Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গভীর সমুদ্রে খননে পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা

লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সমুদ্রের তলদেশে পড়ে আছে ‘ম্যাঙ্গানিজ নাজুল’৷ এই পাথরকে আবাস হিসেবে ব্যবহার করে অনেক সামুদ্রিক জীব৷ আবার এই পাথরে ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্টের মতো মূল্যবান ধাতুও রয়েছে৷

তাই এনার্জি ট্রানজিশনের জন্য এই পাথর প্রয়োজন বলে মনে করে একটি পক্ষ৷ তবে এর ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা৷

জার্মানির ‘জিওমার হেল্মহলৎস সেন্টার ফর ওশান রিসার্চের’ মেরিন বায়োকেমিস্ট মাটিয়াস হ্যাকেল জানান, ‘‘কোরাল ও স্পঞ্জের মতো প্রাণীর বসবাসের জন্য ম্যাঙ্গানিজ নাজুল পাথর প্রয়োজন৷ আবার এই প্রাণীগুলো ব্রিটল স্টার ও কোপোপডের মতো সামুদ্রিক প্রাণীর থাকার ব্যবস্থা করে৷ ফলে কয়েক মিলিয়ন বছরের জন্য আমরা তাদের হারিয়ে ফেলতে পারি৷”

তিনি বলেন, ‘‘মাইনিং অপারেশনগুলো অনেক বড় আকারে হয়ে থাকে৷ বছরে কয়েকশ বর্গকিলোমিটার এলাকা খনন করা হয়৷ সে কারণে অনেক প্রজন্মের জন্য এই প্রাণীগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে৷”

শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, এনার্জি ট্রানজিশনের জন্য এই পাথর প্রয়োজন৷ কারণ ম্যাঙ্গানিজ ছাড়াও এর মধ্যে তিনটি মূল্যবান ধাতু আছে- কোবাল্ট, নিকেল ও তামা৷ ভূমিতে যা আছে, তার চেয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি৷

সাগরতলের ধাতু
পরিবেশ সংগঠন গ্রিনপিসের কর্মকর্তা ফ্রান্সিসকা সালমান বলছেন, ‘‘গভীর সমুদ্রে খনন, খননের বিকল্প হয়ে উঠবে না৷ কিন্তু যেটা হবে তা হলো, পরিবেশের পাশাপাশি আমরা সাগরও ধ্বংস করা শুরু করবো৷”

সাগরে ম্যাঙ্গানিজ নাজুলের পরিমাণ ঝুঁকির মুখে আছে৷ কারণ এরই মধ্যে ‘ক্ল্যারিয়ন ক্লিপার্টন জোন’ এলাকায় অনেক দেশ খনন প্রতিযোগিতায় নেমেছে৷ ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটি ইতিমধ্যে খননের অনুমতিও দিয়েছে৷

ঐ এলাকায় খনন কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সে ব্যাপারে জার্মানিও মত দিতে পারবে৷ জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সেবাস্টিয়ান উঙ্গার বলছেন, ‘‘মেরিটাইম আইন অনুযায়ী, গভীর সমুদ্রে খনন করা যায়৷ তবে সেক্ষেত্রে সমুদ্রের পরিবেশের মারাত্মক কোনো ক্ষতি হবে না- এমন শর্ত মানতে হয়৷ কিন্তু অনেকবছর ধরে আমরা যে গবেষণা করছি তাতে দেখা যাচ্ছে, এমন ক্ষতির শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না৷”

সে কারণে গবেষকদের সবুজ সংকেত না পাওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের খনন পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে চায় জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো আরও কয়েকটি দেশ৷ এর জন্য কয়েক প্রজন্ম অপেক্ষাও করতে চায় তারা৷

জার্মান খনিজ সম্পদ সংস্থার মতো বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, আগামী কয়েক দশকে ধাতুর চাহিদা অনেক গুণ বাড়বে৷ তবে কিছু ধাতু রিসাইকেল করা যেতে পারে বা একেবারে বদলে ফেলা যেতে পারে৷

গ্রিনপিসের ফ্রান্সিসকা সালমান বলছেন, ‘‘প্রযুক্তি এত এগিয়েছে যে, আমরা এখন কোবাল্টমুক্ত ব্যাটারি তৈরি করছি৷ তাই এনার্জি ট্রানজিশনের জন্য গভীর সমুদ্রে খননের প্রয়োজন নেই৷”

গভীর সমুদ্র – অক্ষত ইকোসিস্টেম, নাকি পরবর্তী পরিবেশ দুর্যোগ? ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটির উপর এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে৷

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ