মুড সুইং হচ্ছে, ঘুমের অভাব না তো?
শরীর ও মন সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের অভাবে মানসিক এবং শারীরিক শক্তি হ্রাস পায়, যার কারণে হতাশা, দুশ্চিন্তা এবং অস্বস্তি দেখা দেয়। এই সমস্যা ধীরে ধীরে মেজাজ খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং ফলশ্রুতিতে মুড সুইং ঘটে। ঘুমের অভাবে মুড সুইং হওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। আমাদের শরীর ও মন সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা মনকে অস্থির করে তোলে। ফলে একজন মানুষ সহজেই বিরক্ত, উত্তেজিত বা রাগান্বিত হয়ে পড়তে পারেন। এছাড়া ঘুমের ঘাটতি মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। ঘুমের অভাবে শরীর এবং মন দুটির উপরেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। জেনে নিন ঘুমের অভাবের কারণে শরীর ও মনে কি কি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
শারীরিক অবস্থা ও স্বাস্থ্য সমস্যা
ঘুমের অভাব সরাসরি আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ঘুমের সময় আমাদের দেহের কোষগুলো পুনর্গঠিত হয় এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমগুলো বিশ্রাম পায়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। এর ফলে, বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস
ঘুমের অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে শরীর সহজেই সংক্রমণ বা ভাইরাস আক্রমণের শিকার হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি
নিয়মিত ঘুমের অভাবে হৃদযন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কম ঘুমানোর ফলে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
ঘুমের অভাব ইনসুলিনের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা সৃষ্টি করে, ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ওজন বৃদ্ধি
ঘুম কম হলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলো ব্যাহত হয়। ঘুমের অভাবে ‘ঘ্রেলিন’ হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ক্ষুধার উদ্রেক ঘটায় এবং ‘লেপ্টিন’ হরমোনের মাত্রা কমে যায়, যা ক্ষুধা কমানোর সিগন্যাল প্রদান করে। ফলে মানুষ বেশি খায়, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মানসিক অবস্থা ও মেজাজের পরিবর্তন
মানসিক স্বাস্থ্যেও ঘুমের অভাবের প্রভাব মারাত্মক। এটি আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা, মনোযোগ ও একাগ্রতাকে প্রভাবিত করে।
মেজাজের পরিবর্তন ও বিষণ্ণতা
ঘুমের অভাবে মানুষ বেশি উত্তেজিত, বিষণ্ণ, এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে ঘুমের অভাবের ফলে ডিপ্রেশন ও অ্যানজাইটির মতো মানসিক সমস্যার ঝুঁকিও বাড়ে।
স্মৃতিশক্তির ক্ষতি
ঘুম আমাদের স্মৃতিশক্তি গঠনে সাহায্য করে। ঘুমের অভাবে স্মৃতিশক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং মানুষ তথ্য মনে রাখতে সমস্যায় পড়ে। এটি নতুন তথ্য শিখতে এবং সংরক্ষণ করতে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
একাগ্রতার অভাব ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস
কম ঘুমের ফলে মানুষের মনোযোগ ও একাগ্রতার উপর প্রভাব পড়ে। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে যায়। এতে দৈনন্দিন জীবনের অনেক সিদ্ধান্ত ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও জ্ঞানীয় সমস্যা
ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশন বা জ্ঞানীয় ক্ষমতাগুলো বাধাগ্রস্ত হয় এবং মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা হ্রাস
ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের সৃজনশীলতা কমে যায় এবং সমস্যার সমাধানে জটিল ধারণা বা উদ্ভাবনী চিন্তা করতে অসুবিধা হয়।
ঘুমের অভাব দীর্ঘদিন চলতে থাকলে বিষণ্ণতা ও মানসিক চাপের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই সুস্থ শরীর এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দৈনিক ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি। সঠিক ঘুম মস্তিষ্ককে পুনরুজ্জীবিত করে এবং মনকে প্রফুল্ল রাখে, যা মুড সুইং প্রতিরোধে সহায়তা করে।