সুন্দর হোক পারিবারিক বন্ধন
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। বাইরের করোনা বন্দী পৃথিবী থেকে ঘরে নিরাপদে থেকে পরিবর্তন হচ্ছে সম্পর্কের অনুষঙ্গ। কখনো মানসিক চাপের কারণে খিটখিটে মেজাজ আর সহনশীলতা কমে যাওয়ায় পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে, আবার কখনো কখনো সম্পর্কগুলো আরও দৃঢ় হচ্ছে। এভাবেই পুরনো সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে ঝালাই হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কোভিড-১৯ মহামারির শঙ্কা এবং লকডাউনে ঘরে থাকতে থাকতে মানুষের মানসিক চাপ বাড়ছে। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক বা প্যানিক হয়ে যাওয়া, মানিয়ে চলার সমস্যা,বিষণ্ণতাসহ নানা রকম মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকেই।কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তি, তাঁর পরিবার, চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জরুরি সেবায় নিয়োজিত সম্মুখ সারির যোদ্ধা এবং আগে থেকে মানসিক সমস্যা ছিল তারা সবাই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া অনেকেই এই মহামারীর সময়ে চাকরীচ্যুত হয়েছেন। জীবন- জীবিকা নিয়ে অনিশ্চিত এই মানুষগুলো পরিবার- পরিজন নিয়ে অনিশ্চিত জীবনের কারণে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর কারণে মানুষের আচরণে পরিবর্তন আসছে। কখনো মেজাজ বেশি খিটখিটে হচ্ছে, আবার কখনো তীব্র হতাশা ভর করছে মনে। সবমিলিয়ে মানুষের সহনশীলতা কমে যাচ্ছে। চাহিদার সাথে প্রাপ্তির সমন্বয় না থাকায় আগ্রাসী আচরণ করছেন কেউ কেউ। আবার দীর্ঘদিন জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, ঘুরাঘুরি না করে ঘরে থেকে থেকে অনেকেই তীব্র অস্থিরতায় ভুগছেন। সেখান থেকে পারিবারিক সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দেশে দেশে নারীর প্রতি আক্রমণ বেড়েছে বলে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় জানা গেছে। সম্প্রতি কয়েকটি বিদেশী গবেষণা থেকে জানা যায়, পারিবারিক সহিংসতা ২৫-৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু কিছু দেশে নারীদের সহযোগিতার জন্য বিশেষ হেল্প লাইন চালু হয়েছে।
করোনাভাইরাস আমাদের থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিবে। কিন্তু এই সময়ে ইতিবাচক সামান্য অর্জনও যদি করা যায়, তবে তা করোনা পরবর্তী পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে তুলবে। এ জন্য আমাদের যা যা করণীয়:
মানসিক চাপ কমানো: দৃষ্টিভঙ্গি বদলে মানসিক চাপ কমাতে হবে। ঘরের ভেতর সৃজনশীল কাজ ও ভাবনায় নিজেকে খুঁজতে হবে। এতে নিজের আত্নবিশ্বাস বাড়বে এবং মানসিক চাপ হ্রাস পাবে।
পারস্পরিক সম্মান ও সহনশীলতা: পরিবারের সবার প্রতি সহনশীলতা বাড়িয়ে একে অন্যের প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখাতে হবে। এতে যেমন পারস্পরিক বন্ধন মজবুত হয়, তেমনি নিজের মানসিক অবস্থারও উন্নতি হয়।
নিজেকে সময় দিন: প্রতিদিন কিছুটা সময় নিজেকে দিতে পারেন। এই সময়টাতে আপনার ভালো লাগে এমন যেকোন কাজ করতে পারেন। এতে একদিকে যেমন আপনার মানসিক অবসাদ দূর হবে, নিজের প্রতি ভালো লাগা তৈরি হবে তেমনি লক্ষ্য করবেন, আপনার এই ভালো লাগার ব্যাপারটা আপনার আশেপাশের মানুষের মধ্যেও ম্যাজিকের মত কাজ করবে।
গৃহস্থালির কাজে অংশ নিন: পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই মিলে যৌথভাবে গৃহস্থালির কাজে অংশ নিন। ব্যস্থ থাকলে মানসিক চাপ কম থাকবে। অন্যদিকে একজনের ওপর বাড়তি চাপ থাকবে না।
দ্বন্দ্ব থেকে দূরে থাকুন: আপনার যত কাছের মানুষই হোক না কেন, আপনার সব মনের কথা বা ইচ্ছা সে বুঝবে এটা আশা করা ঠিক না। প্রত্যেকের চিন্তার জগত আলাদা। এটা মেনে নিতে পারলে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব হবার আশংকা কম।
প্রশংসা করুন: আপনার সঙ্গী, সহকর্মী সবার ভাল কাজ বা গুণের প্রশংসা করতে চেষ্টা করুন। সারাক্ষণ খিটখিটে মেজাজ না দেখিয়ে ভালো ব্যবহার ও সুআচরণ করুন। এতে আদতে আপনারই লাভ হবে। সবার কাছে সহজেই গ্রহণযোগ্যতা পাবেন।
হাস্যরস বজায় রাখুন: সবসময় গম্ভীর-বিরক্তিকর মন মানসিকতা পরিহার করে খোশমেজাজে থাকার চেষ্টা করুন। হাস্যরস বজায় রাখুন। পরিবার-বন্ধু আর সহকর্মীদের সাথে হাসিমুখে প্রান খুলে কথা বলুন।
রুটিন মেনে চলুন: আপনার কাজগুলোকে একটা রুটিনের ছকে নিয়ে আসুন। গুছিয়ে কাজ করলে অনেক কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের জন্য কিছুটা সময় পাবেন নিসঃন্দেহে।