নেপালের পথে পথে

পৃথিবীর রূপবৈচিত্র বারবার ভ্রমণ পিপাসুদের মুগ্ধ করেছে। দেশ হতে দেশ এক পথের শেষে অন্য পথে বাঁক নিলেই সে রূপ বদলে যায়। নেপাল পৃথিবীর এই বৈচিত্র্যময় রূপের একাংশকে ধরে রেখেছে নিজের ভূখণ্ডে।

নেপালের দর্শনীয় স্থান সমূহ_

কাঠমান্ডু

নেপালের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। এটির জনসংখ্যা ও আয়তনের  দিক দিয়ে নেপালের বৃহত্তম শহর। তবে শহরটি বিশ্বের অন্যান্য শহরের মত নয়। শহরের কেন্দ্রস্থলে বিলাসবহুল পরিবেশের বিপরীতে রয়েছে বিভিন্ন প্রাচীন প্রাসাদ ও তাদের ধ্বংসস্তূপ এবং বিভিন্ন বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দির। তাই পর্যটনের পাশাপাশি শহরটি ঐতিহ্যগতভাবে খুবই পরিচিত। আর নেপাল ভ্রমণে উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা শুরু হয় এই কাঠমান্ডু থেকে। এখানকার সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হল দরবার স্কয়ার। এ দরবার স্কয়ারটি পাতান ও ভক্তপুরের দরবার স্কয়ারের  তুলনায় বেশ  বড়। কাঠমান্ডুর এর দরবার স্কোয়ারটিং ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। তবে এই দরবার স্কয়ারটি ২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যার এখনো মেরামত কাজ চলছে।

অন্নপূর্ণা পর্বত

নেপালের সেরা দ্বিতীয় দর্শনীয় স্থান হল অন্নপূর্ণা। অন্নপূর্ণা হল অনেকগুলো পর্বতের সমষ্টি কে বোঝায় । এটি পোখরার পশ্চিমে অবস্থিত। হিমালয়ের পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি চূড়ার সারি এখানে অবস্থিত। অন্নপূর্ণা সবচেয়ে উঁচু চূড়াটির উচ্চতা প্রায় ৮০০০ মিটার। এ অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান হল অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্র্যাক, যারা ট্র্যাক করেন একবার হলেও সেখানে যাওয়া উচিত। আর তাই পেশাদার পর্বতারোহীদের জন্য নেপালের জনপ্রিয় এই ট্র্যাকিং  স্পট। বছরের যে কোন সময় এখানে ট্র্যাক করা গেলেও অতিরিক্ত বরফের কারণে মাঝে মাঝে  ট্র্যাক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ট্র্যাকিংয়ের  জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে বসন্তকাল। অন্নপূর্ণা পর্বত সারি ট্র্যাক রাউট গুলোর অন্যতম হল অন্নপূর্ণা সেঞ্চুরিয়ান ট্র্যাক, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্র্যাক এবং অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্র্যাক । ১৯৮৬ সালে একে নেপালের প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

ভক্তপুর

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে ভক্তপুর অবস্থিত । নেপালের প্রাচীন রাজধানীটি ছিল রাজা-রানীদের আবাসস্থল। শহরটি বুধগা ও খোওপা নামে রয়েছে। শহরটি মধ্য যুগে শিল্প-সাহিত্য, কাঠের কারুকার্য ,  ধাতুর তৈরি মূর্তি ও আসবাবপত্রের জন্য বিখ্যাত। এখানে দেখা মিলবে বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দির অপূর্ব সমন্বয়। তবে ভক্তপুরে দর্শনীয় স্থান হল দরবার স্কয়ার । এখানে রয়েছে প্রাচীন অনেক রাজপ্রাসাদ। এছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির। ভক্তপুর এর উল্লেখযোগ্য আরও কিছু দর্শনীয় স্থান হল পোর্টাস স্কয়ার, ভৈরবনাথ মন্দির, ভৈরব মূর্তি, রাজা ভুবতৃনন্দ্র মালার কলাম, ভর্শালা দুর্গা মন্দির, ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি সিদ্ধি লক্ষ্মী মন্দির, দত্ত নারায়ন মন্দির, হিম সেন মন্দির ইত্যাদি। পুরো শহরটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

পোখরা

রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত পোখরা। জনসংখ্যার দিক দিয়ে এটা নেপালে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হলেও দেখে তা মনেই হবে না। শহরটি খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তার সাথে মনোরম জলবায়ু ও নির্মল বাতাস। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নেপালের এই পোখরা শহরকে বলা হয় নেপাল রানী ও নেপালের ভূস্বর্গ। শহরটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ধৌলাগিড়ি, মানসুলু এবং অন্নপূর্ণা ১ দ্বারা ঘিরে রয়েছে। পোখরা দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম হল নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক লেক ফেওয়ালেক। লেকের মাঝামাঝি স্থানে বারাহি হিন্দু মন্দির নামে একটি মন্দির রয়েছে। এছাড়া পোখরা আরও কিছু দর্শনীয় স্থান হল ডেভিস ফল, মহেন্দ্র গুহা, স্মরণ কোড, ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টে মিউজিয়াম, বরকা মেমোরিয়াল  মিউজিয়াম ইত্যাদি। এছাড়া ট্র্যাকদের জন্য পোখরা হিমালয়ের গেটওয়ে এবং জমসন ও অন্নপূর্ণা অঞ্চলের ট্র্যাক গুলো শুরু হয় পোখরা থেকে। 

পবিত্র লুম্বিনী 

নেপালের তীর্থ যাত্রীদের কাছে এই লুম্বিনী খুবই জনপ্রিয় একটি স্থান। কারণ ধারণা করা হয় এটা সম্ভবত গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান। এটি নেপালের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ছোট্ট শহরে অবস্থিত। প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে বেশ গুরুত্ব রয়েছে। কেননা এটি ৫৫০ খ্রিস্ট পূবে নির্দেশনা বহন করে। কথিত আছে, গৌতম বুদ্ধের মা মায়া দেবি, এখানে একটি গাছের কাছে গৌতম বুদ্ধের  জন্ম দিয়েছে। সেখানে ছোট্ট একটি পার্কের মাঝে মায়াদেবীর নাম অনুসারে মায়া দেবী মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে বোদ্ধ  তীর্থ যাত্রীদের এই তীর্থস্থান ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট স্বীকৃতি পেয়েছে।
 
আপনারা যারা ভ্রমণ, ট্র্যাকিং, কিংবা পর্বতারোহণ করতে ভালোবাসেন চাইলে ঘুরে আসতে পাড়েন নেপালের দর্শনীয় স্থান গুলো থেকে।