কটসওল্ড: হলুদ-কমলা-সবুজের কার্পেটের দেশে
অনেকেই ভাবেন নারী পর্যটকদের জন্যে নিরাপদ কোনো স্থান খুঁজে পাওয়াটা কঠিন। আদৌ কি তাই? ইউরোপের কান্ট্রিসাইডে ঘুরে আসতে পারেন। ইংল্যান্ডে গেলে কটসওল্ডে ঘুরতে চলে যান। শরৎ-এর দিকে চলে যাবেন। আর বেশিদিন না। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই তো শুরু।
ওই সময় গাছে হলুদ ও কমলা আভা দেখা দিতে শুরু করবে। যত পশ্চিমে যাবেন, ততই সবুজের কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে বলে মনে হতে শুরু করবে। পুরোটা একঘেয়ে রকমের সমতল নয়। কোথাও কোথাও বৃত্তাকারভাবে উঁচুনিচু। একে অনেকে রোলিং হিলস বলে। শরতে যাবেন বলে মাথার ওপর আকাশটুকুও থাকবে ঝকঝকে নীল।
ইংল্যান্ডের পশ্চিমের এই বিস্তৃত তৃণভূমিই ব্রিটিশ কান্ট্রিসাইড। একে ডাকা হয় কটসওল্ড নামে। এই জায়গা নিয়ে গর্বের শেষ নেই ইংরেজদের মনে। ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলে অভিহিত করা হয় একে। মোট ছয়টি কাউন্টি নিয়ে এই অঞ্চল। এরমধ্যে একটি বাঙালিদেরও বেশ পরিচিত। অক্সফোর্ডের কথাই বলছি।
কটসওল্ডে প্রবেশ করতেই লাইমস্টোনে তৈরি প্রাচীর চোখে পড়বে। বেশ দূরে দূরে ছবির মতো গ্রাম। গ্রামের ঘরগুলো দেখতে একইরকম প্রায়। হলুদ পাথরের বাড়িতে লালচে কিংবা খয়েরি রঙের ত্রিভুজাকৃতি ছাদ। প্রতিটি গ্রামের মাঝখানেই চার্চের মাথা উঁকি দিতে দেখা যাবে। এখানকার প্রতিটি গ্রামে চার্চই সবচেয়ে উঁচু ইমারত। যারা ছোটবেলায় বই পড়েছেন তাদের কাছে পাতার অক্ষরগুলো বাস্তব হয়ে ধরা দিতে শুরু করবে।
তো কটসওল্ডে কেন যাবেন? শুধু কান্ট্রিসাইড দেখতে? আরে না। প্রথমেই স্টোন সার্কেলে চলে যাবেন। তবে ওখানেই বা কেন যাবেন? পাথর দেখতে। সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের গোলাকার সাজানো পাথরগুলো এখানে দেখতে পাওয়া যাবে। তারমাঝে একটির নাম আপনাদের বেশ পরিচিত। স্টোন হেঞ্জ। টম অ্যান্ড জেরিতেও বেশ কবার দেখেছেন। স্টোন হেঞ্জের পর আভেবারি। এখানে পাথর স্টোন হেঞ্জ থেকে বেশি। তবে এই পাথরের গুরুত্ব আছে। ধারণা করা হয় প্রায় ছয় হাজার বছর আগে সম্ভবত ধর্মীয় সমাবেশের জন্যে গোলাকারভাবে সাজানোর চেষ্টা করা হয়। একবার ভেবে দেখুন। খালি হাতে গোলাকারভাবে পাথর সাজানো কি চাট্টিখানি কথা?
আভেবারিতে আপনার জন্যে চমক আছে। স্নিগ্ধ ও সুন্দর গ্রামটিতে খড় ও লতায় ছাওয়া কটেজ। ভেতরে ঢুকেই আপনাকে অবাক হতে হবে। সব আধুনিক সুযোগ সুবিধা আছে। এমনটা কেন? পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখার তাগিদেই বাড়ির বাইরে তারা কোনো আধুনিকীকরণ করেন না। কটসওল্ডে মধ্যযুগীয় গন্ধটা একটু বেশি। এখানে এখনো কলস ওল্ড লায়ন নামে মেষ ঘুরে বেড়ায়। পঞ্চদশ শতকের বাগান ঘেরা ম্যানশনগুলোও এখানে দিব্যি টিকে আছে।
আভেবারির পর ল্যাককে চলে আসুন। যেন রানি প্রথম এলিজাবেথের সময়ে পৌঁছে যাবেন। এই কোনো নাইট এলো নাকি। আঁতিপাঁতি খুঁজে দেখতেই পারেন। পাথরে তৈরি গ্রামীণ রাস্তা, হলুদ পাথরে কটেজ, গ্রামের শস্যাগার সবকিছু দেখেই মনে হবে স্বপ্ন না তো? মজার কথা। এই গ্রামে চার্চের সামনেই হ্যারি পটার সিনেমার দৃশ্য শ্যুট করা হয়েছিল।
এবার ইতিহাসের সাক্ষীর সঙ্গে মোলাকাত করতেই সাইরেনসেসটায় চলে যান। ব্রিটিশ মধ্যযুগের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর ছিল এটি। বলা যায় রোমান উলের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র এখানেই ছিল। গ্রামটি অবশ্য বড় না। দুই এক ঘণ্টায় হেঁটে পার করে দিতে পারবেন।
এছাড়াও আরো অনেক গ্রাম আছে কটসওল্ডে। সরকারি প্রচেষ্টাসহ ইংল্যান্ডের নাগরিকদের আন্তরিকতাও এখানকার ভিক্টোরীয় ঘ্রাণটুকু ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। বিশেষত আপনার যদি কোনো নাইটকে ঘিরে স্বপ্ন থাকে তাহলে নারী পর্যটক হিসেবে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন কটসওল্ডে।
অনন্যা/এআই