পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণবিরোধী বিল পাস, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
কলকাতায় আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসক ধর্ষণ। । ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে চলতি মাসের ২ সেপ্টেম্বর একটি বিল উত্থাপন করা হয়। বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের উদ্যোগে ‘দ্য অপরজিতা উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড বিল ২০২৪ (ওয়েস্টবেঙ্গল ক্রিমিনাল ল’জ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৪) শীর্ষক বিলটি পাস হয়। এভাবে পশ্চিমবঙ্গই ভারতের প্রথম কোনো রাজ্য যারা ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও শিশুদের যৌন নিপীড়নবিরোধী কেন্দ্রীয় আইনে সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়েছে। বিলটি অনুমোদনের জন্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে পাঠানো হয়। তার অনুমোদনের পর ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পাঠানোর কথা। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করলে বিলটি আইনে পরিণত হবে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে বিলটি উত্থাপন করেন। বিধানসভায় বিল নিয়ে আলোচনা হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন বিলট অনুমোদন করতে রাজ্যগনকে আহ্বান করেন। মমতা ওই সময় বলেন, ‘এ বিলের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় আইনে থাকা ফাঁক-ফোকরগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করেছি আমরা। ধর্ষণ মানবতাবিরোধী এক অভিশাপ। এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে সামাজিক সংস্কার প্রয়োজন।’ রাজ্য বিজেপি ইতোমধ্যে এই বিলকে স্বাগত জানিয়েছে। বিধানসভায় আলোচনার সময় রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, তিনি সাতটি সংশোধনী এনেছেন। তিনিও চান এই বিল পাস হোক। আইনে পরিণত হোক। আলোচনার পর শুভেন্দু অধিকারী আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন।
পাস হওয়া নতুন সংশোধনী বিলে ধর্ষণের শাস্তি আমৃত্যু কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যু কিংবা কোমায় চলে যাওয়ার ঘটনায় ধর্ষকের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীর নাম প্রকাশ এবং ধর্ষণ মামলায় অনুমতি ছাড়া বিচার প্রক্রিয়ার বিবরণ প্রকাশ হলে তিন থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৬ বছরের কম বয়সি নারীকে ধর্ষণ করণে ন্যূনতম নাজা ২০ বছর কারাদণ্ড কিংবা আমৃত্যু সশ্রম @anak 14
কারাদণ্ড ও জরিমানার কথা বলা হয়েছে। ১২ বছরের কম বয়সি কাউকে ধর্ষণ করলে ন্যূনতম ২০ বছর কিংবা আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা কিংবা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে বিলে। আর ১৮ বছরের কম বয়সি নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হলে তার সাজা হবে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও জরিমানা অথবা মৃত্যুদণ্ড। ২ সেপ্টেম্বর আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)।
ফলত এখনও পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল। জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ এখনও ধর্মঘট করছেন। তারা আরজিকর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। প্রসঙ্গটি শুধু নারীর প্রতি একটি অন্যায় অত্যাচারের নয়। বরং নারীর কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও বটে। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও উত্তাল। এই আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি এই ঘটনার বিচারের বিষয়টিও রয়েছে।