিমানার বিধান রেখে ‘হরিণ ও হাতি লালন-পালন বিধিমালা-২০১৭’ চূড়ান্ত করে সরকার।

বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে পাখির কোনো শুমারি হয় না। কিন্ত বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাব প্রতি বছর জলচর পাখির শুমারি করে। বার্ডস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মুহিত জানান, চলতি বছরে তারা ৬২টি প্রজাতির ৩৪ হাজার ৩১২টি পাখি তারা গণনা করেছেন। তারা ৪৪টি স্থানে পাখি গণনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা শুধু জলচর এবং সুনির্দিষ্ট স্থানে কিছু পাখি গণনা করি। সারাদেশে পাখির সংখ্যা আমাদের জানা নেই। এটা নিয়ে নিয়মিতভাবে সরকারি পর্যায়ে জরিপ হওয়া প্রয়োজন।”

প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন ,”অবশ্যই বন্য প্রাণি, পাখি নিয়ে নিয়মিত জরিপ প্রয়োজন। আমাদের সেই জনবল আর অর্থ নেই। আমাদের কাজ সুন্দরবনকেন্ত্রিক। তা-ও বাঘ এবং বাঘের খাদ্য যেসব প্রাণী, তাদের নিয়ে। দেশে আরো বন আছে। আরো প্রাণী আছে। আমরা যা করছি, তা খুবই সীমিত। ”

অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের গবাদি পশু ও হাঁস মুরগীর হিসাব প্রকাশ করে। বিবিএস-এর কৃষি শুমারি সর্বশেষ হয় ২০১৯ সালে। সেই শুমারি মতে, দেশে ২০১৯ সালে মোট গরু দুই কোটি ৯৪ লাখ ৫২ হাজার এবং ছাগল এক কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার। মোরগ-মুরগি ও হাঁসের সংখ্যা যথাক্রমে ১৯ কোটি ৯৪ লাখ তিন হাজার ও সাত কোটি ৪৪ লাখ ৯৩ হাজার। এর আগে কৃষি শুমারি হয় ২০০৯ সালে। সেই তুলনায় দেশে গরু ছাগল ও হাঁস মুরগির সংখ্যা বেড়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রাণীর ওপর ‘রেড লিস্ট অব বাংলাদেশ’ প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়. বাংলাদেশে ৬৪ প্রজাতির উভচর, ১৭৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৭১১ প্রজাতির পাখি , ১৩৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী- সব মিলিয়ে এক হাজার ৮২ প্রজাতির প্রাণী আছে। বাংলাদেশে ১৩৪ প্রজাতির বিপন্ন প্রাণীর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত নয়। আইইউসিএন-এর সাকেব কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন মনে করেন, “দেশের জন্য, প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা এবং প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের জন্য নিয়মিত জরিপ প্রয়োজন। এটা নিয়মিত না করলে কোনো লাখ হবে না।”

অনন্যা /এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ