কর্মক্ষেত্রে কমছে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণ হবে সমান সমান। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির পর সেই আশায় গুড়েবালি দিয়ে কমতে শুরু করেছে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। অবশ্য নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার পেছনে কিছু গুরুতর কারণ ও রয়েছে। বিশেষত তৈরি পোষাক খাতে নারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। করোনা পরিস্থিতিতেই নির্বিচারে অসংখ্য কর্মী ছাটাইয়ের ঘটনা নিয়ে মাথা খুব একটা ঘামানো হয়নি। ফলে কমে আসতে শুরু করেছিলো নারী কর্মীদের সংখ্যা।
আবার দেশ যখন ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করছিলো – তখন বিভিন্ন খাতে কাজের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। স্বভাবতই পুরুষরা চড়া বেতনের লোভে বিভিন্ন খাতে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। শারিরীক শক্তি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামাজিক ভাবনা অনুযায়ী দক্ষতার ঘাটতি থাকায় অনেক নারী কাজ খুঁজে পাচ্ছেনা। তাই, নারীদের অনেকেই কাজে অংশগ্রহণ করছেনা এই ধারণাটি না বলে, নারীদের সুযোগের অভাব বলাই বেশি সঙ্গত হবে।
একবার শুধু পেছনে দৃষ্টি ফেরানো যাক। বর্তমান সময়ে নারীরা শিক্ষাক্ষেত্রে নানাবিধ সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে এবং সামাজিক নানা বাধাবিঘ্নতা সত্বেও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। কর্মক্ষেত্রেও তাদের বিচরণ শুরু হয়েছে। তবে তার মাত্র এখনো ঠিক ৩৫ শতাংশ এর উপর যেতে পারেনি। যাহোক, শুধু একটা খাতের দিকেই চোখ ফেরানো যাক।
বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ তৈরী পোষাক শিল্পে উদীয়মান শক্তি। আর এই খাতের সিংহভাগ শ্রমিকই নারী। নারীদের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই খাতে এখন নারীরাই আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়তে শুরু করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শারিরীক শক্তি কিংবা প্রযুক্তিগত জ্ঞান কম দোহাইয়ে অনেকে কাজ খুঁজে পায়না। এছাড়া নিরাপত্তাজনিত সমস্যা এবং নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হয়ে অনেক নারীই কাজ করার ভরসা পান না।
বিশেষত এই মহামারির সময়ে এমন জটিলতা অনেক বেশি লক্ষ্যনীয়। বিবিএসের সর্বশেষে শ্রম শক্তির জরিপে দেখা যায়, তৈরি পোষাক খাতে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা ৫৩.৮২ শতাংশ। অপরদিকে নারী কর্মীর সংখ্যা, ৪৬.১৮ শতাংশ। এমনকি, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক তথ্য অনুযায়ী, বিগত চার বছরে পোষাক শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ কমেছে, ১০.৪৮ শতাংশ।
অথচ ২০১৩ সালেই বাংলাদেশে এই খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অপরদিকে, পুরুষদের অংশগ্রহণ ছিলো ৪৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। শুধুমাত্র এই পার্থক্য দেখলেই বোঝা যায় নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। এতে আমরা একটি সামগ্রিক ধারণা পেতে পারি যে সমস্যাটুকু বেশ বড়ই।
এর একটি বড় কারণ অবশ্যই পুরুষদের এই খাতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি। কিন্তু তাতে আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারবোনা কেন নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কমছে। অবশ্য একটি খাতের দিকে নজর ফিরিয়ে সামগ্রিক ধারণা খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। তারমানে অন্যান্য খাতে অংশগ্রহণ বাড়তে শুরু করেছে। তেমন লক্ষন ও দেখা যাচ্ছেনা।
বর্তমান সময়ের অধিকাংশ শিল্পক্ষেত্রই ভারি শ্রমনির্ভর হতে শুরু করেছে। এমনকি নারীদের নিরাপত্তা এবং সামাজিক বাধাবিঘ্নতার চিন্তা থেকেই অনেকে শুধুমাত্র পোষাক কর্মী নিয়োগ দিতে আগ্রহী। এরকম অসংখ্য সমস্যা নিয়ে শুধু সামান্য কিছু পরিসংখ্যান প্রকাশ হলেও সমস্যা সমাধানের জন্য তেমন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা। শুধুমাত্র পোষাক শিল্প খাতেই নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ হ্রাস হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। কারণ, বেকার সমস্যার মধ্যে আবার নারী বেকারত্ব নারীদের জন্য অসংখ্য সমস্যার উদ্ভব ঘটাতে পারে।