Skip to content

১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনার ঝুঁকিতে নিরাপদ মাতৃত্ব

সব নারীর জন্য গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সময়ে নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণই হল নিরাপদ মাতৃত্ব। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গর্ভবতী নারীদের নিরাপদ মাতৃত্ব ভীষণ ঝুঁকিতে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

 

ইপিআই তথ্যমতে, মাতৃমৃত্যুও বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। করোনাকালে গর্ভধারণ, প্রসবজনিত জটিলতাসহ করোনায় আক্রান্ত অনেক মা-ই সন্তান জন্মদানের পর মৃত্যুবরণ করেছেন। এর কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে পরিকল্পনার অভাব, অনিয়মিত চেক আপ, যাতায়াতের বাহন না থাকা, কোন হাসপাতাল অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য সবসময় খোলা রয়েছে সে সম্পর্কে না জানা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী একজন প্রসূতি নারীকে প্রসবপূর্ব সময়ে চার বার চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে যাওয়া। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে লকডাউন এ যানবাহন ব্যবস্থা প্রায় বন্ধই ছিল। এর কারণে অনেকেই হাসপাতালে বা ক্লিনিকে রুটিন চেক আপে যেতে পারেনি। আবার আর্থিক সংকটের কারণে গর্ভকালীন চিকিৎসাও নিতে পারেনি। বাড়িতে জন্মদানের ঘটনাও বেশ দেখা গেছে এই সময়ে। সরকারি তথ্য অনুসারে, দেশে এখনো ৫০ শতাংশ প্রসবের ঘটনা ঘটে বাড়িতে। মাতৃত্বকালীন কোন সেবা না নেওয়াও মাতৃত্ব ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।

 

স্বাভাবিক সময়েই অন্তঃসত্ত্বা নারী একটু বেশি সংবেদনশীল থাকে অর্থাৎ তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর কোভিড যেহেতু সংক্রামক রোগ, তাই অন্তঃসত্ত্বা নারীরও সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা থাকে। আর যদি তার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাঁপানি থাকে তাহলে তার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। তাই এসময় নিয়মিত চক আপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু করোনাকালে বাংলাদেশে দেখা গেছে উলটো চিত্র। ইপিআই’র তথ্য মতে, ২০১৯ এর মার্চ-এপ্রিলে প্রসবের আগে সেবা নেন প্রায় সাড়ে ৪২ হাজার গর্ভবতী মা। ২০২০ এর মার্চে মহামারি শুরু হলে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সেবা গ্রহীতা কমে দাঁড়ায় সাড়ে ৩৬ হাজারে। পরিস্থিতি খারাপ হয় এপ্রিলে। এ সংখ্যা কমে হয় মাত্র ১৮ হাজার। মাতৃমৃত্যুও বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা নেওয়ার হার এখনো করোনাকালের আগের অবস্থায় ফিরে যায়নি। 

 

ইউনিসেফ জানিয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়ায় ও সেবা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে হুমকিতে পড়েছে অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতক শিশুরা। ইউনিসেফ সতর্ক করছে যে, কোভিড-১৯ এর জন্য নেওয়া নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের কারণে শিশুর জন্মকালীন সেবার মতো জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত করতে পারে, যা লাখ লাখ অন্তঃসত্ত্বা মা ও তাদের সন্তানদের বিরাট ঝুঁকিতে ফেলবে।

 

একটু উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধি মোটেও কাম্য নয়। নিরাপদ মাতৃত্ব নারীর অধিকার- এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রেরই নয়, আমাদের সবারই। মাতৃমৃত্যু হ্রাসে আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ