সাহিত্যজগতেও নারীরা পুরুষতন্ত্রের শিকার কেন
সাহিত্যিকরা কল্পনা ও অভিজ্ঞতার সমম্বয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করেন। আর যারা সাহিত্য রচনা করেন তারাই সাহিত্যিক। কিন্তু এই সাহিত্যিক বা লেখককেও জেন্ডার অনুযায়ী নারী-পুরুষের লেবেল সেঁটে দেওয়া হয়। একজন পুরুষ যখন সাহিত্য রচনা করেন তখন তাকে শুধু লেখক আখ্যা দেওয়া হলেও নারীকে বলা হচ্ছে লেখিকা। কিন্তু পুরুষ ও নারীর জেন্ডার অনুযায়ী লেখার জগতে এই বিভাজন কেন? যেখানে সৃজনশীলতা ও মননশীলতার চর্চাই লেখক হয়ে ওঠার প্রধান শর্ত, সেখানে নারী বলে তাকে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা কেন! সাহিত্যজগতেও কি নারীরা পুরুষতন্ত্রের শিকার!
অবরুদ্ধ নারী জাতির মুক্তির জন্য আজীবন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সংগ্রাম করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় নারী জাতি নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ের চেষ্টা করলেও পুরুষতন্ত্রের পাতা ফাঁদে ঘুরপাক খাচ্ছে বারংবার! আবহমানকাল ধরে নারীর ওপর সবসময় পুরুষতন্ত্রের আধিপত্য বিস্তারের হীন চেষ্টা হয়ে এসেছে। পরিবার থেকে মেয়ে ও ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে যে বিভাজনের সূচনা হয়, বাইরের বৃহত্তর পরিমণ্ডলে তা আরও বাড়তে থাকে। এমনকি যেই সেক্টরটি নারী-পুরুষের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জগৎ, সেই লেখালেখির দুনিয়াতেও ‘নারী’কে ‘লেখিকা’ হিসেবে দেখা হয়। এর মাধ্যমে একঘরে করে রাখা হয় সমগ্র লেখক জগৎ থেকে। এতে প্রকৃত পক্ষে নারীকে পরিপূর্ণ লেখক হিসেবে গণ্য করা হয় না! নারীকে দমিয়ে রাখার এই এক অপকৌশল। যা যুগ যুগ ধরে রপ্ত করেছে পুরুষ সমাজ!
এই অপকৌশল মূলত নারীর সার্বভৌম সাহিত্যিক পরিচয়কে পুরুষেরতন্ত্রের ভয়। নারীকে সামগ্রিক লেখক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না পুরুষতন্ত্র। পুরুষ সমাজ তাদের অবস্থানকে সংহত রাখতেই সর্বদা নারীকে পশ্চাতে রাখতে সচেষ্ট। আর সে কারণেই নারীকে শুধুই ‘লেখক’ হিসেবে স্বীকার না করে বাড়তি বিশেষণ টেনে এনে তার লেখকসত্তাকে অবমাননার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি মূলত সাহিত্যিক-ভাষিক-সামাজিক রাজনীতির অংশ। যেখানে বলি হচ্ছেন সমৃদ্ধ নারী লেখক। এখনই সময় প্রতিটি সেক্টরে নারীর সঠিক মূল্যায়ন।
নারীকে অবদমনের অপকৌশলে নিহিত ভাষার রাজনীতি। যেখানে প্রচলিত রাজনীতির মাঠে নারীকে তার যোগ্য জায়গা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না, ভাষা-সাহিত্যের রাজনীতিতেও তাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করবে পুরুষতন্ত্র; এটিই স্বাভাবিক। বাংলা ভাষায় পুরুষতন্ত্র এমন কিছু শব্দ তৈরি করে রেখেছে, যেখানে অবলীলায় নারীকে খাটো করার সুযোগ নেওয়া হয়! অথচ ভাষার ব্যবহার বলে সাধারণ মানুষ সেই রাজনীতির হীন উদ্দেশ্য ধরতে পারে না। তাই প্রতিবাদও করে না কেউ। প্রতিবাদহীন ভাষাবিশ্বে নারীকে প্রতিনিয়ত অবজ্ঞার এক মোক্ষম অস্ত্র এই ভাষার রাজনীতি। আর কিছু বোকা নারীও পুরুষতন্ত্রের
তৈরি নিয়মের সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যস্ত! পুরুষের আধিপত্য মেনে নিয়ে গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসছে। ফুটন্ত কুঁড়ির শোভাসৌন্দর্য পরিপূর্ণরূপে মুগ্ধ করার আগেই মেধার ঝাঁপি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে নারীকে দুর্বল ভাবার প্রবণতাই উঁকি দেয় পুরুষতন্ত্রে। তারা নারীর মেধার যোগ্য স্বীকৃতি দিতে নারাজ। তারই প্রতিফলন ‘লেখিকা’ নামকরণে লুকায়িত! নারীকে স্বীকৃতি দিলে পুরুষের আধিপত্যে ধস নামতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই এমন অভিধা।
এই খণ্ডিত পরিচয় থেকে নারীর মুক্তির জন্য পারিবারিক-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো উচিত। নারীরাও যে পুরুষের সমান, সেই সত্য সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। শুধু যে গ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তা নয়; বরং সব স্তরে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল-সংবেদনশীল আচরণের চর্চাও করতে হবে। যেখানে নারী শুধু একটি এককে আবদ্ধ থাকবে না বরং চেতনায়, মননে এমনকি জীবনযাপনে যুক্তি-বুদ্ধি-বিজ্ঞান-দর্শনের দ্বারা নিজের সঙ্গে দেশের মাটিতে সোনা ফলাবে। পুরুষ সমাজও নারীকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববে না, বরং সহযোগী হিসেবে মেনে নেবে। যদি পরিবার-সমাজ থেকে সমস্যার সমাধান করা যায়, তবে বৃহত্তর ক্ষেত্র জাতীয় পর্যায়ে কোনো সংঘাত তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। তাই নারীকে ‘স্বাধীন সার্বভৌম লেখক’ হয়ে ওঠার জন্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতেই হবে। কিন্তু সেদিন কতদূর?সাহিত্যজগতেও কি নারীরা পুরুষতন্ত্রের শিকার?
খাদিজা আক্তার
সাহিত্যিকরা কল্পনা ও অভিজ্ঞতার সমম্বয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করেন। আর যারা সাহিত্য রচনা করেন তারাই সাহিত্যিক। কিন্তু এই সাহিত্যিক বা লেখককেও জেন্ডার অনুযায়ী নারী-পুরুষের লেবেল সেঁটে দেওয়া হয়। একজন পুরুষ যখন সাহিত্য রচনা করেন তখন তাকে শুধু লেখক আখ্যা দেওয়া হলেও নারীকে বলা হচ্ছে লেখিকা। কিন্তু পুরুষ ও নারীর জেন্ডার অনুযায়ী লেখার জগতে এই বিভাজন কেন? যেখানে সৃজনশীলতা ও মননশীলতার চর্চাই লেখক হয়ে ওঠার প্রধান শর্ত, সেখানে নারী বলে তাকে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা কেন! সাহিত্যজগতেও কি নারীরা পুরুষতন্ত্রের শিকার!
এই অপকৌশল মূলত নারীর সার্বভৌম সাহিত্যিক পরিচয়কে পুরুষেরতন্ত্রের ভয়। নারীকে সামগ্রিক লেখক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না পুরুষতন্ত্র। পুরুষ সমাজ তাদের অবস্থানকে সংহত রাখতেই সর্বদা নারীকে পশ্চাতে রাখতে সচেষ্ট। আর সে কারণেই নারীকে শুধুই ‘লেখক’ হিসেবে স্বীকার না করে বাড়তি বিশেষণ টেনে এনে তার লেখকসত্তাকে অবমাননার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি মূলত সাহিত্যিক-ভাষিক-সামাজিক রাজনীতির অংশ। যেখানে বলি হচ্ছেন সমৃদ্ধ নারী লেখক। এখনই সময় প্রতিটি সেক্টরে নারীর সঠিক মূল্যায়ন।
নারীকে অবদমনের অপকৌশলে নিহিত ভাষার রাজনীতি। যেখানে প্রচলিত রাজনীতির মাঠে নারীকে তার যোগ্য জায়গা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না, ভাষা-সাহিত্যের রাজনীতিতেও তাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করবে পুরুষতন্ত্র; এটিই স্বাভাবিক। বাংলা ভাষায় পুরুষতন্ত্র এমন কিছু শব্দ তৈরি করে রেখেছে, যেখানে অবলীলায় নারীকে খাটো করার সুযোগ নেওয়া হয়! অথচ ভাষার ব্যবহার বলে সাধারণ মানুষ সেই রাজনীতির হীন উদ্দেশ্য ধরতে পারে না। তাই প্রতিবাদও করে না কেউ। প্রতিবাদহীন ভাষাবিশ্বে নারীকে প্রতিনিয়ত অবজ্ঞার এক মোক্ষম অস্ত্র এই ভাষার রাজনীতি। আর কিছু বোকা নারীও পুরুষতন্ত্রের তৈরি নিয়মের সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যস্ত! পুরুষের আধিপত্য মেনে নিয়ে গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসছে। ফুটন্ত কুঁড়ির শোভাসৌন্দর্য পরিপূর্ণরূপে মুগ্ধ করার আগেই মেধার ঝাঁপি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে নারীকে দুর্বল ভাবার প্রবণতাই উঁকি দেয় পুরুষতন্ত্রে। তারা নারীর মেধার যোগ্য স্বীকৃতি দিতে নারাজ। তারই প্রতিফলন ‘লেখিকা’ নামকরণে লুকায়িত! নারীকে স্বীকৃতি দিলে পুরুষের আধিপত্যে ধস নামতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই এমন অভিধা।
এই খণ্ডিত পরিচয় থেকে নারীর মুক্তির জন্য পারিবারিক-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো উচিত। নারীরাও যে পুরুষের সমান, সেই সত্য সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। শুধু যে গ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তা নয়; বরং সব স্তরে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল-সংবেদনশীল আচরণের চর্চাও করতে হবে। যেখানে নারী শুধু একটি এককে আবদ্ধ থাকবে না বরং চেতনায়, মননে এমনকি জীবনযাপনে যুক্তি-বুদ্ধি-বিজ্ঞান-দর্শনের দ্বারা নিজের সঙ্গে দেশের মাটিতে সোনা ফলাবে। পুরুষ সমাজও নারীকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববে না, বরং সহযোগী হিসেবে মেনে নেবে। যদি পরিবার-সমাজ থেকে সমস্যার সমাধান করা যায়, তবে বৃহত্তর ক্ষেত্র জাতীয় পর্যায়ে কোনো সংঘাত তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। তাই নারীকে ‘স্বাধীন সার্বভৌম লেখক’ হয়ে ওঠার জন্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতেই হবে। কিন্তু সেদিন কতদূর?